‘এখন সকাল ১০টা বাজে। নিজেরা তো খাইনি। কিন্তু নিজেরা না খাইলেও এই গরুগুলানেরে খাওয়ার ব্যবস্থা আগে করতে হবে। তারপর যদি পাই, তাইলে খাব।’

কথাগুলো মো. আজাদ আলীর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। আজাদসহ অন্তত ২০ জন গরু নিয়ে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায় বেতার মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর পদ্মা নদীর মিডিল চরে। কয়েক দিন আগে চরটি পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে। আজাদ আলীর মতো অনেকেই বাড়ি ছেড়েছেন। শহরে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গৃহপালিত পশু।

আজাদ বলেন, ‘বাড়ি ছিল আগে চরখিদিরপুরে। সেখানে পদ্মায় ভাঙনে বাড়িঘর ভেসে যায়। পরে চলে আসি মিডিল চরে। আমাদের কোনো জায়গাজমি সেভাবে নাই। চরটা আবার ডুবে গেছে। এ কারণে গরু নিয়ে চলে আসছি। এখন বাড়িঘর ভেসে গেল কি না, আল্লাহ ভালো জানেন। এখন শহরে গরু এনে আরও বেশি বিপদে পড়েছি। এখানে হয়তো আর দুদিন পর ঘাস শেষ হয়ে যাবে। তখন কোথায় যাব জানি না। যদি সরকারিভাবে কোথাও গরুগুলান রাখার ব্যবস্থা করত, ভালো হতো।’

পাঁচ বছর পর রাজশাহীর চরগুলো এবার পুরোপুরি ডুবে গেছে। চরগুলো রাজশাহী শহর থেকে দক্ষিণে। এর মধ্যে চরখিদিরপুর, চর খানপুর, মিডিল চর ও ১০ নম্বর চর অন্যতম। এ ছাড়া বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর, গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহের বেশির ভাগ অংশ পানির নিচে। এসব এলাকার বাসিন্দারা রাজশাহী শহরের দিকে চলে এসেছেন। তাঁরা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গৃহপালিত পশু। কেউ শহরের নদীসংলগ্ন বাঁধের পাশে খোলা আকাশের নিচে, কেউ আবার কোথাও খালি মাঠ পেয়ে গরুগুলো রেখেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রাজশাহী কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মার পানি গত মাসের শেষ দিকে বাড়তে শুরু করে। গত রোববার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ১৩ মিটার। গত সোমবার সকাল ৯টায় ছিল ১৭ দশমিক ৩২ মিটার। গত মঙ্গলবার বেড়ে হয় ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার। গত বুধবার তা বেড়ে হয় ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল একই পরিমাণ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিনোদপুর এলাকার বেতার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ গরু ঘাস খাচ্ছে। কিছু গরু শুয়ে আছে। গরুর সঙ্গে কিছু ভেড়া ও মহিষও দেখা গেল। কেউ গরু চরাচ্ছিলেন। আবার কেউ মাঠের পাশে বসে ঝিমাচ্ছিলেন। কথা বলে জানা গেল, তাঁরা চার দিন ধরে এই মাঠে রয়েছেন।

মিডিল চরের মো.

জামাল বেশ কিছু গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, তাঁদের গরুগুলো চরে মুক্তভাবে চরে বেড়াত। পাঁচ দিন আগে পানি উঠে গেলে আর গরুগুলো রাখতে পারেননি। নিয়ে এসেছেন এখানে। তিনি আরও বলেন, এখানে থাকার কোনো জায়গা নেই। এই মাঠেই তাঁরা শুয়ে পড়েন গামছা বিছিয়ে। সারা রাত পালা করে জেগে থাকেন, গরুগুলো পাহারা দেন।

চরখিদিরপুরের আব্দুল মোমিন ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, এই মাঠে অন্তত ২০ জনের গরু আছে। পাঁচ শ থেকে ছয় শ হবে। আরও অনেকেই শহরের এপারে গরু নিয়ে এসেছেন। সেই সংখ্যাও কয়েক হাজার। এখানে ঘাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। চরের পানি কবে নামবে, জানেন না। পানি নামলেও চরের ঘাস সব পচে যাবে। এবার অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে তিনি জানান।

পাউবোর রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় অতিবৃষ্টি হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের অধিকাংশ জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিন ধীরে ধীরে পানি বাড়তে পারে। তবে তার পর থেকে হ্রাস পাবে পানি। সে ক্ষেত্রে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না বলে আশা করছেন তিনি।

পাউবোর পর্যবেক্ষক দল সব সময় সতর্ক আছে জানিয়ে আরিফুর রহমান বলেন, পানি কমে গেলে নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। সে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ল চর এস ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভাষা আন্দোলনের তাত্ত্বিক বিষয় আমাকে আকর্ষণ করেছিল’

ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