দেশের আর্থিক খাতের পরিসর ছোট—এই নিয়ে অর্থনীতিবিদদের ওজর-আপত্তি অনেক দিনের। আর্থিক খাত বলতে আছে কেবল ব্যাংক। শেয়ারবাজারের অবস্থা এতটা করুণ, অনেক মানুষ সেখানে যাওয়ার সাহসই পান না। বন্ডের বাজার মূলত সরকারি। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র। বেসরকারি বন্ডের পরিসর আরও ছোট।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, সঞ্চয়পত্র ট্রেডেবল বা লেনদেনযোগ্য করা দরকার। সন্দেহ নেই, আর্থিক খাতের পরিসর বড় করার লক্ষ্যে এ কথা বলেছেন তিনি।

সঞ্চয়পত্রও একধরনের বন্ড। বন্ড হলো দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণের প্রতিশ্রুতিপত্র; কিন্তু এই শর্তের নিরাপত্তার ধরন বিভিন্ন। অনুন্নত দেশে যেখানে বন্ড বাজার চালু নয় কিংবা এখনো অতটা বিকশিত হয়নি, সেখানে মূলত সরকার বন্ড ইস্যু করে থাকে। তাকে সরকারি বন্ড বলে। যুক্তরাষ্ট্রে একে বলে ট্রেজারি বন্ড। সরকারি বন্ডের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি বলে এতে প্রদেয় সুদহার বা কুপন রেট সাধারণত কম হয়। কিন্তু আমাদের মতো দেশে তা উল্টো—সঞ্চয়পত্র বা ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদহার ব্যাংকের সুদহারের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয় প্রতিবছর। ফলে ব্যাংক আমানতের পরিমাণ কমে যায়; টান পড়ে বিনিয়োগযোগ্য অর্থে।

সেকেন্ডারি মার্কেট কী

বিষয়টি হলো কোনো কোম্পানি যখন প্রথম অবস্থায় বন্ড বিক্রি করে কিংবা প্রাথমিক গণবিক্রয় বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং বা সংক্ষেপে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে একেবারে প্রথম অবস্থায় শেয়ার ছাড়ে, তখন সেগুলো প্রাথমিক বাজারের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই শেয়ার বা বন্ডগুলোর প্রাথমিক মালিকেরা যদি টাকার প্রয়োজনে বিক্রি করে দেন, তখন তা দ্বিতীয় পর্যায়ের বাজার বা সেকেন্ডারি মার্কেটে করতে হয়। প্রাথমিক বাজারে কেনাবেচা একবারই হয়; কিন্তু দ্বিতীয় বাজারে কেনাবেচা কতবার হবে, তার সীমারেখা নেই।

এ পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্রের সেকেন্ডারি মার্কেট থাকলে কী হতে পারে, তা দেখে নেওয়া যাক:

ইতিবাচক দিক

সঞ্চয়পত্রের সেকেন্ডারি বাজার চালু হলে আর্থিক খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যেতে পারে। প্রথমত, বাজারে তারল্য বাড়বে। কেউ জরুরি প্রয়োজনে সহজেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে পারবেন, ক্রেতারা চাইলে সরাসরি বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে লেনদেন আরও সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগকারীর আস্থা ও আগ্রহ বাড়বে। বর্তমানে অনেকেই সঞ্চয়পত্র কেনার পর দীর্ঘদিন টাকা আটকে থাকার ভয়ে পিছিয়ে যান; কিন্তু সেকেন্ডারি বাজার থাকলে প্রয়োজনে তা বিক্রি করা সম্ভব। ফলে মানুষের স্বাধীনতা বাড়বে।

তৃতীয়ত, সরকারের দায় ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে। লেনদেন বাজারে হলে সরকারকে মেয়াদপূর্তির আগেই সরাসরি অর্থ ফেরত দেওয়ার চাপ কিছুটা কমবে। একই সঙ্গে ব্যাংকঋণের সুদ ও সঞ্চয়পত্রের সুদের মধ্যে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হতে পারে।

সবশেষে বাজারে লেনদেনের ধারা থেকেই বোঝা যাবে, সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রের ওপর কতটা আস্থা রাখছেন। এটি সরকারের আর্থিক নীতি প্রণয়নেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

