চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গতকাল শনিবার বিকেলে ফরিদপুরের বোয়ালমারী গ্রামের বাড়িতে রওনা দেন কলেজছাত্র সুব্রত পাল। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসার পর ঝাঁকুনিতে তাঁর সারা শরীর ব্যথা হয়ে যায়। আসনে স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছিলেন না তিনি। তিনি বললেন, ‘এই সড়ক দিয়ে আমি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাই। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় সময় বেশি লাগার পাশাপাশি সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। চাকা গর্তে পড়লে মনে হয় এই বুঝি উল্টে যাবে। এতে এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় আতঙ্কে থাকি।’

যে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কের কথা বলছিলেন সুব্রত পাল, সেটি ফরিদপুর–বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়ক। ২৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের ফরিদপুর সদরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশ বেহাল। এই অংশের বিভিন্ন স্থানে পিচঢালাই উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও ভাঙাচোরা। কিছু স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়ে সড়ক উঁচু–নিচু হয়ে আছে। এসব গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। খানাখন্দ থাকায় মহাসড়কের এই অংশ দিয়ে চলাচলের সময় কলেজছাত্র সুব্রত পালের মতো হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

মহাসড়কের এই ২০ কিলোমিটার অংশের অবস্থা এতই নাজুক যে বাস চালাতে গেলে জানের কিছু থাকে না। ফরিদপুর শহর থেকে বাস ছাড়ার পর সারা পথ ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতে করতে যাই। এবড়োখেবড়ো ও গর্তের কারণে বাসের স্টিয়ারিং ঠিকমতো ধরে রাখা যায় না।মোকাররম হোসেন, বাসচালক

সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, মহাসড়কের এই অংশ দিয়ে প্রতিদিন ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ যাতায়াত করেন।

যাত্রী ও চালক এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাকসহ ১৫ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু সড়কে অনেক গর্ত থাকায় গাড়ি চলে অনেক ধীরগতিতে। ঝাঁকুনিতে যানবাহনের যাত্রী, চালক ও তাঁদের সহকারীদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

গত শুক্রবার সকাল আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ও বিএডিসি অফিসের সামনে দুই কিলোমিটার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ফরিদপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের সামনের এক কিলোমিটার, ফরিদপুর সদরের পশরা সেতু থেকে বাখুন্ডা সেতু পার হয়ে বাখুন্ডা রেল ক্রসিং পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার, নগরকান্দার মানিকনগর সেতু থেকে তালমার মোড় হয়ে শংকরপাশা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার অংশ এবং কাজী কড়িয়াল সেতু থেকে ভবুকদিয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারসহ মোট ২০ কিলোমিটারে ছোট–বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সদরের বাখুন্ডা, জোয়াড়ের মোড়, নগরকান্দার কেশবনগর, তালমা, বাশাগাড়ি, মাশাউজান, ভাঙ্গার নওয়াপাড়া ও হামিরদী এলাকার। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এসব স্থানের গর্ত পানি জমে থেকে আরও বড় হয়ে গেছে।

ফরিদপুর থেকে মাদারীপুরের টেকেরহাট পর্যন্ত চলাচলকারী শাহ ফরিদ পরিবহনের বাসের চালক মোকাররম হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কের এই ২০ কিলোমিটার অংশের অবস্থা এতই নাজুক যে বাস চালাতে গেলে জানের কিছু থাকে না। ফরিদপুর শহর থেকে বাস ছাড়ার পর সারা পথ ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতে করতে যাই। এবড়োখেবড়ো ও গর্তের কারণে বাসের স্টিয়ারিং ঠিকমতো ধরে রাখা যায় না।’

ফরিদপুর থেকে টেকেরহাটগামী একটি লোকাল বাসের চালক আমজাদ খান বলেন, মাঝেমধ্যে বাস উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। অনেক সময় বাসে যাত্রী বেশি থাকলে ঝাঁকুনিতে যাত্রী বাস থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

