বাংলাদেশে আমরা আর চাঁদাবাজ ও দখলবাজ দেখতে চাই না: ফয়জুল করীম
Published: 14th, August 2025 GMT
সারা দেশে চাঁদাবাজি ও লুটপাটের কথা উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ‘এই বাংলাদেশ দেখার জন্য আমরা রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ি নাই। এমন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নাই, যা দখল করা হয়নি। বিচারালয়গুলোকেও দখল করা হয়েছে। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য মুগ্ধ জীবন দেন নাই, আবু সাঈদ তাঁর বুক পেতে দেন নাই। বাংলাদেশে আমরা আর চাঁদাবাজ, জুলমবাজ ও দখলবাজ দেখতে চাই না।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এসব কথা বলেন। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সারা দেশে হত্যা, লুণ্ঠন ও চাঁদাবাজি বন্ধ এবং পিআর পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের জেলা কমিটি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে ফয়জুল করীম বলেন, ‘মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছেন। তাদের শাসনে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এর মূল কারণ খুঁজতে হবে। দেশ, দল ও নেতা পরিবর্তন করে শান্তি আসবে না। শান্তি তখনই আসবে, যখন আমরা নীতি-আদর্শের পরিবর্তন আনতে পারব।’
ইসলামী আন্দোলনের নেত্রকোনা জেলার সভাপতি মুফতি নুরুল ইসলাম হাকিমীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা ওয়ালীউল্লাহর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিন পাঠান, ইসলামী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা এনামূল হক, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু সায়েম, জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানী, মুফতি তাজুল ইসলাম কাশেমী, মুফতি ওয়ালী উল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম নেত্রকোনার পাঁচটি আসনের জন্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন। তাঁরা হলেন নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানী, নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে জাকির হোসেন, নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসনে মাওলানা মুখলেছুর রহমান ও নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে মুফতি নুরুল ইসলাম হাকিমী।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাদাপাথরে লুটপাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ স্থগিত
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর লুটপাটের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে সাদাপাথরে লুটপাটের বিষয়টি উল্লেখ করা না হলেও চাঁদাবাজি ও দখলবাজির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ওই নেতার পদ স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিএনপির নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের সব পদ স্থগিত করা হয়েছে। তাঁর স্থলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হাজী আবদুল মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।’
বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘দখলসূত্রে সরকারি জমির মালিক বিএনপি নেতা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় প্রায় ৭০ একর জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। এসব স্থানে থাকা ছোট-বড় ১০০টি পাথর ভাঙার (স্টোন ক্রাশার) যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় গত ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারি জমি দখল ও লুটপাটের ঘটনায় বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ সংঘটিত হবে, তা কখনো ভাবা যায় না। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও নেতৃত্বের চরম অবমাননা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই নেতার পদ স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ বিএনপিতে থাকতে পারবে না। সেই সঙ্গে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ যাতে অপকর্ম-লুটপাট করতে না পারে, সে জন্য প্রশাসনকে আগে থেকেই জানানো হয়েছে। প্রশাসন যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সেটি আমরা জানিয়েছিলাম। স্থানীয়ভাবেও সাদাপাথর লুটপাটের বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’