কক্সবাজার সফর করা এনসিপির ৫ নেতার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার
Published: 16th, August 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে কক্সবাজার সফরে দলের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতার দলীয় শৃঙ্খলার ব্যত্যয় খুঁজে পায়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ জন্য তাঁদেরকে দেওয়া কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে দলটি।
আজ শনিবার এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ আগস্ট এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহকে আলাদা পাঁচটি কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই নেতারা দপ্তর মারফত আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব বরাবর কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছেন।
এনসিপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, নোটিশের জবাব বিশ্লেষণে ওই ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলায় ব্যত্যয় না ঘটায় আহ্বায়ক মো.
এর আগে ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে কক্সবাজার সফরে যান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ (তাসনিম জারার স্বামী)।
এনসিপির পাঁচ নেতার হঠাৎ কক্সবাজার গমনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা তৈরি করে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা আলোচনা তৈরি হয়। পরে ৬ আগস্ট এনসিপির এই পাঁচ নেতাকে দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনজুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীর দিনে কক্সবাজারে সারজিস, হাসনাতসহ এনসিপির পাঁচ নেতা, নানা গুঞ্জন০৫ আগস্ট ২০২৫এই সফরের বিষয়ে কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা দলের রাজনৈতিক পর্ষদকে আগে জানানো হয়নি উল্লেখ করে নোটিশে এই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল।
আলাদা আলাদা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও নোটিশগুলোর ভাষা ছিল একই। এতে বলা হয়, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে আপনি এবং দলের আরও চারজন কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজার গিয়েছেন। এই সফরসংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা ব্যাখ্যা রাজনৈতিক পর্ষদের কাছে আগে অবগত করা হয়নি। এমন অবস্থায় আপনার এই সিদ্ধান্তের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের কাছে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
আরও পড়ুনকক্সবাজার সফরের বিষয়ে হাসনাত, সারজিসসহ এনসিপির পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ০৬ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব এনস প র প হ সন ত আগস ট সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনীতির ‘হৃৎপিণ্ড’ সক্রিয় করবে ডাকসু নির্বাচন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বাংলাদেশের রাজনীতির হৃৎপিণ্ড’ উল্লেখ করে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, সেই হৃৎপিণ্ডকে সক্রিয় করার যে ঘটনাটা ঘটতে যাচ্ছে, সেটা হলো ডাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচন স্থির করবে সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবের কালপর্ব তরুণেরা অতিক্রম করতে পারবেন কি না। রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও সংবিধান বাতিলের কাজটি তরুণেরা করতে পারবেন কি না, তা–ও নির্ধারিত হবে আগামী ডাকসু নির্বাচনে।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার। ‘শিক্ষা, গবেষণা ও রাজনীতি: আসন্ন ডাকসু নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চিন্তাচর্চার সংগঠন ‘ভাববৈঠকী’।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন ফরহাদ মজহার। এক. সব ধরনের বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চার একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবারের ডাকসু নির্বাচনের আগেই কিছু বিষয় সবাই মিলে নির্ধারণ করা। দুই. যদি কোনো শিক্ষক বছরে ন্যূনতম একটি গবেষণাপত্র ‘পিয়ার রিভিউড জার্নালে’ (যে জার্নালের প্রতিটি গবেষণাপত্র বিশেষজ্ঞরা মূল্যায়ন করেন) প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে সেই শিক্ষকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার থাকা উচিত নয়। তিন. মৌলিক বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া।
‘আপনাদের হুঁশ নেই’
তরুণদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ৮ আগস্ট (২০২৪ সাল) একটা সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে, সংবিধানের নামে ছাত্র-তরুণ-সৈনিকদের পরাস্ত করা হয়েছে। তরুণদের যে শক্তি, ক্ষমতা ও গণসার্বভৌমত্ব কায়েমের স্পৃহা ছিল, সেটাকে নস্যাৎ করা হয়েছে আইন ও সংবিধানের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান কায়েম করে। এখন তরুণদের ফাঁসিতে ঝোলানোর প্রক্রিয়া চলছে। যদি জাতীয় নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনের পরে এই সংবিধানের অধীনে সরকার গঠিত হয়, তাহলে সেই সরকার তরুণদের বিচার করবে। তিনি বলেন, ‘যে জুলাই ঘোষণাপত্র শুনলাম সেখানে পরিষ্কার বলা আছে আপনাদের (তরুণদের) আইনি সাহায্য দেওয়া হবে, আর কিছু দেওয়া হবে না। অথচ এগুলো নিয়ে আপনাদের হুঁশ নেই।’
‘শিক্ষকদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন নেই’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৯০ জন শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছেন বলে অনুষ্ঠানে জানান অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, এখন ৭ জন শিক্ষক দিয়ে তাঁর বিভাগ (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) চালানো হচ্ছে। এখানে শিক্ষকপ্রতি শিক্ষার্থী ২০০ জন। এমন অবস্থায় কোনো শিক্ষকের পক্ষে গবেষণার কাজ করা সম্ভব নয়।
অভ্যুত্থানের পরও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রসঙ্গে সামিনা লুৎফা বলেন, ‘সম্প্রতি একটি দলের শিক্ষকেরা সহ-উপাচার্যের (শিক্ষা) কাছে গিয়ে বলেছেন যে তাঁদের দল থেকে নিয়োগ দিতে হবে। তাহলে তো আমরা সেই আগের জায়গায় ফেরত গিয়েছি। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগে আওয়ামী লীগ না করলে সব দরজা বন্ধ ছিল। অন্য কিছুর মূল্য দেওয়া হয়নি, একমাত্র যোগ্যতা ছিল রাজনৈতিক পরিচয়। ৫ আগস্টের পরে শুনলাম, যাঁদের বিভিন্ন পদে বসানো হবে, তাঁদেরও মূল যোগ্যতা রাজনৈতিক পরিচয়। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।’
ভাববৈঠকীর প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ রোমেল অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহমান মৈশান, খোরশেদ আলম ও যোবায়ের আল মাহমুদ।
ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা দাবি
আলোচনায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্যে ছাত্ররাজনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উঠে আসে। তাঁরা বলেছেন, পুরোনো সন্ত্রাস-দখলদারির রাজনীতি ফিরতে দেওয়া যাবে না। ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনের জন্য বয়সসীমা তুলে দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে বলে মনে করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক শিক্ষার্থীকে পুনর্ভর্তির (লেখাপড়ায় বিরতির কারণে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ) সমালোচনা করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ।
ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
গেস্টরুম-গণরুমকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে অনেকে পুরো ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে বলে মন্তব্য করেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আরমানুল হক।
ডাকসু নির্বাচন ও সংগঠনভিত্তিক রাজনীতিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহকারী সাধারণ সম্পাদক খায়রুল এহসান বলেন, শিক্ষকদের রাজনীতি চিরতরে নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। তাহলে ছাত্ররাজনীতিও ঠিক হয়ে যাবে।
আয়োজকেরা জানান, এই আলোচনায় বক্তব্য দিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শীর্ষ এক নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসেননি। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক একজন নেত্রীকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তিনিও আসেননি।