যানজটের নাগপাশে কুমিল্লা, সমাধান চায় নগরবাসী
Published: 15th, August 2025 GMT
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৮টা। কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় মোড়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো অবৈধ ইজি বাইকে সারি। হর্নের কর্কশ শব্দ ভেসে আসছে চারপাশ থেকে কিন্তু গাড়িগুলো বলতে গেলে চলছেই না। দাঁড়িয়েই আছে, মাঝে মাঝে থেমে থেমে চলছে। অফিসগামী মানুষ, স্কুলের শিশু সবার মুখে অস্থিরতার ছাপ।
একই সময় রাজগঞ্জ, কান্দিরপাড়, চকবাজার ও শাসনগাছ রেলগেটের প্রধান সড়কগুলোও থেকেই যানজটের কবলে পড়ে স্থবির হয়ে রয়েছে। ফুটপাথ হকারদের দখলে তাই পথচারীরা বাধ্য হয়ে মূল সড়কে নেমে চলাচল করছেন। এতে সড়কে থাকা গাড়িগুলোরও চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। সড়কের দুই পাশে যত্রতত্র পার্কিং। অটোরিকশা দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে, প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে আছে দূরের যাত্রীর জন্য। পণ্যবাহী ভ্যান লোড-আনলোড করছে সড়কে দাঁড়িয়েই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই অচলাবস্থাই যেন কুমিল্লা নগরীর ভাগ্যে লেখা ছিল।
রাজগঞ্জ থেকে আদালতপাড়া যেতে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। এইটুকু পথ পাড়ি দিতে এখন সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। সিএনজি চালকরা বিকল্প গলি ব্যবহার করেন, তবে সেখানেও ভিড়ের শেষ নেই। ছোট ইজিবাইক বা মোটরসাইকেল চলাচলের স্থানও থাকে না গলিগুলোতে।
দুপুর ১২টার দিকে চকবাজারে যানজট ভয়াবহ রূপ নেয়। বাজারে আসা মানুষের ভিড়, পণ্যবাহী ভ্যান, ইজিবাইক ও রিকশা রাস্তার চলাচল প্রায় বন্ধ করে দেয়। চকবাজার থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে ২০ মিনিটের বেশি। অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু গাড়িগুলো সরতে পারে না। অ্যাম্বুলেন্সকেও পথ ছাড়তে পারে না। বাজারে ব্যবসায়ীরা পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য রাস্তার ধারে গাড়ি থামিয়ে রাখেন। ক্রেতারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি খুঁজে বেড়ান। এতে সড়কের চাপ আরও বেড়ে যায়।
বিকেল ৩টার পর স্কুল ও কলেজ ছুটির সঙ্গে সঙ্গে হাজারো শিক্ষার্থী শহরের সড়কে নেমে আসে। অভিভাবকরা গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। এতে সড়কের অর্ধেক জায়গা বন্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করেন। তবে জনবল সীমিত হওয়ায় তাদের চেষ্টা বেশিরভাগ সময়ই বিফলে যায়। বহু সড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায় না।
শহরের প্রধান সড়কগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজটের চাপ থাকে। অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায়, বিক্রেতা ও ক্রেতা চলাচল করায় এবং শিশু ও অভিভাবক রাস্তার পাশে অবস্থান করায় চাপ আরও বেড়ে যায়।
অথচ প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা বা নির্দিষ্ট সড়কে ইজিবাইক নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অভিযান শেষ হলেই আগের চিত্র ফিরে আসে। নগরে প্রায় ৬০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে, যার বড় অংশেরই নিবন্ধন নেই। সংকীর্ণ সড়ক ও পার্কিংয়ের অভাবে যানজটের চাপ দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিকল্প গণপরিবহন না থাকায় মানুষ ছোট যানবাহনের ওপর নির্ভর করছে।
নগরবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়- কুমিল্লার সড়ক নকশা তৈরি হয়েছিল এমন এক সময়ে, যখন জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ কম ছিল। বর্তমানে শহরের জনসংখ্যা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম কয়েকগুণ বেড়েছে কিন্তু সড়কের প্রস্থ বা বিকল্প রুট বাড়েনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আদালতপাড়া, বাজার- সব একই এলাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় একই সড়কে চাপ থাকে দিনের বেশিরভাগ সময়।
কুমিল্লা মহিলা কলেজের শিক্ষক আসলাম আহমেদ বলেন, “প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও যানজট কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিকল্প গলি ব্যবহার করলেও সেগুলোও ভিড়ের কারণে কার্যকর হচ্ছে না। গাড়ি পার্কিং, পণ্য সরবরাহ ও মানুষ চলাচলের জন্য সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে অফিস, ক্লাস ও হাসপাতাল যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
নগরবিদ ড.
