১৮ কোটি টাকার সেতু, নাকি দুর্ভোগ!
Published: 30th, September 2025 GMT
কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মিরপুর বাজার। জেলার দীর্ঘতম মিরপুর পৌর পশুহাট, উপজেলা পরিষদ, মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর-দৌলতপুর সড়কের জন্য একমাত্র সংযোগ স্থলে রয়েছে জিকে ক্যানেলের উপরের একটি সেতু বা ব্রিজ।
দৌলতপুর ও মিরপুর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সেতু পারাপার হন। উপজেলা পরিষদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ীক কাজ এবং হাসপাতালে যেতে একমাত্র অবলম্বন এই সেতুটি। পূর্বে এই স্থানে সেতু থাকলে সেটিকে সংস্কারের প্রয়োজনের তাগিদে নতুন করে সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
দীর্ঘদিন ধরে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতুটি নির্মাণ চলছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে বেইলি সেতুর পরিবর্তে মানুষ প্রতিনিয়ত সেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন।
নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ কচ্ছপ গতিতে চলছে। এরইমধ্যে আবার নির্মাণ প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত হবে এমন আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তবে কাজের গতিতে অনির্দিষ্টকালের দুর্ভোগের কথা জানায় স্থানীয়রা।
সেতুটি এরইমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। তবে সেতুটি ব্যবহারে সাধারণ মানুষ সুফল পাবে না বলে দাবি তাদের। অস্বাভাবিক উচ্চতা, রাস্তা এবং সেতুর সামনে নতুন করে দালান গড়ে ওঠায় স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন সেতুটি শুধুমাত্র দেখার জন্যই তৈরি হচ্ছে।
কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা সড়ক জোনের আওতাধীন মহাসড়কে বিদ্যমান সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন কংক্রিট সেতু/বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের অধীন কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনী)-মেহেরপুর সড়কের ৮ মাইল হতে মিরপুর থানা সংযোগ জেড-৭৪৫১) সড়কের সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন কংক্রিট মেতু/বেইলি সেতুর স্থলে আরসিসি/পিসিগার্ডার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় (৫৭.
২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর কাজ শুরু হয়, শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের ৭ মে। কাজের বরাদ্ধ ছিল ১৮ কোটি ৬৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা। কংক্রিট এন্ড স্টিল টেকনোলজিস লিঃ, রানা বিল্ডার্স (প্রাঃ) লিঃ কাজটি পায়। প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ায় এক বছর বৃদ্ধি করে আগামী ৩০ জুন ২০২৬ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, একবার প্রকল্প মেয়াদ শেষ হলেও ৫০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতু নির্মাণে ধীরগতি এবং কাজের মান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
তাদের দাবি, প্রতিদিন ২-৩ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করে। তাও সকালে করলে বিকালে করে না, আবার বিকালে করলে সকালে করে না। এভাবে সেতু নির্মাণ করার কারণে বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে আবার পারাপারে দুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও বাশের সাঁকো দিয়ে দিয়েছে তাতে ভোগান্তি আরো বেড়েছে।
ব্রিজটির ১৫ ফিট সামনের দোকানী গোলাম হোসেন বলেন, “ব্রিজের কাজ করে কি করে না ওরাই জানে। এক বছর ধরে দেখি একজন দুইজন করে মাঝে মাঝে কাজ করে। এখানে আমরা কী বলব? আমার মনে হয়, যা দেখছি এখনো এক থেকে দেড় বছর লাগবে ব্রিজ বানাতে। আবার ব্রিজ থেকে নামার রাস্তার সামনেই বাজারের এক নেতা পাঁচ তলা বিল্ডিং করছে। ইঞ্জিয়াররা আসছে, বলছে ব্রিজ বেশি উঁচু হলেও সমস্যা হবে না, সব নাকি ঠিক ঠাক করে দিবে। আমরা তো আর নেতা না যে আমাদের কথা কেউ শুনবে।”
