সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, হুমকিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশ
Published: 1st, October 2025 GMT
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিদ্যালয়ের পাশে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খালের পাড়, মহাসড়ক কিংবা সড়ক বিভাজক—সর্বত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। যত্রতত্র বর্জ্যের স্তূপে চাপা পড়েছে একসময়ের পরিচ্ছন্ন সড়ক ও সড়ক বিভাজক। তীব্র দুর্গন্ধে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। হুমকিতে পড়েছে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশ।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক, কদমতলী বন্দডাকপাড়া, আগানগর স্কুল রোড, শুভাঢ্যা আর্মি ক্যাম্প, রতনের খামার, জিনজিরা নেকরোজবাগ, জিনজিরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চুনকুটিয়া চৌরাস্তা থেকে নাজিরেরবাগ, রামেরকান্দা, কালিন্দী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ধারে ফেলা হচ্ছে গৃহস্থালি, দোকান ও শিল্পকারখানার বর্জ্য। পলিথিন, প্লাস্টিক, পচা খাবার ও পোড়া বর্জ্যের স্তূপ থেকে নির্গত হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। সেখানে মশামাছি উড়ছে। রতনের খামার এলাকায় বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়ায় শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল।
চায়ের দোকানের সামনের রাস্তায় লুকজন বস্তা বস্তা ময়লা ফেইল্যা রাখে। গন্ধে দোকানের কাস্টুমার খাওন খাইতে পারে না।কাদের হোসেন, চা–দোকানি, কতদমতলী, কেরানীগঞ্জজানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা এলাকায় খাসজমিতে ময়লা ডাম্পিং করা হচ্ছে। জিনজিরা ও কালিন্দী এলাকার ময়লা-আবর্জনা মনু ব্যাপারীর ঢাল এলাকায় ডাম্পিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের পাশে ফেলা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ময়লা-আবর্জনা অপসারণে প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেছেন। তাঁরা সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নয়া শুভাঢ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঘেঁষা জায়গায় বিভিন্ন এলাকার ময়লা এনে স্তূপ করে রাখা হয়। এতে শিশুরা শ্রেণিকক্ষে ঢোকার সময়েই মুখে কাপড় চেপে রাখে। ইমামবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একই দুর্ভোগে ভোগে। কদমতলী থেকে জনি টাওয়ার এলাকা পর্যন্ত সড়ক বিভাজকের ওপর রোপণ করা গাছের চারার গোড়া ময়লা-আবর্জনায় ঢেকে গেছে। এতে পাতা বিবর্ণ হয়ে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ইকুরিয়া এলাকায় সড়কের পাশে ‘এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ’ লেখা ব্যানারের পাশেও ময়লার স্তূপ দেখা যায়।
নয়া শুভাঢ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সামনে যেভাবে ময়লা ফেলা হয়, তাতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ তো দূরে থাক, তারা ঠিকমতো স্কুলেও আসতে চায় না। আমরা শিক্ষকেরাও নিজেদের কক্ষে দুর্গন্ধে বসে থাকতে পারি না।’
তেঘরিয়া ইউনিয়নের করেরগাঁও এলাকার রতনের খামার সড়ক ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের উভয় পাশে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ি, কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য। ফলে সড়কের উভয় পাশ এখন পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে আবর্জনার স্তূপে। ১২ ফুট প্রশস্ত সড়কটি এখন মাত্র ৩ ফুট ব্যবহারযোগ্য আছে। এতে ওই সড়কসংলগ্ন পাঁচ গ্রামের দুই সহস্রাধিক পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে।
রতনের খামার সড়কের পাশের ‘কুয়েত প্রজেক্ট’ গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব নাসির আলী বলেন, এ সড়ক দিয়ে কেরানীগঞ্জের মানুষ ঢাকা-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়েতে সহজে যেতে পারে। অথচ এ সড়ক এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এখন চারদিকে শুধু দুর্গন্ধ আর ময়লা। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির এ অবস্থা হলেও কেউ সড়কটি রক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
শুভাঢ্যা পূর্ব পাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘর থেকে বের হলেই ময়লার গন্ধে নাক বন্ধ করে চলতে হয়। চুনকুটিয়া চৌরাস্তা ও আর্মি ক্যাম্প বাজারের বর্জ্য সড়কের পাশে ফেলে রাখেন ব্যবসায়ীরা।
যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। কদমতলী এলাকার চা–দোকানি কাদের হোসেন বলেন, ‘দোকানের সামনের রাস্তায় লুকজন বস্তা বস্তা ময়লা ফেইল্যা রাখে। গন্ধে দোকানের কাস্টুমার খাওন খাইতে পারে না। ভাবছি এইহানে আর দোকান করুম না।’ একই অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে রামেরকান্দা ক্যাফে পল্লি এলাকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আসিফ হোসেন বলেন, রেস্তোরাঁর সামনে রাস্তায় ময়লার স্তূপ হয়ে গেছে। দুর্গন্ধের কারণে ক্রেতা কমে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে সড়কের কিছু অংশ পরিষ্কার রাখেন। কিন্তু আশপাশের যে নোংরা অবস্থা, তাতে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প সড়কে চলাচলকারী পথচারী রুনা আক্তার বলেন, ‘সড়কের পাশে ময়লা আর পচা খাবারের গন্ধে নিশ্বাস আটকে আসে। কিছুদিন আগে সড়কটি পরিষ্কার দেখেছিলাম। এরপর আবার আগের অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রতন র খ ম র সড়ক র প শ র বর জ য এল ক য় র স মন এল ক র ময়ল র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, “নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”
মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