মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সদ্যসমাপ্ত কুয়ালালামপুর সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে, বিশেষ করে ‘কৌশলগত এবং উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন বহুমুখী খাতে সহযোগিতা জোরদারে’ ইতিবাচক অগ্রগতি এনেছে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসমাইল বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রীয় সফর ‘শুধু একটি কূটনৈতিক ঘটনা নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ নানা উদ্যোগের একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত’।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি ও ইতিবাচক উন্নয়ন, বিশেষ করে কৌশলগত ও উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন বহুমুখী খাতে সহযোগিতা জোরদারের অগ্রগতি দেখে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ সফরের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, হালাল পণ্য, এসটিইএম, গবেষণা, শিক্ষা, সেমিকন্ডাক্টর ও ব্লু ইকোনমি খাতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি ‘নোট অব এক্সচেঞ্জ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সফরে এসকর্ট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ইসমাইল বলেন, এই চুক্তিগুলো ভবিষ্যতে আরও অগ্রসর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি বহন করে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগগুলোর একটি হলো মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা (এমইভি) কার্যকর করা। এই এমইভি বৈধ শ্রমিকদের নিজ দেশে পরিবারের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ও ভ্রমণের পর নতুন ভিসার আবেদন ছাড়াই আবার মালয়েশিয়ায় ফেরত আসার অনুমতি দেবে।

মালয়েশিয়ার মন্ত্রী এ পদক্ষেপকে ‘বাংলাদেশিদের বিশাল অবদানের প্রতি মালয়েশিয়ার কৃতজ্ঞতার প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যাঁরা শুধু বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে চালিকা শক্তি নন, বরং দেশটির বৃহত্তর সমাজের অংশ হয়ে উঠেছেন।

ইসমাইল বলেন, এই নীতি প্রণয়নের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো বৈধ বিদেশি শ্রমিকদের কল্যাণ জোরদার করা। তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন বা কী করেছেন, সেটা বিবেচ্য নয়।

ইসমাইল আরও বলেন, এমইভি কার্যকর হওয়া বিদেশি শ্রমিক ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ার আরও বন্ধুত্বপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অগ্রসর দৃষ্টিভঙ্গির পথপ্রদর্শক হিসেবে সাহসিকতার প্রতিফলন ঘটাবে। এই ব্যবস্থার বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (কেডিএন) এবং মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় (কেএসএম) বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করবে।

মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, অধ্যাপক ইউনূসের সফর দুই দেশের মধ্যে ‘বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ’ আরও জোরদার করবে, যেহেতু ‘মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত’।

তিনি বলেন, কুয়ালালামপুরে অধ্যাপক ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ।

ইসমাইল জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের আলোচনায় বাণিজ্য, শিক্ষা ও শ্রমশক্তির মতো ঐতিহ্যবাহী খাতগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নতুন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘একজন সহকারী মন্ত্রী হিসেবে আমি প্রত্যক্ষ করেছি, কীভাবে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও আলোচনাগুলো উন্মুক্ততার মনোভাব, দক্ষতা ভাগাভাগির ইচ্ছা এবং একসঙ্গে আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ ছিল।’

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে কেডিএন মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তায় এর প্রভাবকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়া শরণার্থী সমস্যা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষ করেছে এবং কূটনৈতিক চ্যানেল ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধানের প্রচেষ্টায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

কেডিএন বিশ্বাস করে, আঞ্চলিক শান্তি কেবল আসিয়ানের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব এবং এ কারণে মন্ত্রণালয় মিয়ানমারে আসিয়ানের শান্তি মিশনকে সমর্থন করে।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন।

ইসমাইল বলেন, কেডিএন এসব নীতি ও চুক্তির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যার মধ্যে বিদেশি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন তদারকি অন্তর্ভুক্ত।

তিনি আরও বলেন, এই কূটনৈতিক সম্পর্ক শুধু কাগজে-কলমে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং দুই দেশের নাগরিকদের জীবনে বাস্তব প্রভাব ফেলে—চাকরির সুযোগ, দক্ষতা উন্নয়ন থেকে শুরু করে যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত।

