চরের মানুষ শহরে, গরু নিয়ে আশ্রয় বেতার মাঠে
Published: 15th, August 2025 GMT
‘এখন সকাল ১০টা বাজে। নিজেরা তো খাইনি। কিন্তু নিজেরা না খাইলেও এই গরুগুলানেরে খাওয়ার ব্যবস্থা আগে করতে হবে। তারপর যদি পাই, তাইলে খাব।’
কথাগুলো মো. আজাদ আলীর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। আজাদসহ অন্তত ২০ জন গরু নিয়ে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায় বেতার মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর পদ্মা নদীর মিডিল চরে। কয়েক দিন আগে চরটি পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে। আজাদ আলীর মতো অনেকেই বাড়ি ছেড়েছেন। শহরে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গৃহপালিত পশু।
আজাদ বলেন, ‘বাড়ি ছিল আগে চরখিদিরপুরে। সেখানে পদ্মায় ভাঙনে বাড়িঘর ভেসে যায়। পরে চলে আসি মিডিল চরে। আমাদের কোনো জায়গাজমি সেভাবে নাই। চরটা আবার ডুবে গেছে। এ কারণে গরু নিয়ে চলে আসছি। এখন বাড়িঘর ভেসে গেল কি না, আল্লাহ ভালো জানেন। এখন শহরে গরু এনে আরও বেশি বিপদে পড়েছি। এখানে হয়তো আর দুদিন পর ঘাস শেষ হয়ে যাবে। তখন কোথায় যাব জানি না। যদি সরকারিভাবে কোথাও গরুগুলান রাখার ব্যবস্থা করত, ভালো হতো।’
পাঁচ বছর পর রাজশাহীর চরগুলো এবার পুরোপুরি ডুবে গেছে। চরগুলো রাজশাহী শহর থেকে দক্ষিণে। এর মধ্যে চরখিদিরপুর, চর খানপুর, মিডিল চর ও ১০ নম্বর চর অন্যতম। এ ছাড়া বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর, গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহের বেশির ভাগ অংশ পানির নিচে। এসব এলাকার বাসিন্দারা রাজশাহী শহরের দিকে চলে এসেছেন। তাঁরা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন গৃহপালিত পশু। কেউ শহরের নদীসংলগ্ন বাঁধের পাশে খোলা আকাশের নিচে, কেউ আবার কোথাও খালি মাঠ পেয়ে গরুগুলো রেখেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রাজশাহী কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মার পানি গত মাসের শেষ দিকে বাড়তে শুরু করে। গত রোববার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ১৩ মিটার। গত সোমবার সকাল ৯টায় ছিল ১৭ দশমিক ৩২ মিটার। গত মঙ্গলবার বেড়ে হয় ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার। গত বুধবার তা বেড়ে হয় ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল একই পরিমাণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিনোদপুর এলাকার বেতার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ গরু ঘাস খাচ্ছে। কিছু গরু শুয়ে আছে। গরুর সঙ্গে কিছু ভেড়া ও মহিষও দেখা গেল। কেউ গরু চরাচ্ছিলেন। আবার কেউ মাঠের পাশে বসে ঝিমাচ্ছিলেন। কথা বলে জানা গেল, তাঁরা চার দিন ধরে এই মাঠে রয়েছেন।
মিডিল চরের মো.
চরখিদিরপুরের আব্দুল মোমিন ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, এই মাঠে অন্তত ২০ জনের গরু আছে। পাঁচ শ থেকে ছয় শ হবে। আরও অনেকেই শহরের এপারে গরু নিয়ে এসেছেন। সেই সংখ্যাও কয়েক হাজার। এখানে ঘাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। চরের পানি কবে নামবে, জানেন না। পানি নামলেও চরের ঘাস সব পচে যাবে। এবার অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে তিনি জানান।
পাউবোর রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় অতিবৃষ্টি হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের অধিকাংশ জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিন ধীরে ধীরে পানি বাড়তে পারে। তবে তার পর থেকে হ্রাস পাবে পানি। সে ক্ষেত্রে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না বলে আশা করছেন তিনি।
পাউবোর পর্যবেক্ষক দল সব সময় সতর্ক আছে জানিয়ে আরিফুর রহমান বলেন, পানি কমে গেলে নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। সে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা: বিদেশি শিক্ষার্থীদের ২২৪ আসন বরাদ্দ
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসন পুনর্বিন্যাস করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এ বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ২২৪টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ২২৪ আসনের মধ্যে এমবিবিএস কোর্সে ১৮৪ এবং বিডিএস কোর্সের জন্য ৪০টি আসন নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২২৪ আসনের মধ্যে ১২৫টি সার্ক দেশগুলোর জন্য এবং ৯৯টি আসন নন-সার্ক দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত। সার্ক ও নন-সার্ক কোটা সম্পূর্ণ আলাদা রাখা হয়েছে। নন-সার্ক কোটা সংরক্ষিত আসনে কোনো সার্ক দেশের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে না।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস ফেলোশিপ, ৬ খাতে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ৪ ঘণ্টা আগেসার্ক দেশের আসন বণ্টনে ভারতের জন্য এমবিবিএসে ২২ ও বিডিএসে ২টি, পাকিস্তানের জন্য এমবিবিএসে ২১টি ও বিডিএসে ২টি, নেপালের জন্য এমবিবিএসে ১৯ ও বিডিএসে ৩টি, শ্রীলঙ্কার জন্য এমবিবিএসে ১৩ ও বিডিএসে ২টি, ভুটানের জন্য এমবিবিএসে ৩টি ও বিডিএসে ১টি, মালদ্বীপের জন্য এমবিবিএসে ৬টি ও বিডিএসে ১টি এবং আফগানিস্তানের জন্য এমবিবিএসে ৩টি ও বিডিএসে ১টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে সার্ক দেশের জন্য এমবিবিএসে মোট ১১২ ও বিডিএসে ১৩, অর্থাৎ সর্বমোট ১২৫টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুনমেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষা : দেখে নিন আবেদনের নিয়মাবলি১৩ নভেম্বর ২০২৫নন-সার্ক দেশের আসন বণ্টনে সার্ক দেশের মতো একই বৃত্তির আওতায় মিয়ানমারের জন্য এমবিবিএসে ৫টি ও বিডিএসে ২টি, ফিলিস্তিনের জন্য এমবিবিএসে ১৮ ও বিডিএসে ৩টি এবং অন্য সব দেশের জন্য এমবিবিএসে ৪৯ ও বিডিএসে ২২টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। সব মিলিয়ে নন-সার্ক দেশের জন্য এমবিবিএসে ৭২ ও বিডিএসে ২৭টি, অর্থাৎ মোট ৯৯টি আসন রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুননিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যে নতুন সুযোগ দিল ১৬ নভেম্বর ২০২৫