ইটের সুরকি আর বালু দিয়ে শুরু হয়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে সৃষ্ট খানাখন্দ ও ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সংস্কার কাজ। ইট-বালু গাড়ির চাকায় একাকার হয়ে ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে সংস্কার করা মহাসড়কের অংশে। ফলে ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মহাসড়ক ব্যবহারকারী পথচারীসহ বিভিন্ন মানুষ। এতে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার (১ অক্টোবর) মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর থেকে টরকী বন্দর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, ইট-বালু দিয়ে মহাসড়ক সংস্কারের চিত্র।

আরো পড়ুন:

প্রথম স্ত্রীকে তালাক না দেওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা

তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণের ফলে মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর, বাইচখোলা, মাহিলাড়া, বেজহার, কাসেমাবাদ, আশোকাঠী, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড, মদিনাস্ট্যান্ড, টরকী বন্দর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে খানাখন্দসহ ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে পিচ-পাথর ব্যবহার করতে না পারায় ইট ও বালু দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করে মহাসড়ক সচল রাখে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ও বাইচখোলা অংশে পিচ এবং পাথর দিয়ে মহাসড়কে সংস্কার কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে মহাসড়কের গৌরনদী ও টরকী বাসস্ট্যান্ডে সবচেয়ে বেশি খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি বাসস্ট্যান্ডে পিচ ও পাথর দিয়ে সড়ক সংস্কার না করে ইটের সুরকি আর বালু দিয়ে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। ইটের সুরকি আর বালু বোঝাই গাড়ি চলাচল করায় ধুলো ঝড়ে পরিণত হচ্ছে। ফলে মহাসড়কের আশপাশের দোকান ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে। ছোট যানবাহনের চালক ও পথচারীদের মুখে মাক্স কিংবা রুমাল ব্যবহার করে চলতে হচ্ছে। যাদের মাক্স বা ‍রুমাল নেই, তারা হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে চলাচল করছেন।

গৌরনদী ও টরকী বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অথচ এখনো ইটের সুরকি আর বালু দিয়ে মহাসড়ক সংস্কার অব্যাহত রেখেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এতে সাধারণ মানুষের আরো ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা আরো বলেন, ধুলার কারণে দোকানে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। এভাবে চলতে থাকলে দোকানপাট বন্ধ করে রাখতে হবে। তাই জরুরি ভিত্তিত্বে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হওয়া অংশে ইট-সুরকি এবং বালু দিয়ে সংস্কার না করে পিচ-পাথর দিয়ে দ্রুত জনগুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.

শাহিন খান জানিয়েছেন, যাদের কাছ থেকে মালামাল সাপ্লাই আনা হচ্ছে, তারা এই মুহূর্তে মালামাল দিতে পারছেনা। তাছাড়া পূজার এই চারদিনে সড়কে গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য তাৎক্ষনিকভাবে ইট-বালু দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করা হচ্ছে।

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর শ ল সড়ক ও জনপদ ব ভ গ র গ রনদ আর ব ল

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন

সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।

স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, ‍“নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”

মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” 

পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”

মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