ইসমাইল বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, দৃঢ়ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আরও বহু দূর এগিয়ে যেতে পারবে, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং সুবিধা ভাগাভাগির মানসিকতা দ্বারা পরিচালিত হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ষ ট রমন ত র স বর ষ ট র সহয গ ত ব যবস থ ক শলগত মন ত র ক ড এন র সফর

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রীক পুরাণের যুদ্ধের দেবী এথেনা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য

গ্রীক পুরাণের যুদ্ধের দেবী এথেনা। তিনি জ্ঞান, কৌশলগত যুদ্ধ, সভ্যতা, আইন ও ন্যায়বিচার, শক্তি, শিল্প ও কারুশিল্পের দেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এথেনা শুধুমাত্র যুদ্ধের দেবী ছিলেন না, তিনি যুদ্ধের বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত দিকটি উপস্থাপন করতেন। তিনি সাধারণত বীরদের অনুপ্রাণিত করতেন এবং ন্যায়সঙ্গত লড়াইয়ে সহায়তা করতেন।তিনি বয়ন, সেলাই এবং অন্যান্য কারুশিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

এথেনা গ্রিসের বিভিন্ন শহর, বিশেষ করে এথেন্স শহরের রক্ষাকর্ত্রী ও পৃষ্ঠপোষক দেবী হিসেবে পূজিত হতেন। তিনি পার্সিয়াস, হেরাক্লিস, ওডিসিউস এবং জেসনের মতো বিখ্যাত গ্রিক বীরদেরকে তাদের অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করেছিলেন।তিনি একজন কুমারী দেবী ছিলেন এবং তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। 

আরো পড়ুন:

পশ্চিমা সভ্যতার ‘দোলনা’ বলা হয় যে শহরকে

শীতে চুল ‘ডিপ কন্ডিশনিং’ করার উপায়

জন্ম ও পৌরাণিক কাহিনী

এথেনার জন্মকাহিনী বেশ চমকপ্রদ। প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, তিনি দেবরাজ জিউস এবং জ্ঞান ও কৌশলের টাইটানিস মেটিসের কন্যা। জিউস ভবিষ্যদ্বাণী জানতে পারেন যে, মেটিসের সন্তান তাকে সিংহাসনচ্যুত করবে, তাই তিনি মেটিসকে গিলে ফেলেন। এর কিছুদিন পর জিউসের প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয় এবং তিনি হেফেস্টাসকে (অগ্নি ও কর্মকার শিল্পের দেবতা) তার মাথা কুড়াল দিয়ে কেটে দিতে বলেন। মাথা কাটার পর, এথেনা সম্পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক এবং বর্ম পরিহিত অবস্থায় জিউসের মাথা থেকে বেরিয়ে আসেন। 

এথেন্স শহরের নামকরণ এথেনার নামানুসারে করা হয়েছিল। শহরটির পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে এথেনা এবং সমুদ্রের দেবতা পসেইডনের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। পসেইডন তার ত্রিশূল দিয়ে মাটিতে আঘাত করে একটি নোনা জলের ঝর্ণা তৈরি করেন। অন্যদিকে, এথেনা একটি জলপাই গাছ তৈরি করেন, যা খাদ্য, তেল, কাঠ এবং ছায়া প্রদান করত। শহরের লোকেরা এথেনার উপহারকে বেশি উপযোগী মনে করে এবং এথেনাকে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বেছে নেয়। এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসে অবস্থিত বিখ্যাত পার্থেনন মন্দিরটি তার সম্মানে নির্মিত হয়েছিল। 

এথেনার প্রধান প্রতীকগুলির মধ্যে রয়েছে পেঁচা। যা জ্ঞানের প্রতীক। জলপাই গাছ হলো শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক।ঢাল তার যোদ্ধার পরিচয় বহন করে। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্রীক পুরাণের যুদ্ধের দেবী এথেনা সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য