নেতিবাচক দিক ও ঝুঁকি

সঞ্চয়পত্রের সেকেন্ডারি বাজার চালু হলে যেমন সম্ভাবনা আছে, তেমনি কিছু ঝুঁকিও থেকে যাবে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো সুদের হার বিকৃতি। যদি বাজারে সঞ্চয়পত্র ছাড়ে বিক্রি হয়, তাহলে কার্যকর সুদের হার সরকারের ঘোষিত হারের সঙ্গে মিলবে না। এতে নীতিনির্ধারণে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

আরেকটি আশঙ্কা হলো অতিরিক্ত জল্পনাকল্পনা। কিছু লোক হয়তো কম দামে সঞ্চয়পত্র কিনে বেশি দামে বিক্রি করে ফাটকাবাজি শুরু করবে। এতে মূল উদ্দেশ্য—সাধারণ মানুষের সঞ্চয়কে সুরক্ষা দেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেকেন্ডারি বাজারে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সঞ্চয়পত্রে বাজারসুবিধা পাওয়া গেলে মানুষ বেশি করে এতে বিনিয়োগ করবেন। ফলে ব্যাংক আমানত ও বেসরকারি বন্ড বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এতে ব্যাংকের তারল্যসংকট দেখা দেওয়ার ঝুঁকিও থেকে যাবে।

প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সঞ্চয়পত্রের সেকেন্ডারি বাজার চালু করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। নিরাপদ ও কার্যকর লেনদেনের জন্য স্বচ্ছ কাঠামো ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য।

আরও পড়ুনসঞ্চয়পত্র কেনাবেচার আলাদা বাজার তৈরির পরামর্শ দিলেন গভর্নর২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কী বলছেন বিশ্লেষকেরা

সঞ্চয়পত্রের এই লেনদেনের পরামর্শের বিষয়টি স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ধরা যাক কেউ পাঁচ বছরের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনেন, কিন্তু চার বছরের মাথায় তাঁর তারল্যসংকট হলো, তখন তিনি কী করবেন। এ সমস্যার সমাধান হলো লেনদেন যোগ্যতা। অর্থাৎ তিনি সেকেন্ডারি বাজারে কোনো গ্রাহকের সঙ্গে দর-কষাকষি করে সঞ্চয়পত্রটি বিক্রি করে দিতে পারেন। যিনি কিনবেন, তিনিও জানেন—এক বছর পর মেয়াদপূর্তিতে তিনি সেই সরকারের প্রতিশ্রুত টাকা পাবেন। এটি একধরনের উদ্ভাবন।

কিন্তু আরেকটি বিষয় হলো, বাংলাদেশে যাঁরা সঞ্চয়পত্র কেনেন, তাঁরা মূলত এটিকে সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে দেখেন। এটি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তার অন্যতম হাতিয়ার। অনেকটা সোনার মতো। সোনার দাম বাড়লেও যেমন মানুষ তা বিক্রি করতে হুমরি খেয়ে পড়ে না, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে চায়, সঞ্চয়পত্রও অনেকটা তেমন। গ্রামের শিক্ষক বা স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীরা অবসরের পর বাজার খরচ মেটাতে এই সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এমনকি তাঁরা উত্তরাধিকার হিসেবেও এই সঞ্চয়পত্র রেখে যান। ফলে সঞ্চয়পত্র একেবারে ঠিক বন্ডের মতো নয়। এই বাস্তবতায় দেশে সঞ্চয়পত্রের সেকেন্ডারি বাজার চালু হলেই যে তেমন জনপ্রিয় হবে, সে বিষয়ে আশাবাদী নন বিরূপাক্ষ পাল।

মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে

দীর্ঘদিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতির জেরে মানুষ সঞ্চয় ভাঙতে শুরু করেছে। তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্রে ঋণাত্মক বিক্রি দেখা গেছে। অর্থাৎ মেয়াদোত্তীর্ণ সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ নতুন বিনিয়োগের চেয়ে বেশি ছিল। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সে কারণেও সঞ্চয়পত্রকে লেনদেনযোগ্য করার কথা ভাবতে পারেন গভর্নর। বাস্তবতা হলো, দেশে বন্ডের বাজার এমনিতে অতটা শক্তিশালী নয়। তার সঙ্গে যাঁরা সঞ্চয়পত্র কেনেন, তাঁরা কীভাবে এই সেকেন্ডারি বাজারে প্রবেশাধিকার পাবেন, সেই প্রশ্ন থেকে যায়।