মহিলা রোড বাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী পলাশ বিশ্বাস বলেন, ‘গাড়ির চাকায় কাদাপানি ছিটে আসায় ফল ও পরনের জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়। সব মিলিয়ে রাস্তার দুর্দশার কারণে বিপদের মধ্যে আছি।’

গোল্ডেন লাইন পরিবহন বাসের চালক জাকির হোসেন বলেন, ঢাকার গুলিস্তান থেকে ভাঙ্গার ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার আসতে সময় লাগে এক ঘণ্টা। অথচ ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর এই ৩২ কিলোমিটার পথ আসতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। তা ছাড়া হেলেদুলে বাস চলার জন্য প্রতিদিন যাত্রীদের গালিগালাজ শুনতে হয়।

মহাসড়কের এই অংশ দিয়ে চলাচল করেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র জহির হোসেন (২৫)। তিনি জানালেন, বাসের পেছনে বসলে ঝাঁকুনির কারণে বাসের ছাদে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগে। শরীর ব্যথা হয়ে যায়।

মহাসড়কের এই অংশে খানাখন্দ থাকার কথা স্বীকার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফরিদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, অধিকাংশ স্থানে খানাখন্দ থাকায় মহাসড়কের এই অংশ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় সড়কটি চালু রাখার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। মহাসড়কের এই অংশ সংস্কারের জন্য মেসার্স আরবিএল কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে কাজটি শুরু করা যায়নি। এর মধ্যে ঠিকাদারের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি বর্তমানে বাবাকে নিয়ে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। ফলে সংস্কারকাজ শুরু করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, সড়কে যান চলাচল চালু রাখার জন্য প্রায়ই সওজের নিজস্ব তহবিল থেকে ইট ও পাথর দিয়ে গর্ত ভরাট করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০ ক ল ম ট র ক র এই অ শ র জন য অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সকালে এক গ্লাস নাকি চার গ্লাস পানি পান করা ভালো

সকালে খালি পেটে পানি পান করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়, একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কত গ্লাস পানি পান করা ভালো সে কথা জানেন?  সেই প্রসঙ্গে আসছি, তার আগে বলে নেই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে পানি পান করলে  ঠিক কোন কোন উপকার পাওয়া যায়।  অল্প কিছু বিষয় মেনে চললে সকালে খালি পেটে পানি পান করে সুস্থ-সবল থাকার পথে একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন। জেনে নিনি বিস্তারিত—

এক. সকালে পানি পান করলে পাকস্থলী পরিষ্কার হয়। এই অভ্যাস অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়। পরিপাকক্রিয়া থেকে সঠিকভাবে নানা পুষ্টি উপাদান গ্রহণে শরীরকে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে পানি পান করলে হজমশক্তি বাড়ে। আর এটা তো জানা কথা, হজমশক্তি ভালো হলে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাই দূর হয়।

আরো পড়ুন:

যেসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাস জীবন বদলে দিতে পারে

লিভার ডিটক্সিফিকেশনের জন্য সাপ্লিমেন্ট খাওয়া কী জরুরি?

দুই. সকালে খালি পেটে  পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর থাকে। রক্ত থেকে ‘টক্সিন’ বা বিষাক্ত নানা উপাদান দূর করে পানি।নতুন রক্ত কোষ এবং পেশি কোষ জন্মানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

তিন. খালি পেটে পানি পান করলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

যেভাবে পুরোপুরি সুফল পাবেন

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে পানি পান করার পারেই খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।

মনে রাখবেন,  প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানি পান করেই অনেক উপকার পেতে পারেন। আরও ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন সকালে গড়ে চার গ্লাস পানি (প্রায় এক লিটার) পানি পান করতে পারেন।

প্রথম দিকে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে একটু সমস্যা হতে পারে। তবে চেষ্টা করলে  এটা অনেক কিছুদিনের মধ্যে এই অভ্যাস আয়ত্বে চলে আসবে। এবং এর নানা উপকারিতাও বুঝতে পারবেন।

সূত্র: ওয়েবএমডি

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