ট্রাম্পের এক লাখ ডলারের ট্যালেন্ট ট্যাক্স বনাম চীনের ফ্রি আমন্ত্রণ
Published: 25th, September 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে নতুন এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারীদের প্রতিবছর এক লাখ ডলার দিতে হবে। এটি শুধু অভিবাসন নীতির ভুল নয়; এটি একটি গুরুতর কৌশলগত ভুল। কারণ, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিভা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়াকে ত্বরান্বিত করবে।
অন্যদিকে চীনের অবস্থানকে আগের চেয়ে শক্তিশালী করবে। দীর্ঘদিন ধরে এইচ-১বি ভিসার সবচেয়ে বড় উপকার যাঁরা ভোগ করে আসছেন, তাঁরা হলেন এশীয় পেশাজীবীরা, বিশেষ করে ভারতীয়রা। ফলে এই নতুন নিয়ম সরাসরি তাঁদের ওপর আঘাত হেনেছে।
এক লাখ ডলারের এই ফি বিশ্বে নজিরবিহীন। কানাডা বা যুক্তরাজ্যের ভিসা খরচের তুলনায় এটি ২৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি। এই বিশাল ব্যয় শুধু বড় করপোরেশনগুলো বহন করতে পারবে। মাঝারি ও ছোট কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিভাধরদের নিয়োগ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এতে প্রতিভাধর দক্ষ কর্মী নিয়োগের ক্ষমতা প্রযুক্তি জায়ান্টদের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রের সেই উদ্যোক্তা পরিবেশ, যা কিনা একসময় এশীয় প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করেছিল।
আরও পড়ুনচীন যেভাবে বিশ্বব্যবস্থা বদলে দিতে চাইছে০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ট্রাম্পের ঘোষণার পরই দেখা গেছে এর ধাক্কাটা কতটা বড়। বড় বড় কোম্পানি দ্রুত তাদের বিদেশে থাকা কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছে, ‘অবিলম্বে আমেরিকায় ফিরে আসো।’ এতে প্রমাণ মিলেছে, সিলিকন ভ্যালি থেকে ওয়াল স্ট্রিট পর্যন্ত এশীয় পেশাজীবীদের নেটওয়ার্ক মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রায় পাঁচ লাখ এইচ-১বি ভিসাধারীর জন্যও বার্তাটি স্পষ্ট: একবার বের হয়ে গেলে আর সহজে ফেরার সুযোগ নেই।
এ পরিস্থিতিতে চীন একেবারে উল্টো পথে হাঁটছে। তারা আগামী ১ অক্টোবর চালু করছে কে-ভিসা প্রোগ্রাম। এটি তরুণ বিদেশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পেশাজীবীদের লক্ষ্য করে বানানো হয়েছে। সহজ প্রবেশাধিকার, নমনীয় কর্মব্যবস্থা আর কয়েক লাখ ডলারের সরকারি সহায়তার মতো সুবিধা এতে থাকছে। এর পাশাপাশি আরও বড় কর্মসূচিতে চীন দিচ্ছে কয়েক লাখ ডলারের সাইনিং বোনাস, বাসাভাড়ায় ভর্তুকি, জীবনসঙ্গীর চাকরির নিশ্চয়তা এবং স্থায়ী বসবাসের সুযোগ। অর্থাৎ যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বাধা তৈরি করছে, চীন সেখানে সব বাধা সরিয়ে সুযোগ করে দিচ্ছে।
সময় নির্বাচনও চীনের কৌশলগত বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ। যুক্তরাষ্ট্র যখন এক লাখ ডলারের ফি চালু করছে, তখনই চীন চালু করছে কে-ভিসা। এতে এশীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পেশাজীবীরা যুক্তরাষ্ট্রের বদলে চীনকে বিকল্প হিসেবে দেখছেন।
চীনের গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় ২০০০ সালে ছিল মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২০ বিলিয়নে (যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭১০ বিলিয়নের সমান)। এর সঙ্গে ভিসার সুবিধা ও প্রতিভা নিয়োগ কর্মসূচি যোগ হয়ে চীন এখন সেই জায়গায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিরুৎসাহিত করা পেশাজীবীদের আকৃষ্ট করার সবচেয়ে বড় সুযোগ তার হাতেই চলে আসছে।ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি হলো, এতে মার্কিন শ্রমিকদের মজুরি রক্ষা হবে। কিন্তু গবেষণা বারবার দেখিয়েছে, উচ্চ দক্ষ অভিবাসীরা মার্কিনদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোগী। তাঁরা উৎপাদনশীলতা বাড়ান, নতুন উদ্ভাবন আনেন এবং আরও চাকরি তৈরি করেন।
২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষ অভিবাসীদের নিয়োগ আসলে তরুণ মার্কিন শ্রমিকদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায়। এই নীতির আসল পরিণতি আরও ভয়াবহ। এক লাখ ডলারের ফি দিয়ে মার্কিনদের চাকরি বাড়ানোর বদলে কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নেবে সেই দেশগুলোয়, যেখানে দক্ষ কর্মী সহজলভ্য। আর এটাই চীন চাইছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র হারাবে প্রতিভা ও চাকরি দুটোই, আর প্রতিদ্বন্দ্বীরা পাবে দুটোই।
