চিরকুট: ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’
Published: 15th, August 2025 GMT
রাজশাহীর পবার একটি ঘরে শুক্রবার সকালে চার মরদেহের সঙ্গে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যার শব্দ-বাক্যে জীবন-সংসারে অভাব ও ঋণের চরম অভিঘাতের কথা লেখা রয়েছে। তার মধ্যে দুটি বাক্য এমন- “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।”
দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা একটি পরিবারের কর্তা ব্যক্তির বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে স্ত্রী, তারপর ছেলে-মেয়ের প্রাণ নিয়ে নিজেও শেষ হয়ে গেছেন। তবে এই চিরকুট যে তারই লেখা, সেটি তদন্তের আগে নির্ধারণ করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য পুলিশের।
পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড়ে শুক্রবার সকাল এল চারজনের জীবনাবসনের শোকের ছায়া নিয়ে। বৃহস্পতিবার রাত দ্বিপ্রহরে একই ঘরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
আরো পড়ুন:
পদ্মায় গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই ছাত্রের লাশ উদ্ধার
কুমিল্লায় মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার
৩৫ বছর বয়সি মিনারুল ইসলামের সংসার ছিল স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলাকে নিয়ে। তারা এখন বামনশিকড়ের অভাবে-ঋণে হারিয়ে যাওয়া একটি শোকগাথা।
মতিহার থানার ওসি আবদুল মালেকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিনারুলের ঘরে তাদের লাশের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে বেশ কিছু কথা লেখা আছে। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
দুই পাতার চিরকুটের ছবি রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে এসেছে, যেখানে অভাব-ঋণ, বাবা-ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া কষ্টের কথা লেখা রয়েছে।
চিরকুটের এক পাতায় লেখা আছে, “আমি মিনারুল নিচের যে সব লেখা লেখবো। সব আমার নিজের কথা লিখে যাচ্ছি। কারণ, আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাবো। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই। আমি মিনারুল প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে (ছেলে) মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে (মেয়ে) মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।”
চিরকুটে আরো লেখা আছে, “আমাদের চারজনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তান না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না আসে। আমাদের চার জনকে কাফন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা যেন টাকা না দেয়। এটা আমার কসম।”
চিরকুটের দ্বিতীয় পাতায় লেখা আছে, “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম, কারণ আমি একা যদি মরে যাই তাহলে, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না।”
এরপরের বাক্যগুলো হুবহু এমন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমারা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভাল হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্যে কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছে, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন।”
শেষে লেখা, “ধন্যবাদ।”
ঢাকা/কেয়া/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ র জন য চ রক ট ত রপর চ রজন
এছাড়াও পড়ুন:
চিকিৎসক দেখিয়ে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় বউ-শাশুড়ি আহত
ফেনীতে ট্রাকের ধাক্কায় দুই নারী আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেনী সদর হাসপাতাল মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- জেলার পরশুরাম উপজেলার সত্যনগর গ্রামের বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার (৩২) ও হোসনে আরা বেগম (৫৫)। সম্পর্কে তারা বউ-শাশুড়ি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ট্রাংক রোডে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক দেখিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য অটোরিকশাযোগে সদর হাসপাতাল মোড়ে নামেন তারা। পরে রাস্তা পার হওয়ার সময় পেছন থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে দুজনই আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
আরো পড়ুন:
এএসআই’র বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে পালানোর অভিযোগ
মাদারীপুরে অস্ত্রসহ ‘কোপা সামচু’ গ্রেপ্তার
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘‘হোসনে আরা বেগমের বাম পা ভেঙে হাড় বের হয়ে গেছে। আর ফাতেমা আক্তারের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে।’’
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সামজুজ্জামান বলেন, ‘‘ঘাতক ট্রাক ও চালককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে, এ ঘটনায় এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/সাহাব/রাজীব