জেগে উঠেছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ব্যারেন আইল্যান্ডে ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি।কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ১৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আন্দামান সাগরে অবস্থিত ব্যারেন আইল্যান্ড।

আন্দামান-নিকোবর প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর এই সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ঘুম ভেঙে জেগে উঠে। প্রবল বিস্ফোরণের জেরে আন্দামানে ৪.

২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আশেপাশের এলাকায় কোনো বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের স্বপ্ন, চ্যালেঞ্জ আর সম্ভাবনার আজ ‘ভারত’ পরীক্ষা

কলকাতায় ভারী বৃষ্টিতে ৭ জনের প্রাণহানি

জনবসতিহীন ব্যারন আইল্যান্ডের আগ্নেয়গিরির সেই দৃশ্য ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে তপ্ত, লাল লাভা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসছে এবং আগ্নেয়গিরির চূড়া থেকে ঘন ধোঁয়ার স্রোত বেরোচ্ছে।

দাবি করা হচ্ছে, চলতি মাসে ১৩ তারিখ ও ২০ তারিখ দুই দফায় স্ট্রম্বোলিয়ান ধরনের অগ্নুৎপাত ঘটেছে। যার ফলে অল্পমাত্রায় লাগাতার লাভা ও ধোঁয়া বের হতে দেখা যায় আগ্নেয়গিরিটি থেকে, যা আজ বৃহস্পতিবারও সক্রিয় রয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানানো হয়েছে। পোর্ট ব্লেয়ার বা আশেপাশের দ্বীপগুলোর জন্য কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, যদিও এই অগ্ন্যুৎপাতগুলো আপাতত ক্ষতিকর নয়, তবে ছাই এবং গ্যাস কাছাকাছি সামুদ্রিক প্রাণী ও প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া বিমান চলাচলের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বর্তমানে ভারতীয় ভারতীয় নৌবাহিনী এবং ভূতাত্ত্বিক দপ্তর নজরদারি চালাচ্ছে।

ভারতের আন্দামান-নিকোবর চূড়ান্ত অংশটি একটি ক্লাসিক সাবডাকশন জোন, এই আগ্নেয়গিরিটিও টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষজনিত সাবডাকশন জোনে অবস্থিত, যেখানে ভারতীয় প্লেট বার্মা প্লেটের নিচে প্রবেশ করছে। সেই চাপ থেকেই ম্যাগমা উপরে উঠে আসে এবং অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ৮.৩৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত ব্যারেন দ্বীপ আসলে এক আগ্নেয় দ্বীপ। যা সম্পূর্ণভাবে আগ্নেয়গিরির উপাদানে তৈরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩৫৪ মিটার। এর নিকটতম জনবসতিপূর্ণ স্থান হলো স্বরাজ দ্বীপ (হ্যাভলক দ্বীপ) এবং নরকোন্ডাম দ্বীপ।

মানুষের বসতি না থাকলেও বন্যপ্রাণী এবং পাখির বাস ব্যারন দ্বীপে। ইতিহাস বলছে, ব্যারেন দ্বীপে প্রথম অগ্ন্যুৎপাত রেকর্ড করা হয় ১৭৮৯ সালে। এর পরে ১৯৯১ সালে বড় অগ্ন্যুৎপাত হয়, যা দীর্ঘ সময় সক্রিয় ছিল। ২০১৭ ও ২০১৮ সালেও আগ্নেয়গিরিটি সক্রিয় হয়েছিল।

জনবসতিহীন হলেও এই দ্বীপ বিজ্ঞানীদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্র। বন দপ্তরের বিশেষ অনুমতি নিয়ে, দূর থেকে ব্যারেন দ্বীপের জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটিকে দেখে আসা যায়। জনশূন্য, প্রায় রুক্ষ, পাথুরে দ্বীপটির প্রতিকূল পরিবেশে এখনও কিছু পাখি, বাদুড়, ইঁদুর ও ছাগলের দেখা মেলে। যদিও কাউকে দ্বীপটিতে নামার অনুমতি দেওয়া হয় না।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন য গ র

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন

নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করেন মনোনয়নবঞ্চিত এক প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকেরা।

নওগাঁ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী।

খাজা নাজিবুল্লাহর সমর্থকেরা বেলা ১১টার দিকে নজিপুর জিরো পয়েন্ট এলাকায় নওগাঁ-নজিপুর সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করেন। এ কর্মসূচিতে পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা থেকে আসা নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। তাঁদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এতে অংশ নেন। মানববন্ধনের আগে জিরো পয়েন্ট এলাকায় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিতর্কিত ব্যক্তি সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সময়ে হরতালসহ বিভিন্ন আন্দোলনে খাজা নাজিবুল্লাহর নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা মাঠে ছিলেন। তাঁরা নওগাঁ-২ আসনে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে খাজা নাজিবুল্লাহকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান।

নজিপুরের সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, নাজিবুল্লাহ ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বারবার কারা নির্যাতিত নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই পত্নীতলা ও ধামইরহাট বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। অথচ তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। খাজা নাজিবুল্লাহকে প্রার্থী ঘোষণা না করা হলে তৃণমূল বিএনপি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।

ধামইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী সব আন্দোলনে যাঁরা মাঠে সক্রিয় ছিলেন, তাঁরা সবাই খাজা নাজিবুল্লাহর পক্ষে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হোক—এটি শুধু বিএনপির নেতা–কর্মীদের চাওয়া নয়, দুই উপজেলার সব মানুষের চাওয়া। তাই এখানে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে আহ্বান জানাতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

মনোনয়নবঞ্চিত খাজা নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘সব আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। দুর্দিনে তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। আমরা কেউ দলের ঊর্ধ্বে নই। দলের জন্য কাজ করছি। পুনর্বিবেচনা হলে মনোনয়ন পেতে পারি। দলই সবার আগে।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য রেজাউল ইসলাম, ধামইরহাট মহিলা দলের সহসভাপতি নাহিদা সুলতানা, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল ধামইরহাট শাখার আহ্বায়ক রকিবুল হাসান, পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আবু তাহের প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