ভ্যান চালক আব্দুল আজিজ জানান, “একেতো ব্রিজ হচ্ছে মেলা উঁচা, তার উপরে উঠার কোন রাস্তা থাকবে না। এতে তো সমস্যা হবে, ব্রিজে উঠা যাবে না। সমস্যা হলে আর কি করা, বুলবে কে? ব্রিজে উঠার রাস্তা এমন বাঁকা হলে আমরা ছোটখাটো গাড়ি নিয়ে উঠতে পারব না। সোজা হলে ভালো হতো। ব্রিজের সামনেই ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে, এগুলো না সরালে তো সমস্যা হবেই।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, যারা ব্রিজ করছে তারাই ভালো জানে কি কারণে এমন ব্রিজ করছে। তাদের মাথায় বুদ্ধি থাকলে এমন ব্রিজ বানায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ূন কবীর হিমু বলেন, “দেড় বছর ধরে এ ব্রিজের কাজ চলছে। মানুষের দুর্ভোগ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা সীমাহীন বললেও কম হবে। বিকল্পভাবে চলাচলের কোন রাস্তা নেই। যার কারণে ১০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা দিতে হচ্ছে। তাও কোন ভ্যান, রিকশা, অটো যায় না। একমাত্র উপায় হলো বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে হেঁটে পার হওয়া। তাও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। ব্রিজটি অনেক উচ্চতা সম্পন্ন হচ্ছে। এমন স্থানে এমন ব্রিজ করা মানে মানুষের ভোগান্তি আরো বৃদ্ধি করা।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রতি অনিহার কারণে এমন দায়সারা কাজ করছে বছরের পর বছর ধরে।”
ব্রিজ নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট ম্যানেজার আলিফ হোসেন বলেন, “এটি হচ্ছে ৫৭ মিটারের একটি ব্রিজ। এখানে ৩০০ ফিট ড্রাইভেশন রাস্তা নির্মাণ হবে। এখানে দোকানপাট এবং নতুন করে স্থাপনা তৈরি কারণে ব্রিজের সামনে রাস্তা করা সম্ভব না। রাস্তা হলেও রাস্তাটি ব্রিজের সাথে সোজা হবে না। ব্রিজ থেকে এপ্রোসটি বাঁকা হবে। যার কারণে ব্রিজটি সুন্দর হওয়ার কথা থাকলে হবে না। রেলের জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ের কারণে, বৈদ্যুতিক লাইন, পুরাতন ব্রিজের পাইল উঠানোর কারণে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।”
ব্রিজটি প্রযুক্তি সম্বলিত হবে না বলে তিনি বলেন, “পুরাতন যে স্টিমেট ছিল সে অনুযায়ী কাজ করলে ভালো হতো কিন্তু এখন নতুন স্টিমেটের কারণে ভালো হবে না। দেখতেও খারাপ লাগবে। ব্রিজের সামনে নতুন স্থাপনা তৈরি এবং দোকানপাট থাকায় ব্রিজের মুখ থাকবে একদিকে রাস্তা থাকবে অন্য দিকে।”
এদিকে ব্রিজের একদম সামনেই নতুন করে পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনের কাজ শুরু করেছে মিরপুর পৌর বাজারের ব্যবসায়ী নেতা বাবলু চৌধুরী। তবে পৌরসভার অনুমোদন না থাকায় কাজটি বন্ধ করে দিয়েছে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
বাবলু চৌধুরী বলেন, “এখানে যে ব্রিজটি হচ্ছে, আসলে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার মতো হচ্ছে না। ব্রিজের উচ্চতায় দুর্ভোগে পড়বে মানুষ। ব্রিজটি সাধারণ মানুষের গলার কাটা হয়ে যাবে। এখান থেকে কোন সুফল আসবে না।”
তিনি আরো বলেন, “হঠাৎ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখানে এসে আমার ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত জায়গায় মার্কেট করছিলাম আমি। পৌর সভায় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ফি দিয়ে আবেদন করে মৌখিক অনুমোদনে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “যে ব্রিজটি ১৫ ফিট উত্তরে হওয়ার কথা ছিলো, সেটি বিভিন্ন মানুষের চাপাচাপির কারণে ১৫ ফিট পশ্চিমে তৈরি হচ্ছে। কোন প্রকার স্থানীয়দের সাথে সমন্বয় না করেই এমন কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।”
মিরপুর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, মিরপুর পৌর এলাকার ৬২২ নং খতিয়ানের মিরপুর মৌজার ৫১৪ নং দাগের উপরে যে ভবন নির্মাণ হচ্ছে পৌর সভা থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তবে সেটি অনুমোদন হয়নি।
মিরপুর পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, “সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম চলমানাধীন মিরপুর ঈগল চত্ত্বরে যে বহুতল মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে এটা খুব হাইলি টেকনিক্যাল বিষয়। পৌর বিল্ডিং নকশা অনুমোদনের আবেদনে ১৩টি স্থানে সংশোধনী চেয়েছে বিল্ডিং নকশা অনুমোদন কমিটি। এজন্য আমরা নকশা সংশোধনের জন্য তাকে লিখিত চিঠি দিয়েছি, সেই সাথে অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত কাজটি স্থগিত করতে বলেছি।”
মিরপুর বাজার সংলগ্ন নির্মাণাধীন ব্রিজটি হবে দৃষ্টিনন্দন এবং জেলার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ব্রিজ বলে দাবি করে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের মুহাম্মদ মনজুরুল করীম বলেন, “এরইমধ্যে ব্রিজ নির্মাণের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে পিসি গার্ডার টাসকিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। পূর্ববর্তী সেতু বরাবরই নির্মিত হচ্ছে। এখানে কারিগরিভাবে অসুবিধা হবে মনে হচ্ছে না। সেতুর উচ্চতা টেকনিক্যাল স্ট্যান্ডার্ন্ড মেনেই হচ্ছে। আশা করি সেতুটি নির্মাণ হলে সাধারণ মানুষ সুফল পাবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র ব র জট র স মন র জন য ক জ কর সমস য এমন ব জ করছ উপজ ল র উপর
