‘বয়স বাড়ছে
আমাকে ফিরিয়ে দাও শৈশবের তারাগুলো
যেন আমি বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পাই
তোমার কাছে ফিরে আসি পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে উড়ে... ’

(‘আমার মায়ের প্রতি’, মাহমুদ দারবিশ, জোসেফ মাসেদের ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় তর্জমা: মাজহার সরকার)

একজন নির্বাসিত লেখকের যন্ত্রণা এবং মা ও মাতৃভূমির কাছে ফেরার আকুতি ওপরের পঙ্‌ক্তিগুলোয় গভীরভাবে টের পাওয়া যায়। ফিলিস্তিনের আল-বিরওয়া গ্রামে ১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া বিশ্বখ্যাত কবি মাহমুদ দারবিশ অন্য ফিলিস্তিনিদের মতোই ইসরায়েলি দখলদারত্বের ত্রাসে বাস্তুচ্যুত হন। ১৯৪৮ সালে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর ইসরায়েলি সৈন্যদের নির্মম বর্বরতা নেমে আসে নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর। জোর করে দখল করে নেওয়া হয় তাদের নিজস্ব ভূমি, জায়গা-জমি; ধ্বংস করে দেওয়া হয় ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। খোদ জাতিসংঘের হিসাবেই প্রায় ৯ লাখ ফিলিস্তিনি মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়।

মাহমুদ দারবিশের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় গ্রামও এ আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। পরিবারের সঙ্গে তিনি পালিয়ে যান লেবাননে। ইসরায়েলি বাহিনি ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যাতে কেউ ফিরে এলেও নিজের বাস্তুভিটার নিশানা খুঁজে না পায়। তাই দারবিশের পরিবার বছরখানেক পর নিজ ভূমিতে ফিরে এলেও নিজেদের বাস্তুভিটায় আশ্রয় নিতে পারেনি। ফলে ইসরায়েলের জনজরিপ মোতাবেক, তাদের এক অদ্ভুত স্ট্যাটাস জোটে, ‘না নাগরিক, না অনাগরিক’। যাঁরা নিজ বাস্তুভিটায় বাস করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, সেই ফিলিস্তিনিরাও পেয়েছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদা। মাত্র বারো বছর বয়সে ইসরায়েলের স্বাধীনতা দিবসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মাহমুদ দারবিশ তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের পাথরে শাণানো একটি কবিতা আবৃত্তি করে তাক লাগিয়ে দেন। যেখানে তিনি তাঁর বাড়িতে বহিরাগতদের ঢুকে পড়া, জায়গা–জমি দখল করার প্রসঙ্গ তির্যকভাবে তুলে ধরেন। ইসরায়েলি শাসকদেরও যেন বুক কেঁপে ওঠে তরুণ কবির এই শব্দবোমায়। ফলে দারবিশের বাবা সালিম দারবিশকে এই বলে শাসানো হয় যে ছেলে এ ধরনের কবিতা লিখলে তাঁর ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হবে। বিশ বছর বয়সে লেখা ‘পরিচয়পত্র’ কবিতায়ও মাতৃভূমির দুর্দশা ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের চিত্র উঠে এসেছে—‘তোমরা আমার পূর্বপুরুষের বাগান চুরি করে নিয়েছ /যে জমি আমি চাষ করতাম আমার সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে।’ জায়নবাদী প্রকল্পকে তিনি এভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন শব্দাস্ত্রের আঘাতে।

মাহমুদ দারবিশের পূর্বসুরি ফিলিস্তিনের আরেক বিখ্যাত লেখক ও বিপ্লবী গাসসান কানাফানিও ইসরায়েলের দখলদারত্বের শিকার হয়ে নিজ ভূমি থেকে উৎখাত হয়ে লেবাননে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁর আইনজীবী পিতা ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি সেটেলমেন্টের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে তাঁকে বন্দী করা হয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র চেপে বসলে তাঁকে নিজ শহর আক্কা ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে দেশ ছাড়তে হয়। পরে তাঁরা সিরিয়ায় স্থায়ী হন। ১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিন বিপ্লবের প্রভাবশালী গেরিলা সংগঠন পিএফএলপিতে যোগ দেন। সংগঠনের মুখপত্র আল আহদাফ ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় তাঁর সম্পাদনায়। পরবর্তীকালে ম্যাগাজিনটি আরব বিশ্বে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। কানাফানি সশস্ত্র বিপ্লবের তুমুল সমর্থক হলেও সশস্ত্র বিপ্লবে জড়িত ছিলেন না। তবে তাঁর সাহিত্য ও বক্তব্যই হয়ে উঠেছিল ভয়াবহ অস্ত্র।

