জম্মু-কাশ্মীরে ফের মেঘভাঙা বৃষ্টি, নিহত ১১
Published: 30th, August 2025 GMT
ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর শুক্রবার মধ্যরাত মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে আবারো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে রামবানের রাজগড়ে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে আকস্মিক বন্যায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আরো চারজন। ঘটনাটি ঘটেছে রামবন জেলার রাজগড় তহসিলের দ্রুবলা, নাটনা ও কুমাইতে এলাকায়। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজগড় গ্রামে দুটি বাড়ি ও একটি স্কুল ভবন ভেসে যায়। উদ্ধারকারী দলগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং নিখোঁজদের সন্ধানে অভিযান চলছে। তীব্র বৃষ্টিপাতের জেরে অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন।
আরো পড়ুন:
অমিত শাহের মাথা কেটে টেবিলে রাখা উচিত: মহুয়া মৈত্র
১২ বছরের ছোট নায়িকার সঙ্গে বাগদান সারলেন বিশাল
এদিকে, শনিবার ভোরে জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় ভূমিধসের কারণে একটি বাড়ি ভেঙে পুরো পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে। এ ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১২, ১০, ৮, ৬ ও ৪ বছর বয়সি পাঁচ শিশুও রয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং ঘটনা নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট করেছেন। পোস্টে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন।
গত এক সপ্তাহ ধরে চলা প্রবল বৃষ্টিতে জম্মু-কাশ্মীরে বিপর্যস্ত জনজীবন। ইতিমধ্যেই এলাকার একাধিক নদীর পানিস্তর বেড়ে গেছে। এছাড়াও, ভূমিধস, উপড়ে পড়া গাছ এবং বোল্ডার পড়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক বন্ধ রয়েছে, যার ফলে দুই হাজারেরও বেশি গাড়ি আটকা পড়েছে। এছাড়াও, জম্মু অঞ্চলের ৯টি রাজ্য সড়কও বন্ধ রয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর পুঞ্চ, রেয়াসি, রাজৌরি, কিশতওয়ার এবং উধমপুরের জন্য ‘হলুদ সতর্কতা’ জারি করেছে। এছাড়াও আগামী শনিবার ও রবিবার পর্যন্ত একাধিক এলাকায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের কাছে সৃষ্ট ভূমিধসে ৩২ জন প্রাণ হারান। এর ফলে বৈষ্ণোদেবী যাত্রাও বর্তমানে স্থগিত রাখা হয়েছে। এ নিয়ে মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে ৭৪ জন তীর্থযাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। গত দুই সপ্তাহে বৃষ্টিপাত সম্পর্কিত ঘটনায় প্রায় দেড়শো জনের কাছাকাছি প্রাণ হারিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরে। এর আগে গত ১৪ আগস্ট কিশতওয়ারে কমপক্ষে ৬৫ জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল, ১৭ আগস্ট কাঠুয়ায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে পাঁচ শিশুসহ অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছিল।
এদিকে, ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানও বন্যায় বিপর্যস্ত। পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর লাহোরও বন্যার পানি তলিয়ে গেছে। প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো লাহোর শহর বন্যার কবলে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে বন্যায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জগন্নাথের শিক্ষার্থী নূরনবী ক্যানসারে আক্রান্ত, ফুল বিক্রি করে সহায়তার উদ্যোগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মীর নূরনবী কয়েক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন। তবে অর্থসংকটে বন্ধ রয়েছে তাঁর চিকিৎসা। এ সংকট সমাধানে নূরনবীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীরা। এ জন্য ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করা হচ্ছে। সেই অর্থ তুলে দেওয়া হবে নূরনবীর চিকিৎসায়।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে শিক্ষার্থীদের কাছে ফুল বিক্রি করে নূরনবীর চিকিৎসা বাবদ অর্থ সংগ্রহ করতে দেখা যায় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের চত্বরে টেবিল–চেয়ার পেতে ফুল বিক্রি করেন তাঁরা। এরপর শহীদ মিনার, কলা অনুষদ, সামাজিক অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের প্রাঙ্গণে হেঁটে হেঁটে শিক্ষার্থীদের কাছে ফুল বিক্রি করে নূরনবীর জন্য অর্থ সহায়তা নেওয়া হয়।
নূরনবী বর্তমানে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। পরে বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু পড়াশোনায় হাল ছাড়েননি নূরনবী। অদম্য সাহস ও স্বপ্ন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন। প্রতিদিন সাভার থেকে বাসে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিয়মিত ক্লাস করেন তিনি। এরই মধ্যে সাতটি সেমিস্টার শেষ করেছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্যানসার এখন নূরনবীর ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আল শাহরিয়ার বলেন, ‘সবার সহায়তা নূরনবীর জন্য নতুন জীবনের আলো নিয়ে আসতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণার কাজ করছি। বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালিকা লাগানো হয়েছে। সামনে আরও নতুন কিছু অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আসুন, মানবতার বন্ধনে আমরা সবাই এক হয়ে নূরনবীর পাশে দাঁড়াই।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকারের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘অনেকেই অনেকভাবে নূরনবীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। আমরা ভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহের চিন্তা করলাম। ফুলের বিনিময়ে অর্থ সাহায্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নূরনবীকে সহায়তা করা হবে কি না—জানতে চাইলে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক কে এ এম রিফাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রকল্যাণ দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। এখানে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটা শুধু দাপ্তরিক কাজে খরচ হয়। এখন নূরনবীর চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসার্ট আয়োজন করতে চেয়েছে তার সহপাঠীরা। সে ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করব।’