বন্ড বাজারের দুরবস্থা

বন্ড বাজার যেখানে উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রাণের মতো, সেখানে বাংলাদেশে বন্ড বাজারের অবস্থা নাজুক। বন্ড সাধারণত সরকারের ব্যয় নির্বাহে অর্থ জোগায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশে মূলধনের জোগান নিশ্চিত করে। বাংলাদেশের বন্ড বাজার—সরকারি সিকিউরিটি ও করপোরেট বন্ড মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১২ শতাংশের কম। এর মধ্যে সরকারি সিকিউরিটি সিংহভাগ। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় এ হার ১২৫ শতাংশ, চীনে ১০৭ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫০ শতাংশ। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুরের বন্ড বাজারও সমৃদ্ধ।

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের পরিসর ছোট—ব্যাংক, দুর্বল শেয়ারবাজার ও সরকারি সঞ্চয় পত্রনির্ভর বন্ড বাজার। করপোরেট বন্ড যা আছে তা বলার মতো নয়; সঞ্চয়পত্রেও সেকেন্ডারি মার্কেট না থাকায় তারল্যসংকট দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্র লেনদেনযোগ্য হলে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ বাড়বে, সরকারের দায় ব্যবস্থাপনা সহজ হবে ও বাজারে ভারসাম্য আসবে। তবে ফাটকাবাজির ঝুঁকি আছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, সঞ্চয়পত্র অনেকের কাছে নিরাপদ সঞ্চয় বা সামাজিক নিরাপত্তার প্রতীক। ফলে সেকেন্ডারি বাজার কতটা জনপ্রিয় হবে তা অনিশ্চিত। কার্যকর বন্ড বাজার গড়ে তোলা এখন বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জরুরি চ্যালেঞ্জ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর থ ক খ ত র র বন ড ব জ র র আর থ ক ক র যকর সরক র র ল নদ ন ত র পর বন ড র র পর ম অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মাত্র ২০ মিনিটে পাসপোর্ট আবেদন করা যাবে যেখানে

হাজারীবাগের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম। সাতসকাল থেকে ব্যবসার কাজে আড়তে ঢোকেন। সেখান থেকে বের হতে হতে রাত ১২টা। অনেক দিনের ইচ্ছা তিনি পাসপোর্ট করবেন। কিন্তু হাজারীবাগ থেকে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট করার সময় কোথায় তাঁর। তাঁকে দেখা গেল ঢাকার নীলক্ষেতের নাগরিক সেবা কেন্দ্রে। পত্রিকায় সংবাদ দেখে এসেছেন পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে। তিনি বলেন, ‘আমার সময় কম। সারা দিন অনেক কাজ। এরই মধ্যে আবার পাসপোর্টের ফরম পূরণ বা পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার জন্য সুযোগ নেই। পত্রিকায় নাগরিক সেবা কেন্দ্রের খবর দেখে এসেছি পাসপোর্ট করাতে। মাত্র ২০ মিনিটে পাসপোর্টের সব তথ্য পূরণ করতে পারছি এখান থেকে। এখানে এসে জেনেছি, এখন পাসপোর্টসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) সংক্রান্ত সেবা মিলবে এখানে।’

মোহাম্মদ সেলিমের পাসপোর্টের কাগজপত্র পূরণে সহায়তা করছিলেন নাগরিক সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. জাহিদ হাসান। ২০২৫ সালে স্থাপত্য ডিপ্লোমা করেন এই তরুণ। তিনি নীলক্ষেত নাগরিক সেবা কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন।

জাহিদ বলেন, ‘আমার এই কেন্দ্র থেকে ১০-১৫ জন নানা ধরনের নাগরিক সেবা নিতে আসেন। বেশির ভাগ মানুষই জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করতে আসেন। এখান থেকে মাত্র ১০০-২০০ টাকার মধ্যে সব সেবা নেওয়া যাচ্ছে।

