যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) সাবেক পরিচালক জেমস কোমির বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ করেছে দেশটির বিচার বিভাগ।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে কোমির এ ঘটনাকে।

জেমস কোমির বিরুদ্ধে মিথ্যা বিবৃতি ও কংগ্রেসের তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

আরও পড়ুনট্রাম্পকে সাহায্য করতে চেয়েছিল রাশিয়া: কোমি২০ মার্চ ২০১৭

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে কোমি বলেন, ‘বিচার বিভাগের কারণে আমার মন ভেঙে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে এবং আমি নির্দোষ। তাই বিচার হোক এবং আস্থা থাকুক।’

২০১৫ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প। তবে গতকাল তাঁর প্রশাসন প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করতে সফল হয়েছে।

ট্রাম্পের আরও কয়েকজন সমালোচকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছে তাঁর বিচার বিভাগ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস ও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জন বোল্টন।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক চাপমুক্ত রাখার জন্য দেশটিতে কয়েক দশকের পুরোনো কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। ট্রাম্পের সমালোচক ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্য দিয়ে এসব নিয়মকানুন লঙ্ঘন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জেমস কোমির মামলায় দায়িত্বরত ভার্জিনিয়ার ফেডারেল আইনজীবী গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেছেন। কারণ, তিনি মামলার প্রমাণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলে ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। ওই আইনজীবীর অফিসের অন্যরা বলছেন, এগুলো ফৌজদারি অভিযোগ প্রমাণ করার উপযুক্ত নয়।

ট্রাম্প কোমি ও অন্য সমালোচকদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে চাপ দিয়েছিলেন। গতকাল জেমস কোমির বিরুদ্ধে অভিযোগের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ন্যায়বিচার!’ ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘তিনি (কোমি) এত দিন ধরে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন।’

ট্রাম্প ২০১৭ সালে তাঁর প্রথম মেয়াদের শুরুতে কোমিকে বরখাস্ত করেছিলেন। এর পর থেকে নিয়মিতভাবে তিনি কোমির অধীন এফবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রমের সমালোচনা করে আসছেন। এমনই এক তদন্তে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় ট্রাম্পকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিল রাশিয়া।

কোমির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন সিনেটের এক শুনানিতে কোমি দাবি করেন, তিনি কোনো এফবিআই কর্মকর্তাকে গণমাধ্যমে বেনামি সূত্র হিসেবে কথা বলার অনুমতি দেননি। আইনজীবীরা বলেছেন, এ বক্তব্য মিথ্যা ছিল।

শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রেখে আইন প্রণয়নের কাজ ব্যাহত করার অভিযোগও আনা হয়েছে কোমির বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুনকোমিকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত রাশিয়া!১৫ জুন ২০১৭.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি

ব্যবসায় অংশীদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২৭ লাখ টাকা ‘আত্মসাৎ করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার’ অভিযোগের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী ও তার ভাই আলিসান চৌধুরী। 

রবিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক আফরোজা তানিয়া শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মেহজাবীন চৌধুরীর আইনজীবী তুহিন হাওলাদার। 

আরো পড়ুন:

আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন মেহজাবীন চৌধুরী

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে যা বললেন মেহজাবীন

সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মেহজাবীন চৌধুরী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তাতে এ মামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী।    

মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “একজন অজানা ব্যক্তি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে আমার ও আমার ১৯ বছর বয়সি ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত নয় মাসে আমি এই মামলার কোনো তথ্য পাইনি, কারণ অভিযোগকারী পুলিশকে আমার সঠিক ফোন নম্বর, সঠিক ঠিকানা বা কোনো যাচাইকৃত তথ্য দিতে পারেননি। তিনি দাবি করেন যে, ২০১৬ সাল থেকে তিনি আমার সাথে ‘ব্যবসা’ করছিলেন।”  