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রামীণ ব্যাংকের দুই শাখা ও পাঁচ গাড়িতে আগুন, ককটেল হামলায় আহত ২
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা প্রথম মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সাতটি জেলার বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে আগুন এবং ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে ঢাকার সাভারে দুটি ও ধামরাইয়ে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে। কিশোরগঞ্জে সড়কে গাছ কেটে অবরোধ, গ্রামীণ ব্যাংক ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। বগুড়ার ধুনটে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় আগুন দেওয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দুজন। গাজীপুরে গ্রামীণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের নামফলকে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। সিলেটে আগুনে পুড়েছে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
সাভার–ধামরাই
ঢাকার ধামরাই ও সাভার উপজেলায় গতকাল রাতে প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া আজ ভোরে সাভারে একটি মিনিবাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
গতকাল রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে তিনজন ব্যক্তি এসে ডি–লিংক পরিবহনের পার্ক করা একটি বাসের পেছনের জানালা ভেঙে ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন পানি ও বালু ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ধামরাই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। আগুনে বাসের ভেতরের অধিকাংশ আসন পুড়ে গেছে।
এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর সাভারের বিরুলিয়া বেড়িবাঁধ–সংলগ্ন বটতলা এলাকায় অন্য একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সাভার মডেল থানার পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে আলিফ পরিবহনের বাসটি পার্ক করে বাড়িতে খাবার খেতে যান মালিক আমজাদ হোসেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভান।
সাভার মডেল থানার বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল ওয়াহাব বলেন, পার্ক করা বাসে কে বা কারা আগুন দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাভারের আশুলিয়ায় বেরন এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিনিবাসে আজ ভোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসটির অধিকাংশ আসন পুড়ে যায়।
চালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল যাত্রী পরিবহন শেষে রাতে আশুলিয়ার বেরন এলাকায় সড়কের পাশে গ্রামীণ পরিবহন নামের মিনিবাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ভোর চারটার দিকে চালকের সহকারী বাসটি ধুয়েমুছে টয়লেটে যান। ফিরে এসে তিনি দেখেন বাসটিতে আগুন জ্বলছে। পরে আশপাশের লোকজন পানি দিয়ে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
আরও পড়ুনবাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে১ ঘণ্টা আগেমানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও আশপাশে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই রিকশাচালক আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে মানিকগঞ্জ শহরে এ বিস্ফোরণ ঘটে।
আহত দুই ব্যক্তি হলেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার বান্দুটিয়া এলাকার সাগর হোসেন ও বেউথা এলাকার নবীন হোসেন। তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সদর থানার পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘অদম্য ৭১’ ভাস্কর্যের সামনে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে পৌর সুপারমার্কেটের সামনে দুর্বৃত্তরা আরও একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে রিকশাচালক সাগর ও নবীন আহত হন। পরে তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুনকিশোরগঞ্জে রাতে সড়কে গাছ কেটে অবরোধ, গ্রামীণ ব্যাংক ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন২ ঘণ্টা আগেগাজীপুর