সব মিলবে এক কেন্দ্রে

সরকারি বিভিন্ন সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অনলাইনে ‘এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা’ স্লোগানে চালু হয় নাগরিক সেবা বাংলাদেশ। গত মে মাসে এই কার্যক্রমের পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রশিক্ষিত নাগরিক সেবা উদ‍্যোক্তারা এই সেবাগুলো নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে সাধারণ নাগরিকদের প্রদান করছেন। পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেত এলাকায় নাগরিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সম্প্রতি ঢাকার গুলিস্তান, বনশ্রী ও মোহাম্মদপুরে আরও তিনটি নাগরিক সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং সরকারের আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলছে এই সেবা। এই সেবার আওতায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিতভাবে সেবার হালনাগাদ ও সমন্বয়ের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। এই ওয়েবসাইট (https://www.nagoriksheba.gov.bd/) থেকে দেখা যায়, জনপ্রিয় সেবার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-রিটার্ন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ই-মিউটেশন, ভূমি কর, ই-পরচা, অনলাইন জিডি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যয়ন, সার্টিফিকেট সত্যয়ন ও ই-পাসপোর্ট সেবা।

যেসব সেবা মিলছে

নীলক্ষেত সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্ত জাহিদ হাসান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদন থেকে শুরু করে ইউটিলিটি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে এখানে। প্রতিটি কেন্দ্রে আধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে নাগরিকদের জন্য। নাগরিক সেবা কেন্দ্র সাধারণ মানুষের দীর্ঘ ভ্রমণ বা লাইনের প্রয়োজন দূর করছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ই-মিউটেশন, ই-পরচা, ভূমি কর; রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধন; বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নতুন ভোটার নিবন্ধন, কার্ড পরিবর্তন; বাংলাদেশ পুলিশের অনলাইন জিডিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কাপড় বিক্রয়ের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষানবিশির জন্য আবেদন, ময়ূর ক্রয়ের জন্য আবেদন, নার্সারি থেকে অনলাইনে চারা ক্রয়ের জন্য আবেদনের মতো বিভিন্ন বিষয়ে আবেদন করা যাচ্ছে এসব কেন্দ্র থেকে।

সুযোগ থাকলেও সেবা নেই

২২ অক্টোবর গুলশানের নাগরিক সেবা কেন্দ্রে নিজের জন্মনিবন্ধন করার উদ্দেশ্যে আসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলিমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম অনেক সুবিধা পাব এখানে, ভেবেছিলাম এক স্থান থেকেই সেবা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারব। কিন্তু জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে দেখি এখান থেকে কেবল আবেদন করা যাচ্ছে, যেটা নিয়ে আমাকে আবার কমিশনার কার্যালয়ে যেতে হবে, অথচ আবেদনের কাজটি আমি বাসা থেকেই করতে পারতাম কিংবা একজন সাধারণ কম্পিউটার দোকান থেকেও করা যেত।’ এ কথার উত্তরে নাগরিক সেবা উদ্যোক্তা মীর ফাতেমা বলেন, ‘জন্মনিবন্ধন সার্ভারের এক্সেস না থাকায় সেবাকেন্দ্র থেকে আবেদন, ভেরিফিকেশন ও জন্মনিবন্ধন সনদ প্রিন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে পরিপূর্ণ সুবিধা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেবাকেন্দ্রে আসা আরেকজন নাগরিক জানান, গুলশানের নাগরিক সেবা কেন্দ্রটি মহাখালী বা কড়াইল বস্তিতে থাকা ভাসমান বা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য বড় সেবা কেন্দ্র হতে পারে। অনেক মানুষের এখনো জন্মসনদ নেই। এখানে এসে জন্মসনদ করার সুযোগ আছে। তবে সম্পূর্ণ প্রসেসটি এখান থেকেই করা গেলে জনদুর্ভোগ কমত এবং ভাসমান ব্যক্তিরাও জন্মনিবন্ধনের সুযোগ পেত।

গুলশান নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আরও নতুন নতুন সেবা নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে নেওয়া যাবে। সেবা কেন্দ্র পরিচালনায় নারী উদ্যোক্তারা আছেন বলে অনেক নারী ও শিশু-কিশোরবান্ধব এখানকার পরিবেশ। পাইলট পর্যায় থেকে সরাসরি চালু হলে অনেক সেবার সুযোগ মিলবে।