নিজ ভূমি ফিলিস্তিনকে গাসসান কানাফানি অভিহিত করেছেন ‘দ্য ল্যান্ড অব স্যাড অরেঞ্জেস’ বা ‘দুঃখী কমলালেবুর দেশ’ হিসেবে। কমলালেবু ফিলিস্তিনের জাফা অঞ্চলের প্রধান ফল। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে পরবাসী হয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা প্রকাশিত হয়েছে। একটি সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এবিসি নিউজের সাংবাদিক রিচার্ড কার্লটন যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের যুদ্ধকে সংঘর্ষ হিসেবে অভিহিত করেন, তখন কানাফানি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘না। এটা সংঘর্ষ নয়। এটা মুক্তির জন্য যুদ্ধ, ন্যায়বিচার আদায়ের যুদ্ধ।’ কার্লটন যখন ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেন, তখন কানাফানি প্রশ্ন তোলেন, ‘গর্দানের সঙ্গে তলোয়ারের সংলাপ?’ এ সাক্ষাৎকারে কানাফানি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘অথচ এই ফিলিস্তিনিরা তো নিজেদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত হয়েছে। বিশ বছর ধরে ক্যাম্পে ক্যাম্পে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি ফিলিস্তিনি পরিচয় ব্যবহার করার অধিকারও তারা হারিয়েছে।’

বার্লিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রফিক আবু রামিলেহ মনে করেন, গাসসান কানাফানির এ বক্তব্যই ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত কণ্ঠস্বর, যা দুঃখজনকভাবে তারা কোথাও প্রচার করতে পারে না।

গাসসান কানাফানি কিংবা মাহমুদ দারবিশের মতো ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাতের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল মূলত যখন ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে জোর করে ইসরায়েল রাষ্ট্রের বাস্তবতা চাপিয়ে দেওয়া হয়। ১৯২৮ সালে জ্যুইশ ন্যাশনাল কাউন্সিল বা জেএনসি গঠনের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের বসতি পাকাপোক্ত করার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়।

গাসসান কানাফানি কিংবা মাহমুদ দারবিশের মতো ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উৎখাতের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল মূলত যখন ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে জোর করে ইসরায়েল রাষ্ট্রের বাস্তবতা চাপিয়ে দেওয়া হয়। ১৯২৮ সালে জ্যুইশ ন্যাশনাল কাউন্সিল বা জেএনসি গঠনের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের বসতি পাকাপোক্ত করার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে প্রথম বড়সড় দাঙ্গা সংঘটিত হয় ১৯২৯ সালে জেরুজালেমের ওয়েইলিং ওয়াল বা বুরাক দেয়াল নিয়ে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ইর্গুন জাই লিউমি নামে একটি মিলিশিয়া গঠন করে, যার নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালে জেরুজালেমের কিং ডেভিড হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ১৯৪৮ সালে দেইর ইয়াসিন গ্রামে গণহত্যা চালায়। জায়োনিস্ট নেতা ডেভিড বেন-গুরিয়ন সব ইহুদি নারী-পুরুষকে সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আসতে বাধ্য করেন। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শেষ ব্রিটিশ সামন্ত ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ছেড়ে গেলে সেদিনই তেল আবিব মিউজিয়ামে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বীকৃতি দেয়। অন্যদিকে মিসর, জর্ডান, সিরিয়াসহ আরব লিগের অন্যান্য দেশ তাদের প্রত্যাখ্যান করে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো সীমানা নেই। নাগরিকদেরও নেই নাগরিক অধিকার। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। এমনকি যেসব দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিংবা ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে, সেসব দেশের জনগণও রাজপথে নেমে এসেছে গাজায় ইসরায়েলের নিরন্তর গণহত্যা ও মানবাধিকার হরণের প্রতিবাদে। ইসরায়েলের পক্ষে দালালি করায় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধেও তারা স্লোগান দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা, নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। নিজ দেশের সরকারের ওপর তাঁরা চাপ সৃষ্টি করছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান অবস্থান ও পদক্ষেপ নিতে। সম্প্রতি ইউরোপের অনেক প্রভাবশালী দেশের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার নেপথ্যে এর একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা অবশ্যই রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে বিশ্বজুড়েই তীব্র জনমত তৈরি হয়েছে। জনমত উপেক্ষা করা সরকারের পক্ষে অসম্ভই বটে।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া পূর্ণ সদস্যপদ অর্জন করা কিংবা স্বাধীন দেশের বাস্তবতা অর্জন করা ফিলিস্তিনের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সাম্প্রতিক সময়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতির প্রেক্ষাপটে এ আলাপও উঠছে যে আসলে ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য পরিবর্তনে এসব স্বীকৃতি কতটা ভূমিকা রাখবে? আর এই স্বীকৃতি কতটা আন্তরিক আর কতটা লোকদেখানো, তা–ও বিবেচ্য বিষয়।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, লুক্সেমবার্গ ও মাল্টা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্সও স্বীকৃতি দিয়েছে। মেক্সিকো গত ২০ মার্চ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানায়। ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যদেশের মধ্যে ১৫৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচটি সদস্যদেশের মধ্যে চীন ও রাশিয়া ১৯৮৮ সালেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশও একই বছর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। সম্প্রতি বেশ কিছু প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে রয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যদেশের ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্ট্যাটাস এখন ‘সদস্যবহির্ভূত পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া পূর্ণ সদস্যপদ অর্জন করা কিংবা স্বাধীন দেশের বাস্তবতা অর্জন করা ফিলিস্তিনের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সাম্প্রতিক সময়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতির প্রেক্ষাপটে এ আলাপও উঠছে যে আসলে ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য পরিবর্তনে এসব স্বীকৃতি কতটা ভূমিকা রাখবে? আর এই স্বীকৃতি কতটা আন্তরিক আর কতটা লোকদেখানো, তা–ও বিবেচ্য বিষয়। অবশ্য এ স্বীকৃতির বাস্তবতাকে একেবারেই গুরুত্বহীন বলা যাবে না। কারণ, ইসরায়েলের ওপর একধরনের রাজনৈতিক চাপ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। যদিও তারা গাজায় গণহত্যার নির্মমতা থেকে এখনো সরে আসেনি।

