কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া দুই তরুণকে সাগরপথে থাইল্যান্ডে পাচারের চেষ্টা
Published: 22nd, September 2025 GMT
অমিত হাসান ও মানিক মিয়া। দুই তরুণের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরে। মুন্সিগঞ্জেই তাঁদের পরিচয় হয় কক্সবাজারের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তাঁরই আমন্ত্রণে দুজন কক্সবাজারে বেড়াতে যান। সেখানে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে টেকনাফে বেড়াতে নেওয়ার কথা বলে অমিত ও মানিককে মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেন কক্সবাজারের ওই বাসিন্দা। এরপর পাচারকারীরা সাগরপথে থাইল্যান্ডে পাচারের জন্য দুজনকে টেকনাফের গহিন পাহাড়ের ভেতরের একটি আস্তানায় আটকে রাখেন। ২০ দিন পর র্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানে তাঁরা উদ্ধার হয়েছেন।
টেকনাফের বাহারছড়া কচ্ছপিয়ার গহিন পাহাড় থেকে গতকাল রোববার উদ্ধার করা হয় অমিত হাসান ও মানিক মিয়াকে। কেবল এই দুজন নয়, পাহাড়ের ওই আস্তানা থেকে নারী-শিশুসহ আরও ৮২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের সাগরপথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচারের জন্য আস্তানাটিতে জড়ো করা হয়েছিল বলে জানান র্যাব-বিজিবির কর্মকর্তারা। অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মানব পাচারকারীদের আস্তানা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধারের বিষয়ে আজ সোমবার দুপুরে টেকনাফ ২ বিজিবির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান ও র্যাব-১৫–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান অভিযানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
বিজিবি-র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার হওয়া ৮৪ জনের মধ্যে অমিত হাসান ও মানিক মিয়াকে জোর করে পাচারকারীদের ওই আস্তানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। অন্যদের আস্তানাটিতে নিয়ে আসা হয় নানা প্রলোভনে। এর মধ্যে অনেককে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডে উন্নত জীবনযাপন ও চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়েছে। কয়েকজন নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়। উদ্ধার করা ৮৪ জনের ৬৬ জনই রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা।
বিজিবি কার্যালয়ে অমিত হাসান ও মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। দুজন বলেন, মো.
অমিত হাসান ও মানিক মিয়া বলেন, সাগরপথে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পাহাড়ের আস্তানাটিতে তাঁদের আটকে রাখেন পাচারকারীরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলেই মারধর করা হতো।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই আস্তানায় অভিযান শুরুর পর পাচারকারীরা যৌথ বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনটি গুলি ছোড়েন। এ সময় কিছু ভুক্তভোগীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পালাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে পুরো পাহাড়টি ঘিরে ফেলে কৌশলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তিনি আরও বলেন, প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় তিনজনকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিযানে আটক তিনজন হলেন টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার সালামত উল্লাহর ছেলে আবদুল্লাহ (২১); রাজরছড়ার আবুল হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০), একই এলাকার মো. ফিরোজের ছেলে মো. ইব্রাহিম (২০)। তাঁদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, একটি একনলা বন্দুক, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি দেশি রামদা, একটি চাকু ও তিনটি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে।
