ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিদ্যালয়ের পাশে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খালের পাড়, মহাসড়ক কিংবা সড়ক বিভাজক—সর্বত্র ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। যত্রতত্র বর্জ্যের স্তূপে চাপা পড়েছে একসময়ের পরিচ্ছন্ন সড়ক ও সড়ক বিভাজক। তীব্র দুর্গন্ধে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। হুমকিতে পড়েছে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশ।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক, কদমতলী বন্দডাকপাড়া, আগানগর স্কুল রোড, শুভাঢ্যা আর্মি ক্যাম্প, রতনের খামার, জিনজিরা নেকরোজবাগ, জিনজিরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চুনকুটিয়া চৌরাস্তা থেকে নাজিরেরবাগ, রামেরকান্দা, কালিন্দী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ধারে ফেলা হচ্ছে গৃহস্থালি, দোকান ও শিল্পকারখানার বর্জ্য। পলিথিন, প্লাস্টিক, পচা খাবার ও পোড়া বর্জ্যের স্তূপ থেকে নির্গত হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। সেখানে মশামাছি উড়ছে। রতনের খামার এলাকায় বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়ায় শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল।

চায়ের দোকানের সামনের রাস্তায় লুকজন বস্তা বস্তা ময়লা ফেইল্যা রাখে। গন্ধে দোকানের কাস্টুমার খাওন খাইতে পারে না।কাদের হোসেন, চা–দোকানি, কতদমতলী, কেরানীগঞ্জ

জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা এলাকায় খাসজমিতে ময়লা ডাম্পিং করা হচ্ছে। জিনজিরা ও কালিন্দী এলাকার ময়লা-আবর্জনা মনু ব্যাপারীর ঢাল এলাকায় ডাম্পিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের পাশে ফেলা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ময়লা-আবর্জনা অপসারণে প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেছেন। তাঁরা সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নয়া শুভাঢ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঘেঁষা জায়গায় বিভিন্ন এলাকার ময়লা এনে স্তূপ করে রাখা হয়। এতে শিশুরা শ্রেণিকক্ষে ঢোকার সময়েই মুখে কাপড় চেপে রাখে। ইমামবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একই দুর্ভোগে ভোগে। কদমতলী থেকে জনি টাওয়ার এলাকা পর্যন্ত সড়ক বিভাজকের ওপর রোপণ করা গাছের চারার গোড়া ময়লা-আবর্জনায় ঢেকে গেছে। এতে পাতা বিবর্ণ হয়ে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ইকুরিয়া এলাকায় সড়কের পাশে ‘এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ’ লেখা ব্যানারের পাশেও ময়লার স্তূপ দেখা যায়।

নয়া শুভাঢ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সামনে যেভাবে ময়লা ফেলা হয়, তাতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ তো দূরে থাক, তারা ঠিকমতো স্কুলেও আসতে চায় না। আমরা শিক্ষকেরাও নিজেদের কক্ষে দুর্গন্ধে বসে থাকতে পারি না।’

তেঘরিয়া ইউনিয়নের করেরগাঁও এলাকার রতনের খামার সড়ক ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের উভয় পাশে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ি, কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য। ফলে সড়কের উভয় পাশ এখন পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে আবর্জনার স্তূপে। ১২ ফুট প্রশস্ত সড়কটি এখন মাত্র ৩ ফুট ব্যবহারযোগ্য আছে। এতে ওই সড়কসংলগ্ন পাঁচ গ্রামের দুই সহস্রাধিক পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে।

রতনের খামার সড়কের পাশের ‘কুয়েত প্রজেক্ট’ গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব নাসির আলী বলেন, এ সড়ক দিয়ে কেরানীগঞ্জের মানুষ ঢাকা-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়েতে সহজে যেতে পারে। অথচ এ সড়ক এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এখন চারদিকে শুধু দুর্গন্ধ আর ময়লা। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির এ অবস্থা হলেও কেউ সড়কটি রক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

শুভাঢ্যা পূর্ব পাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘর থেকে বের হলেই ময়লার গন্ধে নাক বন্ধ করে চলতে হয়। চুনকুটিয়া চৌরাস্তা ও আর্মি ক্যাম্প বাজারের বর্জ্য সড়কের পাশে ফেলে রাখেন ব্যবসায়ীরা।

যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। কদমতলী এলাকার চা–দোকানি কাদের হোসেন বলেন, ‘দোকানের সামনের রাস্তায় লুকজন বস্তা বস্তা ময়লা ফেইল্যা রাখে। গন্ধে দোকানের কাস্টুমার খাওন খাইতে পারে না। ভাবছি এইহানে আর দোকান করুম না।’ একই অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে রামেরকান্দা ক্যাফে পল্লি এলাকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আসিফ হোসেন বলেন, রেস্তোরাঁর সামনে রাস্তায় ময়লার স্তূপ হয়ে গেছে। দুর্গন্ধের কারণে ক্রেতা কমে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে সড়কের কিছু অংশ পরিষ্কার রাখেন। কিন্তু আশপাশের যে নোংরা অবস্থা, তাতে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প সড়কে চলাচলকারী পথচারী রুনা আক্তার বলেন, ‘সড়কের পাশে ময়লা আর পচা খাবারের গন্ধে নিশ্বাস আটকে আসে। কিছুদিন আগে সড়কটি পরিষ্কার দেখেছিলাম। এরপর আবার আগের অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রতন র খ ম র সড়ক র প শ র বর জ য এল ক য় র স মন এল ক র ময়ল র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কে ধস 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় একটি সড়ক ধসে পড়েছে। ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কের দুরবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছেন চার ইউনিয়নের ১৪ গ্রামের মানুষ। তাদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন তারা।

শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল-কৈজুরি আঞ্চলিক সড়কের জয়পুর ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন খালের ওপর নবনির্মিত সেতুর দুই পাশে এ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। 

আরো পড়ুন:

বেইলি ব্রিজের পাটাতন খুলে নদীতে, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

দূরপাল্লার বাস বন্ধে ভোগান্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রীরা

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৮ মাস আগে ১ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডাস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা ও কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় ৬ লাখ ৩০ হাজার ৯১৬ টাকা ব্যয়ে সেতুর সংযোগ (সিসিকরণ) সড়ক নির্মাণ করা হয়। গত সপ্তাহে পাঁচিল-কৈজুরি আঞ্চলিক সংযোগ সড়কটি ধসে পড়ে।  

সড়কে চলাচলকারীদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ এবং নিয়ম অনুযায়ী রড ছাড়াই নিম্নমানের পুরনো ইট ও লোকাল বালু ব্যবহার করে নামমাত্র গাইড ওয়াল দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে নির্মাণের এক মাস না যেতেই বৃষ্টিতে সড়কটি ভেঙে মানুষ ও যানবাহনের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবিতে গত শুক্রবার মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ উপস্থিত ছিলেন।

জয়পুরা গ্রামের নাসির উদ্দিন, কল্পনা বেগম ও আবু তাহের জানান, শিডিউল অনুযায়ী সংযোগ সড়কের পাইলিং ঠিকভাবে করা হয়নি। পুকুরে পানি থাকা সত্ত্বেও দায়সারাভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাত্র এক মাস আগে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করায় কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তা ভেঙে পড়েছে। এই সড়ক দিয়ে এখন যানবাহন তো দূরের কথা, পথচারীরাও চলাচল করতে পারছেন না।

স্থানীয় শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ, নীরব হোসেন ও আখিঁ খাতুন বলেন, অনেক কষ্ট করে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয় তাদের। রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় সবাই খুশি হয়েছিল। সংযোগ সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় স্কুল-কলেজে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিন শেখ ও আব্দুল আলিম জানান, সেতুটি নির্মাণের সময় ঠিকাদারকে শিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়েছি। ঠিকাদার সঠিক নিয়মে কাজ করেনি। পানির মধ্যে ৫০ ফুট পাইলিং না করে ২০ ফুটের কম পাইলিং করে সেতু নির্মাণ করেন তিনি। নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংযোগ সড়ক তৈরি করায় তা এক মাসের মাথায় ধসে পড়েছে। সঠিক তদারকি না থাকায় (পিআইও) অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে এসব অনিয়ম হয়েছে।

এক মাসের মাথায় সড়কটি ধসে পড়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান আলী বলেন, ‍“নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। বিলও উত্তোলন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে। এতে আমার কিছু করার নেই।”

শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল কালাম আজাদ বলেন, “আগের পিআইওর সময় সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমার সময়ে নির্মাণ করা সংযোগ সড়কটি বৃষ্টির কারণে ভেঙে গেছে। নতুন বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।”

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে গাইড ওয়ালের পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ সড়কটি ধসে পড়েছে। ঠিকাদারকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করে দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফতুল্লার পোস্ট অফিস-শিবু মার্কেট সড়ক সংস্কারে রিয়াদ চৌধুরী
  • শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কে ধস