মেহজাবীন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অভিযোগকারী। এ বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তবে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, ‘তিনি ২০১৬ সাল থেকে আমাকে ফেসবুকে মেসেজ দিতেন। কিন্তু তিনি যা দেখাতে পারেননি।’ একটি মেসেজ যেটা তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন মেসেজের, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরে, কিংবা আমার পক্ষ থেকে একটি উত্তর, এমনকি একটি স্ক্রিনশটও না।” 

অভিযোগকারীর পরিচয় অসম্পূর্ণ। এ তথ্য উল্লেখ করে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “তার পরিচয় অসম্পূর্ণ। তার সম্পূর্ণ পরিচয়পত্র এখনো জমা দেয়া হয়নি। তার এনআইডি পর্যন্ত অনুপস্থিত। অভিযোগকারী ও তার আইনজীবী ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। গতকাল খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী তার ফোন বন্ধ করে রেখেছেন, এমনকি তার আইনজীবীর নম্বরও বন্ধ।” 

আর্থিক লেনদেনের কোনো নেই। মেহাজাবীনের ভাষায়, “আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ নেই। তিনি দাবি করেন যে, তিনি আমাকে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি দেখাতে পারেননি—কোনো ব্যাংক লেনদেন, কোনো চেক, বিকাশ লেনদেন, কোনো লিখিত চুক্তি, কোনো রশিদ, কোনো সাক্ষী, কিছুই না। একটি কাগজপত্রও নেই।” 

অপহরণের অভিযোগের বিষয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “১১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটি সম্পূর্ণ প্রমাণহীন। তিনি দাবি করেন ১১ ফেব্রুয়ারি আমি তাকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম, আমার ছোট ভাইসহ আরো ৪–৫ জনকে নিয়ে। গত নয় মাসে তিনি দেখাতে পারেননি রেস্টুরেন্ট বা আশেপাশের রাস্তার এক সেকেন্ডেরও সিসিটিভি ফুটেজ, কোনো সাক্ষী, কোনো প্রমাণ, কিছুই না। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি-নিয়ন্ত্রিত এলাকা, তবু তিনি একটি ছবি বা ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেননি।” 

মামলা হওয়ার পর ৯ মাস কেটে গেলেও কোনো নোটিশ পাননি মেহজাবীন চৌধুরী। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত নয় মাসে আমি কোনো নোটিশ পাইনি। এই নয় মাসে আমি কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোন কল, কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট। একটি নোটিশ পেলেও আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম।” 

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন মেহজাবীন। তার ভাষায়, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও, যখন জানতে পারলাম যে একটি অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছি। কারণ আমি আমাদের আইন ও নিয়ম মানি। প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা মামলা কখনো সত্য হয়ে যায় না। সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনকার দিনে কাউকে অপমান করা, মানহানি করা বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যে উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে, সে যা-ই করতে চায়—আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।” 

অনুরোধ জানিয়ে মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, “এর আগ পর্যন্ত আমি সবাইকে অনুরোধ করব—দয়া করে সহানুভূতিশীল হোন, দয়া করে মানবিক হোন এবং কাউকে না জেনে কোনো মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করবেন না। গত ১৫ বছর ধরে আমি আমার কাজ, আমার পেশা এবং আমার দর্শকদের জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে এসেছি, সেই পরিশ্রমের পরেও আজ আমাকে এসব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে—এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এই রায়ে কষ্ট পেয়েছি: শেখ হাসিনার আইনজীবী
  • বিশ্ব দেখছে শেখ হাসিনার বিচার
  • হৃদয় থেকে বলছি, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হব: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
  • জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি
  • দুই আসামিকে খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেল রাষ্ট্রপক্ষ
  • এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল
  • এস আলমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগসংক্রান্ত আদেশ স্থগিত
  • মামুন হত্যা মামলায় চার আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে, অস্ত্র মামলায় ইউসুফের দায় স্বীকার
  • ‎আইনজীবী মাসুদ মিয়ারমৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্টেডিয়াম আলট্রা-রান