চড়া দামের কারণে বাংলাদেশি ইলিশ কিনতে পারছেন না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বাসিন্দারা। তাই শুরু না হতেই বন্ধ হয়েছে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি। এক হাজার ২০০টন আমদানির অনুমতি থাকলেও ১০দিনে ভারতে পৌঁছেছে মাত্র ৮০টন ইলিশ। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত আমদানির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৫০০টন ইলিশও বাংলাদেশ থেকে পৌছাবে না ভারতের মাটিতে।  

উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত মতো ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছিল ভারতে। তবে ইলিশ পৌঁছালেও অন্যান্য বছরগুলোর মত চলতি বছর ইলিশ নিয়ে মাতামাতি একেবারেই লক্ষ্য করা যায়নি পশ্চিমবঙ্গে। কম সরবরাহ ও চড়া দামের কারণে সীমান্তের ওপার থেকে আসা সুস্বাদু ইলিশে কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছে কলকাতার মধ্যবিত্ত বাঙালি। স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা তলানিতে থাকায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের আমদানিকারকরা। ২১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশের কোনো চালান ভারতে আসেনি। 

বিক্রেতাদের দাবি, বিকল্প গুজরাট ও মিয়ানমারের সস্তার ইলিশের সামনে কার্যত হার মেনেছে পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ। বিক্রেতারা গড়িয়াহাট, লেক, মানিকতলা এবং শহরের অন্যান্য বাজারে খুচরা বিক্রির জন্য গুজরাট এবং মিয়ানমার থেকে ইলিশের দিকে ঝুঁকছেন। স্বাদে খুব বেশি পার্থক্য নেই কিন্তু দামের ফারাক প্রায় এক হাজার রুপির! স্বাভাবিকভাবেই চড়া দামের কারণে কলকাতার গড় মধ্যবিত্ত পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে পদ্মার ইলিশ। 

মজার বিষয় হল বাংলাদেশীশি রপ্তানিকারকরা ভারতে যে দামে ইলিশ রপ্তানির আদেশ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সেই তুলনায় ইলিশের দর অনেকটা বেশি। ফলে লোকসান করেও ভারতে ইলিশ পাঠাতেও চাইছে না বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানি দর নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৫২৫ টাকা। রপ্তানি জন্য মাছ প্যাকেটিং ও বেনাপোল পর্যন্ত পরিবহন খরচ যুক্ত করলে কেজিতে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়ে যায়। এদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেই মাছের দাম ২৫০০/ ২৬০০ টাকা কেজি!  ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানির সনদ নিলেও লোকসান করে ইলিশ রপ্তানিতে আগ্রহী নয়।

শুক্রবার কলকাতার হাওড়ার পাইকারি বাজারে গুজরাটের ইলিশ ওজন ভেদে বিক্রি হয়েছে ৩০০/৬০০ রুপির মধ্যে। খুচরা বাজারে দাম ছিল ৮০০/১২০০রুপির মধ্যেই। হাওড়ার কদমতলা বাজারের ব্যবসায়ী সুনীল বেজ, দেবেশ মন্ডল বলেন, “অল্পস্বল্প কিছু বাংলাদেশের ইলিশ এসেছিল কিন্তু বাজার একেবারেই ভালো নেই। বিক্রি করছি সেটা স্থানীয় মাছ। চাহিদা আছে কিন্তু দামের জন্য সমস্যা হয়ে গিয়েছে।”

কুন্টিঘাট মাছ বাজারের ব্যবসায়ী স্বপন মালো বলেন, “গুজরাটের মাছের দাম কম লাভ বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের ইলিশের দাম বেশি কিন্তু লাভ নেই। ডিমওয়ালা গুজরাটি ইলিশ ৩০০/৪০০ রুপিতে পাওয়া যাচ্ছে। কোয়ালিটি ভালো না হলেও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দাম রেখে বিক্রি করা যাচ্ছে। ওপারের ইলিশের মান ভালো কিন্তু দাম এত বেশি পাইকারি বাজারেই আসছে না।”

ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ রীতিমত হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “৮০ টনেরও কম ইলিশ বাজারে এসেছে, আমরা আশা করেছিলাম অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ টন ইলিশ এবার আনতে পারব। হাওড়ার পাইকারি বাজারে গড়ে ১৯০০-২০০০ টাকা/কেজিতে বিক্রি হয়েছে এবং খুচরা বাজারে ২২০০-২৫০০ টাকা/কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দাম বেশি থাকার কারণে চাহিদা একেবারেই তলানিতে। তাছাড়া বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি তাই ওরাও মাছ পাঠাতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। ২১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশের কোনো চালান আসেনি।” 

এ সময় তিনি বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে রপ্তানির জন্য তৈরি থাকা ইলিশ বোঝাই ট্রাক ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে তৃতীয় দেশে ইলিশ পাচার হচ্ছে এমন  অভিযোগ কে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করেন। 

সম্প্রতি বাংলাদেশের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করে, ভারতের কম দামে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে তার অন্যতম কারণ ভারত থেকে তৃতীয় দেশে উচ্চ মূল্যে ইলিশ পাচার করা হচ্ছে।

সুচরিতা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কলক ত র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্‌যাপন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

আরো পড়ুন:

কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি

চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি

ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়। 

যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে। 

দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