স্বল্পমূল্যে জলবায়ু সহনশীল আবাসন তৈরিতে সহায়তার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
Published: 28th, September 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের আবাসন সংস্থাকে (ইউএন-হ্যাবিট্যাট) বাংলাদেশে কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “জলবায়ুজনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য টেকসই ও সাশ্রয়ী আবাসন সমাধান এখন অত্যন্ত জরুরি।”
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউএন-হ্যাবিট্যাটের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল ও নির্বাহী পরিচালক আনাক্লাউদিয়া রসব্যাকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে দ্রুত নগরায়িত এলাকায় সাশ্রয়ী আবাসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক আবাসন উদ্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “প্রতি বছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। এসব মানুষের জন্য টেকসই ও সাশ্রয়ী আবাসন সমাধান আমাদের জরুরি প্রয়োজন।”
তিনি দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বারবার ক্ষতির শিকার জনগোষ্ঠীর জন্য বহুমুখী ও প্রেক্ষিতভিত্তিক আবাসন মডেল তৈরির প্রস্তাব দেন।
তিনি উদ্ভাবনী নকশার প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ‘ছাদের নকশা এমনভাবে করুন, যাতে তা বন্যার সময় নৌকার মতো ব্যবহার করা যায়।’
নাইরোবি-ভিত্তিক এ সংস্থাকে তিনি সারা বিশ্বের বস্তি, ফাভেলা ও অনানুষ্ঠানিক বসতিতে আবাসন, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমন্বিত সমাধান খুঁজে দেখার আহ্বান জানান। পাশাপাশি নারীবান্ধব আবাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “আমাদের আবাসন নকশায় অবশ্যই নারীদের চাহিদার দিকে নজর এবং তাদের দৈনন্দিন জীবন সহজ করতে হবে।”
আলোচনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য টেকসই আবাসনের জরুরি প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের জাতিসংঘ সম্মেলনে ইউএন-হ্যাবিট্যাটকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
এছাড়া, তিনি ইউএন-হ্যাবিট্যাটের বিশ্ব নগর ফোরামের মাধ্যমে প্রতি বছর জলবায়ু-সহনশীল ও সাশ্রয়ী আবাসন নকশা প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানান নির্বাহী পরিচালক রসব্যাক।
রসব্যাক জানান, তিনি রোহিঙ্গা সম্মেলনে যোগ দিতে আগ্রহী। একইসঙ্গে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের আমন্ত্রণে আগামী মাসগুলোতে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেন।
তিনি বলেন, “বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটে সামনের সারিতে অবস্থান করা বাংলাদেশের জন্য ইউএন-হ্যাবিট্যাটের শক্তিশালী উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
রসব্যাক বাংলাদেশকে আগামী ১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠেয় ‘জিরো ওয়েস্ট ফোরাম’ এবং আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী বিশ্ব নগর ফোরামে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
আলোচনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষ গুরুত্ব পায়। জাতিসংঘ মহাসচিবের জিরো ওয়েস্ট উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস শহর ও বস্তিতে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
রসব্যাক ক্রমান্বয়ে আবাসন উন্নয়ন, উন্নত নগর পরিকল্পনা এবং আবাসন উদ্যোগে ক্ষুদ্রঋণের সংযোজনের গুরুত্বও উল্লেখ করেন।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউএন হ য ব ট য ট প রস ত ব রসব য ক আহ ব ন র জন য ট কসই জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
রুই ও ভেটকি চাষে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বাকৃবিতে গবেষণা শু
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ মিঠাপানি ও সামুদ্রিক মাছের জন্য জলবায়ু-সহনশীল মৎস্য চাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এ কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাড়তি তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও চরম আবহাওয়ার প্রভাব মোকাবিলা করে অভিযোজিত, টেকসই ও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক মৎস্য চাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন।
আরো পড়ুন:
বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়েছে ২১ কেজির পোয়া, দাম উঠেছে লাখ টাকা
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ইউজিসি ও বিশ্বব্যাংক সমর্থিত হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং (হিট) প্রকল্পের অর্থায়নে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় প্রকল্পের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আল ইমরান। তিনি জানান, এটি ৩ বছর মেয়াদী একটি গবেষণা প্রকল্প। এতে চারটি প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- রুই মাছের খাদ্যে উপকারী মাইক্রোব, মাইক্রোঅ্যালজি, ভিটামিন–ই ও সেলেনিয়াম সংযোজন করে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার ক্ষতিকর প্রভাব কমানো; রুই মাছের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা সহনশীলতা মূল্যায়ন করে উপকূলীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা যাচাই; ভেটকি (সি-বাস) মাছ চাষের উপযোগী প্রযুক্তি তৈরি করে দেশব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে চাষ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি এবং রুই ও ভেটকি মাছের জলবায়ু সহনশীল চাষাবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
কর্মশালায় ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. কাইজার আহমেদের সুমনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সারদার, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক ও ইউজিসি-এটিএফ সেক্রেটারিয়েটের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ উদ্দিন ভূঁঞা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড সালেহা খান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “ইউজিসি ও বিশ্বব্যাংক সমর্থিত হিটের নয়টি প্রকল্পের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ স্কোরারদের একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে—এটি বাকৃবির জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। সহকর্মীদের কঠোর পরিশ্রম, দক্ষতা ও নিষ্ঠার ফলস্বরূপ এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। স্বাদুপানির রুই এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় ভেটকি মাছকে অন্তর্ভুক্ত করে জলবায়ু সহনশীল মাছচাষ প্রযুক্তি উন্নয়ন একটি সত্যিই বড় উদ্যোগ।”
তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাছ চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক উন্নয়ন আনা জরুরি। কোন প্রযুক্তি ও কোন ধরনের ফিশ-কালচার মডেল ভবিষ্যতের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে—তা এই প্রকল্পে সুস্পষ্টভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। আমি চাই, প্রকল্পে স্নাতক পর্যায়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হোক, যাতে তারা হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং গবেষণায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।”
এ প্রকল্পের প্রধান হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান। তার সহকারী হিসেবে আছেন ড. মো. আল ইমরান এবং সদস্য হিসেবে আছেন অধ্যাপক ড. সালেহা খান।
প্রকল্পের প্রধান পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান বলেন, “বর্তমানে স্বাদুপানির মাছচাষ—বিশেষ করে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস—জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাভজনকতা হারাচ্ছে। যেখানে প্রতি কেজি মাছ উৎপাদনে ১০০ টাকা খরচ হয়, কৃষকরা নামমাত্র মুনাফা পান। তাই বিকল্প হিসেবে আমরা সামুদ্রিক ভেটকি মাছকে রিসার্কুলেটরি অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেমে (আরএএস) অভিযোজিত করার কাজ করছি।”
তিনি আরো বলেন, “যদি ভেটকি মাছ সফলভাবে আরএএস প্রযুক্তিতে উৎপাদন সম্ভব হয়, তবে প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ ২০০ টাকা হলেও বাজারদর ৬০০ টাকা। ফলে কৃষকরা কেজিপ্রতি প্রায় ৪০০ টাকা লাভ পাবে, যা বর্তমান স্বাদুপানির মাছচাষের তুলনায় বহুগুণ বেশি লাভজনক। ইতোমধ্যে ছোট স্কেলে মডেলটি সফল হয়েছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ‘খাঁচায় চাষ’ ও আরএএস সিস্টেমে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা চলছে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী