‘পুরো এলাকা কাঁপছে, যেন পৃথিবীর শেষ সময় এসে গেছে’
Published: 16th, August 2025 GMT
পাকিস্তানে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১২০ জন। আজ শনিবার দেশটির কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের উদ্ধারকারী সংস্থা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে মরদেহ উদ্ধারে প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী কাজ করছেন। তাঁরা নয়টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।
খাইবার পাখতুনখাওয়ার উদ্ধার সংস্থার মুখপাত্র বিলাল আহমেদ ফয়েজি বলেন, প্রবল বৃষ্টি, বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস ও সড়ক পানির তলে চলে যাওয়ায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে বড় বাধার সৃষ্টি হয়েছে। ভারী যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুলেন্স পরিবহনে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। বেশির ভাগ এলাকার সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে উদ্ধারকর্মীরা পায়ে হেঁটে দুর্গম অঞ্চলে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এমন অবস্থায় বুনের, বাজৌর, সোয়াত, শাংলা, মানসেহরা, বাট্টাগ্রামসহ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি জেলাগুলোকে দুর্যোগপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করেছে প্রাদেশিক সরকার।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে জনগণকে ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএ) জানিয়েছে, পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ১১ জন এবং উত্তরাঞ্চলীয় গিলগিট বালতিস্তানে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন পাইলট ছিলেন।
এনডিএর প্রতিনিধি সৈয়দ মোহাম্মদ তায়েব শাহ বলেন, এ বছর মৌসুমি বৃষ্টি স্বাভাবিকের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃষ্টি শেষ হতেও সময় লাগবে। তিনি বলেন, আগামী ১৫ দিন.
বুনের জেলায় ইতিমধ্যে অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছেন। সেখানকার বাসিন্দা আজিজুল্লাহ বলেন, তিনি ভেবেছিলেন ‘কেয়ামত নেমে এসেছে।’
আজিজুল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রচণ্ড শব্দ শুনলাম, যেন পাহাড়টা ধসে পড়ছে। আমি দৌড়ে বাইরে গিয়ে দেখি, পুরো এলাকা কাঁপছে, যেন পৃথিবীর শেষ সময় এসে গেছে। মনে হচ্ছিল, মৃত্যু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।’
সোয়াত জেলা থেকে এএফপির এক আলোকচিত্রী জানিয়েছেন, সেখানকার সড়ক কাদাপানিতে ডুবে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি মাটিতে পড়ে গেছে। অনেক গাড়ির অর্ধেক কাদার নিচে চাপা পড়ে আছে।
পাকিস্তানে বর্ষা মৌসুমে যে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ সেটিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে বর্ণনা করেছে। এতে এখন পর্যন্ত ৬৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৮০ জনের বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি পাকিস্তান। দেশটির মানুষকে প্রতিনিয়ত চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ২০২২ সালের মৌসুমি বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। এতে ওই বছর প্রায় ১ হাজার ৭০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরো পড়ুন:
টানা বৃষ্টিতে সড়কজুড়ে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী
১০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড, ঘনীভূত হতে পারে লঘুচাপ
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে স্থল গভীর নিম্নচাপটি উপকূলীয় ওড়িশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্রে অবস্থানরত মাছ ধরা ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে আজ দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে, আজ ভোর ৬টার দিকে রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়। ঢাকার আকাশ মেঘে ঢেকে আছে।
ঢাকা/মাসুদ