মুঠোফোনে বিয়ের পর সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাঅভিযানে উদ্ধার হওয়া এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয় টেকনাফ ২ বিজিবির সদর দপ্তরে। মেহেদি দিয়ে নকশা আঁকা তাঁর হাতে। তিনি জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় থাকা এক রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে মুঠোফোনে তাঁর বিয়ে হয়েছে। এরপর ‘স্বামী’ তাঁকে সাগরপথে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার জন্য কিছু লোকের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে আশ্রয়শিবির থেকে বের হয়ে ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তাঁকে গহিন পাহাড়ের আস্তানাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তরুণী আরও বলেন, সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর কাছে কোনো টাকা দাবি করা হয়নি। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর তাঁর স্বামীর কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত টেকনাফে ৬৫ মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ১৬১ জনকে। শীত মৌসুমে মানব পাচারের ঘটনা বেশি ঘটে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প চ রক র দ র আস ত ন ট ত ম নব প চ র র আস ত ন স গরপথ র র এক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সুপার ফোরে একাধিক বাড়তি ‘সুবিধা’ পাবে ভারত
এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব শেষ হতে বাকি একটি ম্যাচ। তবু আগেই ঠিক হয়ে গেছে সুপার ফোরের চার দল। ‘এ’ গ্রুপ থেকে উঠেছে ভারত ও পাকিস্তান। আর ‘বি’ গ্রুপ থেকে জায়গা নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ।
২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে সুপার ফোর পর্ব। নিয়ম অনুযায়ী, চার দল একে অপরের মুখোমুখি হবে একবার করে। প্রতিটি দলের সামনে সুযোগ থাকবে তিনটি ম্যাচ খেলার। আর সেখান থেকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল খেলবে ২৮ সেপ্টেম্বরের ফাইনাল।
আরো পড়ুন:
বড় জয়ে শুরু ভারতের
এশিয়া কাপে স্পনসর ছাড়াই মাঠে নামবে ভারত!
তবে সূচি ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, অন্যদের তুলনায় বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে ভারত।
বিরতি ও ভেন্যুর সুবিধা:
ভারতের প্রতিটি ম্যাচের মাঝেই থাকবে বিশ্রামের বিরতি। ২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে তারা। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর নামবে দ্বিতীয় ম্যাচে। অর্থাৎ দুই দিনের বিরতি থাকবে হাতে। ২৬ সেপ্টেম্বরের শেষ ম্যাচের আগে আবারও থাকবে একদিনের বিরতি। এর পাশাপাশি ভারতের সব ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। ফলে অন্য দলের মতো ভ্রমণের ঝক্কি নেই। একই ভেন্যুর উইকেটে খেলতে নামায় পিচের আচরণ সম্পর্কেও তারা থাকবে বাড়তি সুবিধায়।
অন্যদের চিত্র:
শ্রীলঙ্কা ভারতের মতো দুই দিনের বিরতি পেলেও তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে হবে আবুধাবিতে গিয়ে। আর প্রতিপক্ষ হবে পাকিস্তান, যা চাপের।
বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলবে ২০ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে তিন দিনের বিরতি পেলেও, শেষ ম্যাচ খেলতে হবে পরদিনই অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর। ফলে ক্লান্তি ও পরপর ম্যাচের চাপটা থেকে যাবে লিটন দাসদের ওপর।
সব মিলিয়ে সূচি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট— সুপার ফোরে ভারতের জন্য তৈরি হয়েছে তুলনামূলক আরামদায়ক পথ। যা তাদের ফাইনালের দৌড়ে এগিয়ে রাখবে শুরু থেকেই।
এক নজরে সুপার ফোরের সূচি-
তারিখ | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু | সময় (বাংলাদেশ) |
২০ সেপ্টেম্বর | বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা | দুবাই | সাড়ে ৮টা |
২১ সেপ্টেম্বর | ভারত-পাকিস্তান | দুবাই | সাড়ে ৮টা |
২৩ সেপ্টেম্বর | পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা | আবুধাবি | সাড়ে ৮টা |
২৪ সেপ্টেম্বর | বাংলাদেশ-ভারত | দুবাই | সাড়ে ৮টা |
২৫ সেপ্টেম্বর | বাংলাদেশ-পাকিস্তান | দুবাই | সাড়ে ৮টা |
২৬ সেপ্টেম্বর | ভারত-শ্রীলঙ্কা | দুবাই | সাড়ে ৮টা |
২৮ সেপ্টেম্বর | ফাইনাল | দুবাই | সাড়ে ৮টা |
ঢাকা/আমিনুল