তিন ব্যাংকে জমা থাকা ৩০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা তুলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে নাসা গ্রুপ। টাকা পরিশোধ করতে হবে অনলাইনে।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত নাসা গ্রুপের অসন্তোষ নিরসন–বিষয়ক এক বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এমন নির্দেশনা দেয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

শ্রমসচিব মো.

সানোয়ার জাহান ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিভিন্ন ব্যাংক ও নাসা গ্রুপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলো, শ্রমিকের পাওনা মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) অর্থাৎ বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদির মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা করবে নাসা গ্রুপ। যেসব শ্রমিকের এমএফএস হিসাব নেই, তাঁদের নামের তালিকা করে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে হিসাব খোলার ব্যবস্থা করতে হবে।

নাসা গ্রুপের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে শ্রমিক, মালিক ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির কথা উল্লেখ করে শ্রমসচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া বৈঠকে বলেন, শ্রমিকের বকেয়া পাওনা সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী নাসা গ্রুপ পরিশোধ করবে।

জানা গেছে, নাসা গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন। তবে ২২টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে নাসা গ্রুপ এখন ৮ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার খেলাপি।

আজ অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও বলা হয়, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের (কারাবন্দী) কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি স্বাক্ষরের সময় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। আর সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কথা জানিয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করবে নাসা গ্রুপ।

নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

নাসা গ্রুপের কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে

এক্সিম ব্যাংকে নাসা গ্রুপের ২৪ কোটি টাকা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আলোচনা করে এ টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা করবে।

ইসলামী ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় নাসা গ্রুপের নগদ প্রণোদনা ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা আছে। এ টাকাও ছাড়ের ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নাসা গ্রুপের রপ্তানি আয় বাবদ সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে আছে ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ টাকা থেকে ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট কর্তন বাদ দিয়ে বাকি টাকা ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

জমি বিক্রির উদ্যোগও আছে

নাসা গ্রুপের বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তির একটি তালিকা করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, যার মধ্যে এক্সিম ব্যাংকে ২৪ কোটি টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। এসব সম্পত্তি বিক্রির জন্য নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০ সেপ্টেম্বর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি-বিষয়ক নথিতে স্বাক্ষর করেছেন।

এ ছাড়া রয়েছে গুলশান-১-এ ১২ তলাবিশিষ্ট ২টি ভবন, ৭১ নম্বর প্লটে ১ বিঘা, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৩ বিঘা, তেজগাঁও আড়ংয়ের বিপরীতে ৭ বিঘা, মহাখালী ডিওএইচএসে ১০ কাঠা, ঢাকার নিকেতনে ১০ বিঘা, উত্তরায় ১০ বিঘা, ১৩ নম্বর সেক্টরে প্লট এবং দিয়াবাড়িতে ৩ প্লট মিলে ৪০০ কোটি টাকা দামের সুইমিং পুল, পূর্বাচলে ২ বিঘা, ২০টি প্লট ও হাসপাতাল, মেঘনা ঘাটে আরও ১০ বিঘা জমি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০০ বিঘা জমি, দুবাইয়ে খেজুরবাগান ও দুবাই রিসোর্ট ইত্যাদি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব যবস থ আর থ ক পর শ ধ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্‌যাপন

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

আরো পড়ুন:

কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি

চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি

ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন।

১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়। 

যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে। 

দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