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ১১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক থাকলেও অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। এর প্রধান কারণগুলো হলো- অবৈধ পার্কিং, অবৈধ দোকানপাট, অতিরিক্ত ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিশৃঙ্খল চলাচল, সড়কের নির্মাণ ও মেরামত কাজ এবং ট্রাফিক পুলিশের অপ্রতুল জনবল।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মো. পারভেজ বলেন, ‘‘আমাদের এখানে লোকবলের তীব্র সংকট। ৭৯ জন ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে, যেখানে অন্তত ২০০ জন ট্রাফিক সদস্য প্রয়োজন।’’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘‘যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসনের একটি কমিটি কাজ করছে। আপাতত আমরা শুধু ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালাই। তবে দ্রুতই কমিটি কাজ শুরু করবে।’’
ঢাকা/রুবেল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সময় ল গ য নজট র ব কল প সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাষট্টিতে নগরবাউল জেমস
নগরবাউল জেমস। তার পুরো নাম মাহফুজ আনাম জেমস। ভক্তরা তাকে ‘গুরু’ বলেই ডাকেন। জেমস মানেই তারুণ্যের উন্মাদনা। তার নাম অনেক তরুণের স্বপ্নের সূতিকাগার। নিজের মেধা আর মননে হয়ে ওঠেছেন এ প্রজন্মের গুরু। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) নন্দিত এই ব্যান্ড সংগীতশিল্পী জেমসের জন্মদিন। ৬১ বছর পূর্ণ করে বাষট্টিতে পা দিতে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ দিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসছেন জেমস।
১৯৬৪ সালে ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। কিন্তু তার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে চট্টগ্রামের সৈকতের বালুচরে কেটেছে তার দুরন্ত শৈশব। জেমসের বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরো পড়ুন:
জুবিনের গাওয়া গান আমাকে বিখ্যাত করেছে: অনন্ত জলিল
পণ্ডিত চন্নুলাল মারা গেছেন
পরিবারের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সংগীতচর্চা শুরু করেন জেমস। একসময় সংগীতের জন্য ঘর ছাড়েন তিনি। পালিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে উঠেন। সেখান থেকেই তার সংগীতের মূল ক্যারিয়ার শুরু।
১৯৮০ সালে ‘ফিলিংস’ নামে ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন জেমস। এর মাধ্যমে প্রথম তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে এহসান এলাহী ফানটিকে নিয়ে নগর বাউল নামে ব্যান্ড গঠন করেন। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড থেকে প্রকাশ করেন প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। ১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামে একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন জেমস। এ অ্যালবামের গানগুলো দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়।
বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে জেমসের খ্যাতি ছড়িয়েছে বিশ্বে। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে রয়েছে জেমসের অনেক ভক্ত। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে বাঙালি সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। ২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন জেমস। চলচ্চিত্রটিতে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এক মাসেরও বেশি সময় তা বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল।
২০০৬ সালে ‘ওহ লামহে’ চলচ্চিত্রের ‘চল চলে’ গানে কণ্ঠ দেন জেমস। ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন এ মেট্টো’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। এতে ‘রিশতে’ ও ‘আলবিদা’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি। সর্বশেষ হিন্দি চলচ্চিত্রে ‘ওয়ার্নিং’-এ প্লেব্যাক করেন জেমস। ‘বেবাসি’ শিরোনামের গানটি ২০১৩ সালে মুক্তি পায়।
জেমসের গাওয়া উল্লেখযোগ্য গান হলো—‘বাংলাদেশ’, ‘জেল থেকে আমি বলছি, মা’, ‘দুখিনী দুঃখ করো না’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘বাবা কত দিন’, ‘বিজলী’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘মিরাবাঈ’, ‘পাগলা হাওয়া’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’ প্রভৃতি।
নগর বাউল থেকে প্রকাশিত অ্যালবামগুলো হলো—‘স্টেশন রোড’ (১৯৮৭), ‘জেল থেকে বলছি’ (১৯৯৩), ‘নগর বাউল’ (১৯৯৬), ‘লেইস ফিতা লেইস’ (১৯৯৮), ‘দুষ্ট ছেলের দল’ (২০০১)। জেমসের একক অ্যালবামগুলো হলো— ‘অনন্যা’ (১৯৮৯), ‘পালাবে কোথায়’ (১৯৯৫), ‘দুঃখিনি দুঃখ করোনা’ (১৯৯৭), ‘ঠিক আছে বন্ধু’ (১৯৯৯), ‘আমি তোমাদেরই লোক’ (২০০৩), ‘জনতা এক্সপ্রেস’ (২০০৫), ‘তুফান’ (২০০৭), ‘কাল যমুনা’ (২০০৮)।
ঢাকা/শান্ত