ইহুদিদের কাছে ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’, মুসলমানদের বাইতুল মুকাদ্দাস, আল–আকসা ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.

–এর অনন্য স্মৃতিবিজড়িত ভূমি এবং খ্রিষ্টানদের কাছে যিশুখ্রিষ্টের পদচিহ্নখচিত ক্রশবিদ্ধ জেরুজালেমের এ পবিত্র ভূমি যুগ যুগ ধরে মৃত্যুময় এক বাস্তবতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ‘ওরিয়েন্টালিজম’ বইটির জন্য বিখ্যাত ফিলিস্তিনের আরেক নির্বাসিত লেখক ও তাত্ত্বিক এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাইদ স্বদেশের এই পবিত্র ভূমি থেকে নির্বাসনের যন্ত্রণায় বিদ্ধ ছিলেন আমৃত্যু। ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে জন্ম নেওয়া এই লেখককে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মিসরে চলে যেতে হয়। ফিলিস্তিনি জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্পষ্টবাদী সমর্থক ছিলেন তিনি। তাঁর বিখ্যাত ট্রিলজি ‘ওরিয়েন্টালিজম’ (১৯৭৮), ‘দ্য কোয়েশ্চন অব প্যালেস্টাইন’ (১৯৮০) ও ‘কাভারিং ইসলাম’-এর (১৯৮২) ধারাবাহিক পাঠে প্রাচ্যবাদের অন্তর্নিহিত রূপ, ফিলিস্তিন সমস্যার দার্শনিক তাৎপর্য ও ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের প্রোপাগান্ডার দিকটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘কাভারিং ইসলাম’-এ সাইদ দেখিয়েছেন, ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিম যে ভীতিকর ভাবাবেগ ও বয়ান তৈরি করে, তার সঙ্গে ফিলিস্তিনকে অনিবার্যভাবে জুড়ে দেওয়া হয়। ফলে ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বর দমন করা সহজ হয়। ফিলিস্তিনের মুসলিম আধিক্যের কারণে পাশ্চাত্যের ইসলামভীতি ও ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন’ একই সমান্তরালে জুড়ে দেওয়া হয়।

ফিলিস্তিনের বিখ্যাত নারী কবি ফাদওয়া তুকান (১৯১৭-২০০৩) তাঁর কবিতায় ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রামের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ‘প্রলয় ও বৃক্ষ’ কবিতায় তিনি বলেন:

‘গাছ কি সত্যিই উপড়ে পড়েছে?
কখনোই নয়! আমাদের অন্তহীন লালের প্রবাহে নয়
যখন আমাদের ছিন্ন অঙ্গের মদিরা
তৃষ্ণার্ত শেকড়গুলোর পিপাসা মেটায়, তখন নয়
আরবের শেকড় জীবন্ত’

এখানে ‘বৃক্ষ’ মূলত ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তিসংগ্রামের প্রতীকী চরিত্র হয়ে ওঠে, যা কখনো পতিত হবে না।

ফিলিস্তিনের নির্বাসিত লেখক ও নিপীড়িত জনগণের এ মর্মন্তুদ বেদনার অবসান একদিন নিশ্চয়ই হবে। একদিন বিশ্বের বুকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ফিলিস্তিন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ষ ট র য ক তর ষ ট র র ব স তবত ১৯৪৮ স ল প রক র য় ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