অক্টোবর এলেই ছোটবেলার যে কথাগুলো মনে পড়ে
Published: 1st, October 2025 GMT
আগের দিন পঞ্চমীর রাতে কুটিকাকার মণ্ডপে মা দুর্গার চোখ আঁকা হয়েছে। অপূর্ব সেই ঘটনার সাক্ষী হতে গভীর রাত পর্যন্ত সবাই মন্দিরে ছিলাম। বিনয় পাল যখন রং-তুলির আঁচড়ে মায়ের চক্ষুদান করেন, তখন উলু আর শঙ্খধ্বনিতে চারপাশে তৈরি হয় মোহনীয় এক পরিবেশ। মনে হয়, এই মা যেন আমাদের খুব কাছের, খুব আপন।
কথিত আছে ষষ্ঠী থেকে দশমী—এই পাঁচ দিনের জন্য কৈলাস থেকে মর্ত্যে বাবার বাড়ি আসেন উমা তথা মা দুর্গা। সঙ্গে আসেন গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী আর কার্তিক।
কাল দেবীর বোধন হয়েছে। আজ মহাষষ্ঠী। মায়ের পূজা শুরু। আর পূজার অবিচ্ছেদ্য উপাদান হচ্ছে ফুল। আমাকে আর কৃষ্ণকে পূজার ফুল তোলার দায়িত্ব দিয়েছেন কুটিকাকা। তাই সাতসকালেই এত তাড়া। ঝটপট তৈরি হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।
প্রথমে আমরা যাই শিউলিতলা। আমাদের বাড়ির ঠিক পেছনেই গাছটি; আমার ঠাকুরমার হাতে লাগানো। আলো-অন্ধকারেও দূর থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সাদা শিউলিতে ছেয়ে আছে গাছতলাটা।
কী তার সৌরভ! গ্রামে বেড়ে ওঠা অনেকের কাছেই অক্টোবর মানে শিউলির ঘ্রাণ, গাছের পাতায় জমা বিন্দু বিন্দু শিশিরকণা আর হালকা শীতের শিরশিরে হাওয়া।
আরও পড়ুনপূজামণ্ডপে কাজলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন রানী১৩ ঘণ্টা আগেশিউলি কুড়িয়ে ঝুড়িতে তুলতে থাকি। বাতাসে গাছ থেকে শিউলি ফুলগুলো পুষ্পবৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে আর আমরা সেগুলোকে টপাটপ সাজিতে তুলি। শিবু, অনির্বাণরাও এসে হাত লাগায়। এরপর অপরাজিতা, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী, গন্ধরাজ, জবা, বেলি, টগর ফুলে ভরে ওঠে আমাদের পূজার সাজি। এবার চাই বেলপাতা।
কিন্তু গাছটা অনেক উঁচু। আমাদের নাগালের বাইরে। তখনই আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা ছেলে আহমেদের সঙ্গে দেখা। বললাম, ‘পূজার জন্য বেলপাতা পেড়ে দে।’ লাফিয়ে বেলগাছে উঠে পড়ে আহমেদ।
মস্ত একটা পাতাসহ ডাল ভেঙে নেমে আসে, মুখে বিজয়ীর হাসি। বললাম, ‘নদীতে আসিস, একসঙ্গে স্নান করব।’ আহমেদ হেসে বলল, ‘নাড়ু আনিস।’ আচ্ছা বলতেই ওর অনুরোধ, ‘একটু বেশি করে কিন্তু।’
পাবনা জেলায় আমাদের গ্রামের শেষটা জুড়ে কেবল যমুনা নদী। আমাদের শৈশব-কৈশোরের সঙ্গী। শরতে যখন নদীর জল শুকিয়ে আসে, তখন তার বুকে জন্মে বিশাল কাশবন। হাওয়ায় হাওয়ায় সেই কাশফুলের কী অপূর্ব নৃত্য।
শেষ বিকেলে সূর্যের আলো যখন কাশফুলে পড়ে, চারপাশে তৈরি হয় এক মোহনীয় আবেশ। এসে মনে হয়, এসব ছোট ছোট উপলক্ষের জন্যই তো জীবন এত সুন্দর।
মাত্র আধা মাইল সীমার মধ্যে সাত-সাতটি পূজা হয় আমাদের গ্রামে। আলোকসজ্জা প্যান্ডেল হয় দেখার মতো। ধর্ম-জাতি-বর্ণনির্বিশেষে আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সর্বজনীন এই উৎসবকে সফল করি।
শত শত বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে। আমরা সবাই একই গাঁয়ে থাকি, এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়।
আরও পড়ুনপূজার সাজে অভিনেত্রী মন্দিরা চক্রবর্তী, দেখুন ৮টি ছবি২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫সময়ের আবর্তে একসময় পূজার ঘণ্টা বাজে, পুরোহিত ঠাকুর মন্ত্র উচ্চারণ করেন, ঢাকঢোল-কাঁসর বাজে। ধূপ-ধুনুচির মিষ্টি গন্ধে পূজা পূজা আবেশ ছড়ায়; আমাদের রোমকূপ পর্যন্ত আন্দোলিত হয়। বাঙালি সনাতনীদের জন্য এ এক অন্য রকমের আবেগ। সারা বছর যার জন্য অপেক্ষা, তিনি এসেছেন।
মায়ের চেয়ে কে আর তাঁর সন্তানকে ভালোবাসবে? তাই মায়ের আগমনে কেবল বস্তুগত প্রাপ্তিই ঘটে না, আসে আত্মিক প্রশান্তি। ঠিক যেমনটা শিশু বোধ করে মাকে পাশে পেয়ে। ৮০ বছরের বৃদ্ধাও তাঁর মাকে ফিরে পান এই পাঁচটি দিন। তাঁর চোখজুড়ে নামে প্রাপ্তির অশ্রুধারা।
টেরাকোটার আদলে তৈরি প্রতিমা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চীনকে শান্ত করতে দূত পাঠাচ্ছে জাপান
তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে তীব্র কূটনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে জাপানের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে চীনকে শান্ত করতে এবং চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে বেইজিংয়ে জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে পাঠাচ্ছে টোকিও।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) জাপানের গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আরো পড়ুন:
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ২ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমান
শীতকাল এলেই ‘স্নো ফেইরি’ হয়ে যায় বরফের বলের মতো
প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনার শুরু হয় জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির একটি মন্তব্যকে ঘিরে। চলতি মাসের শুরুতে পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, “চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ চালায়, তাহলে তা জাপানের নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি এবং জাপান সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।”
পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আগে থেকে কিছুটা বিরোধ থাকলেও,, জাপানের কর্মকর্তারা এতদিন প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করাটা এড়িয়ে চলতেন, কারণ এতে বেইজিং আরও ক্ষুব্ধ হতে পারে। গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে চীন।
জাপানের মিডিয়া সোমবার জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও ওসেনিয়া ব্যুরোর প্রধান মাসাআকি কানাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা লিউ জিনসংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে কানাই তাকে জানাবেন যে- তাকাইচির মন্তব্য জাপানের নিরাপত্তা নীতিতে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না এবং একইসঙ্গে তিনি চীনকে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাবেন যা দুই দেশের সম্পর্কে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তাইওয়ান জাপানের পশ্চিমতম দ্বীপপুঞ্জ থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার (৬৮ মাইল) দূরে অবস্থিত এবং তেল ও গ্যাস সরবরাহের জন্য টোকিও নির্ভরশীল গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথের কাছাকাছি অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জাপানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বড় অবস্থান রয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার বেইজিং সতর্ক করে বলেছিল, তাইওয়ান ইস্যুতে জাপান সামরিক হস্তক্ষেপ করলে তারা ‘ভয়াবহ পরাজয়’ বরণ করবে। পাশাপাশি জাপানে ভ্রমণের বিরুদ্ধে চীনা নাগরিকদের সতর্কও করা হয়। আর এটি জাপানের পর্যটনব্যবসার জন্য বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “চীনের ভ্রমণ সতর্কতা ‘কৌশলগত, পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক উন্নয়নের বিস্তৃত দিকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’। আমরা চীনা পক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দৃঢ় অনুরোধ করেছি।”
জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি এই সপ্তাহের শেষের দিকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেতে পারেন, উভয়ই শুক্রবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘গ্রুপ অব ২০’ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার নিউ তাইপেতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই ছিং-তে বলেন, চীন জাপানের বিরুদ্ধে ‘বহুমুখী আক্রমণ’ চালাচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানাচ্ছি। চীনকে সংযত আচরণ করার এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সমস্যা সৃষ্টিকারী না হয়ে একটি বড় শক্তির মতো দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঢাকা/ফিরোজ