প্রথম সিটিজেন সার্ভিস কানেকটিভিটি হাব

নাগরিক সেবা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বিশেষ উদ্যোগ। তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল সরকারি সেবাগুলো আরও সহজলভ্য করে তুলছে এই কেন্দ্র। প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তাদের পরিচালিত স্থানীয় সেবা কেন্দ্রের বর্ধমান নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, নাগরিকেরা দ্রুত, পেশাদারভাবে এবং বাড়ির কাছেই প্রয়োজনীয় কাজে সহায়তা পাচ্ছেন। বর্তমানে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) সংক্রান্ত সেবাসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদের মোট ৪০০টি সেবা নিয়ে নাগরিক সেবার পাইলট এবং লার্নিং প্রোগ্রাম চলছে। প্রতিটি সরকারি অফিসের সেবাকে এক জায়গায় এনে নাগরিকদের হয়রানিমুক্ত সেবাদানের লক্ষ্যে নাগরিক সেবার মাধ্যমে ‘ন্যাশনাল এপিআই কানেকটিভিটি হাব’ তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে ভিন্ন ভিন্ন অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে আলাদাভাবে সেবার আবেদন করার প্রয়োজন পড়বে না। বরং এক জায়গায় সব সেবা পাওয়ার জন্য একটি ন্যাশনাল কানেকটিভিটি হাব দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা এক জায়গায় দিতে এটি বাংলাদেশের প্রথম সিটিজেন সার্ভিস কানেকটিভিটি হাব।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে এবং আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে নাগরিক সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) জানিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি অফিসের সেবাকে এক ছাদের নিচে আনার জন্য নাগরিক সেবা কেন্দ্র ধারণাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে। নাগরিকেরা যেন বাড়ির আশপাশে সরাসরি বিভিন্ন নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে পারে, তার সব সুবিধা আছে এখানে। প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বিভিন্ন সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছে নাগরিক সেবা কেন্দ্র। এসব সেবা কেন্দ্র স্থানীয় উদ্যোক্তারা পরিচালনা করছেন বলে এলাকাভিত্তিক উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের এসব নাগরিক সেবা কেন্দ্রের দায়িত্ব গ্রহণে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন সেবা কেন্দ্রের ঠিকানা:

১. নাগরিক সেবা কেন্দ্র, গুলিস্তান

ঠিকানা: রমনা টেলিফোন ভবন, গুলিস্তান (নগর ভবনের পাশে)। গুগল ম্যাপে এই অবস্থান (https://maps.app.goo.gl/cAet4WzmPEBeJTXG9) । ফোন: ০১৭৪৪৯৮৭৬০৬

২. নাগরিক সেবা কেন্দ্র, বনশ্রী

ঠিকানা: হাউস নম্বর ১/এ, রোড ০২, ব্লক ডি, বিটিসিএল, বনশ্রী, ঢাকা-১২১৯১ গুগল ম্যাপে এই অবস্থান (https://maps.app.goo.gl/LifX6NDRcU22dazD7)। ফোন: ০১৮১১২৫৬৩৪১

৩. নাগরিক সেবা কেন্দ্র, মোহাম্মদপুর

ঠিকানা: প্লট-৪৭, আসাদ অ্যাভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭। গুগল ম্যাপে এই অবস্থান (https://maps.app.goo.gl/DHqACmu21nys38nh9)। ফোন: ০১৭১৮৮৬৩৩৭১

৪. নাগরিক সেবা কেন্দ্র, গুলশান

প্লট নম্বর-২৫, রোড-১৬, গুলশান-১, ঢাকা, গুগল ম্যাপে এই অবস্থান (https://maps.app.goo.gl/9btSKptu5nsR92VaA)

ফোন: ০১৯১১৩১০৩৫৭

৫. নাগরিক সেবা কেন্দ্র, উত্তরা

ঠিকানা: ৩ এবং ৫, শাহজালাল অ্যাভিনিউ, সেক্টর-৬, উত্তরা, ঢাকা, গুগল ম্যাপে এই অবস্থান (https://maps.app.goo.gl/N93mhjMjK294wmAG6)। ফোন: ০১৯১৩৭৩৭৩৪৭

৬ নাগরিক সেবা কেন্দ্র, নীলক্ষেত

ঠিকানা: নীলক্ষেত টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ১, বাবুপুরা রোড, নীলক্ষেত, ঢাকা-১২০৫, গুগল ম্যাপে এই অবস্থান (https://g.co/kgs/tNihsqQ)

ফোন: ০১৪০৯৫৬২৩৯৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ ৫ সেবা দেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক
  • মাত্র ২০ মিনিটে পাসপোর্ট আবেদন করা যাবে যেখানে
  • নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই নাফাখুম ঝরনায় যান ১৭ পর্যটক, গোসলে নেমে একজন নিখোঁজ