দক্ষিণ এশিয়ায় চিকিৎসক-নার্সদের বেতন সবচেয়ে কম বাংলাদেশে
Published: 30th, September 2025 GMT
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চিকিৎসক ও নার্সদের বেতন–ভাতায় সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। চিকিৎসক, নার্সসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন–ভাতা কম থাকার কারণে তাঁদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। এতে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে পৃথক বেতনকাঠামো দরকার।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি জনবলের বেতন নীতি: বর্তমান বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা নাগরিক সংগঠন ‘অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস বাংলাদেশ’। আলোচনায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন, শ্রম সংস্কার কমিশন ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য, সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মো.
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশে স্বাস্থ্য খাতের কর্মীদের জন্য আলাদা বেতনকাঠামো নেই। সরকারি চাকরিজীবীরা জাতীয় পে স্কেলে বেতন পেলেও বেসরকারি খাতে একেক জায়গায় একেক রকম বেতন দেওয়া হয়। বেসরকারি খাতে কোনো ন্যূনতম মানদণ্ডও নেই।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের কর্মীদের জন্য ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করতে হবে। বেতন এমন হতে হবে, যেন তা দিয়ে জীবনযাপনের ব্যয় ভালোভাবে বহন করা যায়। পাশাপাশি বেতনের বাইরেও আবাসন, যাতায়াতের মতো অন্য সুযোগ–সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার গঠিত পে কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের কর্মীদের বেতন এমন হওয়া উচিত, যাতে তাঁকে অতিরিক্ত আয়ের জন্য বিকল্প খুঁজতে না হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীর দায়িত্ববোধ বাড়বে এবং সেবার মানও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে চার সদস্যের পরিবাবের জন্য ন্যূনতম বেতন ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরের জন্য ২৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হলে মজুরি ঠিক করতে হবে। সংবিধানের মূলনীতিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে, কাজ হবে মর্যাদার এবং সেই মর্যাদা রক্ষায় যৌক্তিক মজুরি দিতে হবে। এটা না মানার কারণেই দেশে এই তুঘলকি কাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। এটা সমাজ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাত সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলেছে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, চিকিৎসকদের জন্য সঠিক বেতন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যাঁরা প্রান্তিক এলাকায়, পার্তব্য এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জন্য ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফী আহমদ বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে যোগ দিয়ে তিনি কর্মীদের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও বৈষম্য দেখছেন। পরিবার পরিকল্পনা সহকারী ও স্বাস্থ্যসেবা সহকারী একই কাজ করে থাকলেও তাঁদের মধ্যে গ্রেড বৈষম্য রয়েছে। তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনায় ২৪৮ ক্যাটাগরির জনবল রয়েছে, যাঁদের পদন্নোতির জন্য নির্দিষ্ট কেনো নিয়োগবিধি পর্যন্ত নেই।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস, বাংলাদেশের সহ-আহ্বায়ক জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য খাতের বেতন নীতি পুনর্মূল্যায়ন করার যে সুপারিশ, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। এটা নিয়ে রাজনৈতিক দ্বিমত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
আলোচনায় একাধিক আলোচক স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান নানা বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। ক্যাডার বৈষম্যের উল্লেখ করে কেউ কেউ বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা যে সুযোগ–সুবিধা পান, তা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নেই। তাই স্বাস্থ্যসেবা খাতে পৃথক বেতনকাঠামোর দাবি জানান তাঁরা। বক্তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আয়া ও ওয়ার্ডবয়দের বেতন–ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা কম হয়। এদের সন্তুষ্টি না থাকলে হাসপাতালে সেবার মান বাড়বে না।
সভায় আরও বক্তব্য দেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য খালিদা হানুম আক্তার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব জহিরুল ইসলাম শাকিল, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) মহাসচিব অধ্যাপক মো. মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল অনুষদের ডিন সাখাওয়াত হোসেন, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভানেত্রী জাহানারা বেগম, মেডিকোলিগ্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি মোস্তাক রহিম প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য কর ম দ র ব সরক র চ ক ৎসক র কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে