যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খয়রা-নাওঘাটা ও দক্ষিণের বিলের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি এবারও আমন ধান চাষের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ, স্থানীয় পানিনিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি খাল ভরাট হয়ে যাওয়া। এত বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি হয়ে থাকবে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এটি কৃষি ও কৃষকের জন্য হুমকিস্বরূপ তো অবশ্যই, স্থানীয়ভাবে খাদ্যনিরাপত্তার জন্যও বিষয়টি উদ্বেগের। 

কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ খানপুর খালটি সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি এবং রাঘবপুর খাল দিয়ে প্রবেশ করা নদীর পানি বিল থেকে বের হতে পারছে না। এতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আমন ধানের চারা রোপণের সময় চলে গেলেও কৃষকেরা মাঠে নামতে পারছেন না। জীবন মণ্ডলের মতো অনেক কৃষক হতাশ হয়ে বলছেন, ‘এবার যে কী খাব?’ তাঁদের এই প্রশ্ন কেবল ব্যক্তিগত হতাশা নয়, এটি দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইয়েদা নাসরিন জাহান খাল খননের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বললেও, বাস্তবতা হলো এই প্রক্রিয়া খুবই ধীর। বছরের পর বছর ধরে খাল ভরাট হতে থাকলেও তা পুনরুদ্ধারের জন্য সময়মতো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। অথচ এই খালগুলোই ছিল প্রাকৃতিক জলপ্রবাহের প্রাণ। অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ, নদীশাসন ও অবৈধ দখলদারির কারণে দেশের অনেক নদী ও খাল আজ অস্তিত্ব সংকটে। বাঘারপাড়ার এই ঘটনা সেই অব্যবস্থাপনারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষকের এই নীরব কান্না আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। এক হাজার বিঘা জমির আমন ধান উৎপাদন না হওয়া মানে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়া। এই ক্ষতি কেবল কৃষকের একার নয়, এটি জাতীয় ক্ষতি। তাই এই সমস্যার সমাধান দ্রুত করতে হবে।

খালগুলো যে সচল থাকে না বা যথাযথভাবে পরিচর্যা করা হয় না, এর জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুতরভাবে দায়ী। কিন্তু এ দেশে বরাবরের মতোই তাদের এ দায়কে গুরুত্বহীনভাবে দেখা হয়। শুধু প্রকল্প গ্রহণ, অর্থছাড়, ঠিকাদার নিয়োগ, প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া খালগুলোর পরিচর্যার প্রতি কেন তাদের মনোযোগ কম, সেই প্রশ্নই আমাদের করতে হয়।

আমরা আশা করব, বাঘারপাড়া এ সংকটের কার্যকর সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এগিয়ে আসবে। খালটি খনন করে কৃষকদের ভোগান্তি নিরসন করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, এটি শুধু কৃষকদের একান্ত বিষয় নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তাও।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষকদ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মায় তীব্র স্রোতে দৌলতদিয়ায় দুটি ঘাট বন্ধ, একটি দিয়ে ফেরি পারাপার

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। এতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় সচল তিনটি ফেরিঘাটের মধ্যে দুটি দিয়ে ফেরি ভিড়তে পারছে না। একটি মাত্র ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এ পরিস্থিতি চলছে। ফলে দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা বেড়েছে। স্রোতের বিপরীতে ফেরি চালাতে সময় দ্বিগুণ লাগছে। একই সঙ্গে তীব্র স্রোতের তোড়ে দুটি ঘাটে ফেরি ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে গতকাল দুপুর থেকে দৌলতদিয়ার ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার চলছে। স্রোতের কারণে পাঁচটি ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘাট–সংকট ও ফেরি স্বল্পতায় পারাপারে বিঘ্ন ঘটছে।

আজ শুক্রবার সকালে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট কয়েক বছর আগে নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ৩ নম্বর ঘাটে একটি বড় কে–টাইপ ফেরি বেঁধে রাখা আছে, ৪ নম্বর ঘাটে খালি পন্টুন। এ দুটি ঘাটের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র স্রোতে কোনো নৌযান ভিড়তে পারছে না। ৬ নম্বর ঘাটে পন্টুন থাকলেও ফেরি ভেড়ানোর মতো পরিস্থিতি নেই। সচল একমাত্র ৭ নম্বর ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়েছে।

ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে পাটুরিয়া থেকে ‘বাইগার’ নামের একটি কে–টাইপ ফেরি দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ঘাটে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। দীর্ঘ চেষ্টার পর ভিড়লেও পরে আর কোনো ফেরি ঘাটে ভিড়তে পারেনি। ফলে কর্তৃপক্ষ ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ করে দেয়।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৫টি ফেরির মধ্যে স্রোতের বিপরীতে চলতে না পারায় ‘ঢাকা’, ‘কুমিল্লা’, ‘ফরিদপুর’সহ ৫টি ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি ১০টি ফেরি দিয়ে পারাপার চললেও আগে যেখানে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ২৫-৩০ মিনিট লাগত, এখন লাগছে এক ঘণ্টার বেশি। এতে উভয় ঘাটেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি পড়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক বারেক সরদার বলেন, ঢাকামুখী পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস ঘাটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে লাইনও লম্বা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে, চালু আছে কেবল ৭ নম্বর ঘাট। স্রোতের বিপরীতে ফেরি চালানো ও ঘাট রক্ষা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