আরও পড়ুনআমেরিকার যে ভুলে চীন আজ এমন শক্তিধর২০ আগস্ট ২০২৫সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্টার্টআপ ও নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো। গুগল বা মাইক্রোসফট এই খরচ মেনে নিতে পারবে, কিন্তু পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ করা একটি এআই স্টার্টআপের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এতে উদ্ভাবনের জায়গা কেবল বড় কোম্পানির দখলে যাবে, আর নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরিবেশ হয়ে উঠবে শ্বাসরুদ্ধকর। যে এশীয় উদ্যোক্তারা আগে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা শুরু করতে চাইতেন, তাঁরা এখন অন্য দেশে তাকাবেন। চীনের সহজ কে-ভিসার প্রক্রিয়া আর বিশাল বাজার তাঁদের কাছে আরও আকর্ষণীয় মনে হবে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে প্রজন্মজুড়ে। এশীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্নাতকেরা, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকেই ক্যারিয়ার গড়ার সেরা জায়গা মনে করতেন, তাঁরা এখন হিসাব পাল্টাচ্ছেন। চীনের পরিকল্পিত বিনিয়োগ ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাধা মিলে বৈশ্বিক প্রতিভা প্রবাহের দিকটাই বদলে দিচ্ছে।
চীনের গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় ২০০০ সালে ছিল মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২০ বিলিয়নে (যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭১০ বিলিয়নের সমান)। এর সঙ্গে ভিসার সুবিধা ও প্রতিভা নিয়োগ কর্মসূচি যোগ হয়ে চীন এখন সেই জায়গায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র নিরুৎসাহিত করা পেশাজীবীদের আকৃষ্ট করার সবচেয়ে বড় সুযোগ তার হাতেই চলে আসছে।
আরও পড়ুনসি–পুতিনের মধ্যে শত্রুতা বাধাতে গিয়ে উল্টো বিপদে ট্রাম্প!২৬ মার্চ ২০২৫ট্রাম্পের নতুন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এমন ভুল করছে, যা চীনকে আলাদা করে কিছু করতে হচ্ছে না। অর্থাৎ চীনকে প্রতিভাবান মানুষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য কোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এক লাখ ডলারের মতো বিশাল ফি চাপিয়ে এশীয় মেধাবী পেশাজীবীদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে কী হচ্ছে? যেসব এশীয় বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী বা উদ্যোক্তা আগে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে বা ব্যবসা শুরু করতে চাইতেন, তাঁরা এখন নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অন্যদিকে চীন বলছে, ‘আমরা তোমাদের স্বাগত জানাই, আসো এখানে সুযোগ নাও।’
এভাবে যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হারাচ্ছে। আর যেসব মেধাবী মানুষকে কেন্দ্র করে এই নীতি করা হয়েছিল, তাঁরাই শেষ পর্যন্ত চীন বা অন্য দেশে গিয়ে চীনের শক্তি আরও বাড়িয়ে তুলবেন। মানে দাঁড়াল—যুক্তরাষ্ট্র নিজের হাতে নিজের ক্ষতি করছে, আর চীন বিনা খরচে সেই লাভটা পেয়ে যাচ্ছে।
ওয়াই টনি ইয়াং ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ন জ য ক তর ষ ট র র উদ য ক ত র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় মা–ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
কুমিল্লায় মাদক কারবার বন্ধের চেষ্টা করায় মা ও ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। আজ সোমবার সকালে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী বসন্তপুর গ্রামে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন বসন্তপুর গ্রামের প্রয়াত আজগর আলীর স্ত্রী রাহেলা বেগম (৬৫) এবং তাঁর ছোট ছেলে কামাল হোসেন (৩৫)। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন (৪০) পলাতক। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, বিল্লাল হোসেন একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। আজ সকালে বিল্লাল হোসেন তাঁর বাড়িতে মাদক নিয়ে প্রবেশ করেন। তখন ছোট ভাই কামাল তাঁকে মাদক নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। পরে বিল্লাল তাঁর ঘরে ঢুকে ছুরি নিয়ে ছোট ভাই কামালকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এ সময় মা রাহেলা বেগম বাধা দিতে গেলে তাঁকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ঘটনাস্থলেই কামাল নিহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে মা রাহেলা বেগমও মারা যান।
আজ বেলা একটার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুজনের মরদেহ উদ্ধার করার কার্যক্রম চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ছোট ভাই মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে তাঁদের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়েও দীর্ঘদিনের বিরোধ আছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিল্লালের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি বিল্লাল হোসেনকে আটক করার চেষ্টা চলছে।