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকায় গ্রামীণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের নামফলকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে প্রধান ফটকের সামনে ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। আজ ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে খাড়াজোড়ায় গ্রামীণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক অবস্থিত। পুলিশ ও কারখানার নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকের পাশের নামফলকে ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত অগ্নিসংযোগ করে এবং ফটকের সামনে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে নামফলকের কিছু অংশ পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে রাতে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ২৪ ঘণ্টা আগেনারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রাত দুইটার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ইসদাইর এলাকার আয়কর কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বাসটির ভেতর ওই সময় ঘুমিয়ে ছিলেন চালক ও তাঁর সহকারী। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি টের পাওয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। তাঁদের দাবি, আগুন লাগার পরপরই নিয়ন্ত্রণে আনার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেছে।
বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলসংলগ্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জে গভীর রাতে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন, তাপে চালক জেগে ওঠায় রক্ষা২ ঘণ্টা আগেকিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার শ্রীরামদী এলাকায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সড়কের পাশের একটি লিচুগাছ কেটে সড়ক অবরোধ করেন একদল ব্যক্তি। গতকাল রাত দেড়টার দিকে হওয়া এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ সরিয়ে সড়ক চলাচলের উপযোগী করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ মোটরসাইকেলে করে কয়েক ব্যক্তি শ্রীরামদী এলাকায় প্রবেশ করেন। তাঁরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে সড়কের পাশে থাকা বড় লিচুগাছটি কেটে রাস্তার ওপর ফেলে দেন। এ ঘটনায় মুহূর্তেই সড়ক অচল হয়ে পড়লে বিভিন্ন যানবাহন আটকে যায়।
অন্যদিকে একই রাতে কিশোরগঞ্জ শহরের স্টেশন রোড এলাকায় অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাংকের যশোদল শাখায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন মাস্ক পরা এক ব্যক্তি। ঘটনার সময় পাশের একটি দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, মাস্ক পরা এক ব্যক্তি ব্যাংকের নিচতলায় আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যান। তবে আশপাশের লোকজন দ্রুত এগিয়ে এসে আগুন নিভিয়ে ফেলায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এদিকে কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে অ্যাম্বুলেন্সটি পুড়ে যায়।
আরও পড়ুনকিশোরগঞ্জে রাতে সড়কে গাছ কেটে অবরোধ, গ্রামীণ ব্যাংক ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন২ ঘণ্টা আগেবগুড়া
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন শাখা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আজ ভোরে গ্রামীণ ব্যাংকের ওই শাখার ভবনের বারান্দায় পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। এতে ব্যাংকের বিদ্যুতের সংযোগের তার পুড়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া বারান্দায় থাকা একটি ব্যানার ও আসবাব পুড়ে যায়।
ব্যাংকের নৈশপ্রহরী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে বারান্দায় সতর্ক অবস্থায় ছিলাম। রাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ বারান্দায় আগুন পাই। দুর্বৃত্তরা পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।’
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
সিলেট
সিলেটের পাঠানটুলা এলাকায় নবাবী মসজিদের পাশে গতকাল রাত দেড়টার দিকে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গাড়ি মেরামতের দোকানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গাড়ি মেরামতের দোকান পুড়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি দুর্বৃত্তদের কাজ, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ জানায়, স্থানীয় লোকজন আগুন লাগার ঘটনা দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকাবাসীও আগুন নেভাতে সহায়তা করেন। রাত পৌনে তিনটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। যান্ত্রিক বা বিদ্যুতের ত্রুটি থেকে আগুন লাগতে পারে। পুরো বিষয়টি ফায়ার সার্ভিস খতিয়ে দেখছে। ভেতরে কোনো দাহ্য পদার্থ আছে কি না, সেটাও তারা যাচাই করছে। ফায়ার সার্ভিসের মন্তব্যের পর আগুনের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।’
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।)