উম্মুল মুমিনীন সাওদা বিনতে যামআ (রা.)
Published: 1st, October 2025 GMT
ইসলামের ইতিহাসে নারী চরিত্রগুলো কেবল গৃহস্থালির ছায়ায় সীমাবদ্ধ ছিল না; তারা ছিলেন জ্ঞানের আলোকবর্তিকা, সমাজের স্তম্ভ এবং জীবনের সূক্ষ্ম শিল্পের শিক্ষক। সাওদা বিনতে যামআ (রা.) তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
তিনি ছিলেন নবীজি (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক, কিন্তু তার জীবনীতে লুকিয়ে আছে এক অসাধারণ গুণ: আলোচনা ও সমঝোতার কৌশল। খাদিজা (রা.
তাঁর জীবন ছিল ইমান এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ভালোবাসায় ভরা। তিনি সাকরান বিন আমর (রা.)-এর স্ত্রী ছিলেন, যিনি সহাবী এবং হাবশায় দ্বিতীয় হিজরতের সঙ্গী। সাকরানের মৃত্যুর পর তিনি বিধবা হয়ে যান—কেউ বলেন হাবশায়, কেউ বলেন মক্কায় ফিরে।
বয়স চলে যাচ্ছে, তবু তিনি বিবাহের কথা ভাবতেন না; তাঁর জীবন ছিল ইবাদত এবং নবীজির প্রতি ভালোবাসায় মগ্ন। কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা ভিন্ন।
আরও পড়ুনদাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে মহানবী (সা.) এর স্ত্রী০৭ জানুয়ারি ২০২৫খাদিজার মৃত্যুর পর খাওলা বিনতে হাকিম আল-আসাদিয়া (রা.) নবীজির কাছে এসে বলেন, “আল্লাহর রাসুল, আপনার কন্যাদের দেখাশোনা করার জন্য কাউকে বিয়ে করুন। সাওদার মতো সৎ নারী কেউ নেই। তিনি আপনার কন্যাদের ভালো করে দেখবেন”।
মহানবী খাওলাকে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে সাওদার কাছে পাঠান। সাওদা (রা.) প্রথমে বিশ্বাস করেননি, কিন্তু খাওলার কথায় সম্মত হন। ১০ হিজরিতে তাদের বিবাহ হয়। (জাওয়ামিউল হাদিস, দারুন নাফায়িস, বৈরুত, ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি., পৃষ্ঠা: ১২৩)
হিজরতের পর সাওদা (রা.) মদিনায় নবীজির সঙ্গে বাস করেন। খাদিজার পর তিনিই প্রথম স্ত্রী যাঁর সঙ্গে মহানবী মক্কায় বাস করেছেন। হিজরতের পর আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে মহানবীর বিবাহ হয়।
সাওদা নিজেকে আয়েশার সঙ্গে তুলনা করেননি—তিনি জানতেন আয়েশার স্থান এবং তাঁর বাবা আবু বকর (রা.)-এর মর্যাদা। তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ির দায়িত্ব আয়েশাকে দিয়ে দেন এবং বলেন, “আমি তোমার অনুসরণ করব।”
এভাবে তিনি নবীজির সন্তুষ্টি এবং আয়েশার সম্মান অর্জন করেন এবং এভাবে প্রথম আলাপে তিনি বোঝাপড়ার মাধ্যমে সকলের সন্তুষ্টি অর্জন করেন। (জাওয়ামিউল হাদিস, দারুন নাফায়িস, বৈরুত, ১৪১৮ হি./১৯৯৮ খ্রি., পৃষ্ঠা: ১৩৪)।
আরও পড়ুনরাসুল (সা.)–এর স্ত্রী ছিলেন জুওয়াইরিয়া (রা.)১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪হাফসা বিনতে উমর, যায়নাব বিনতে জাহশ এবং উম্মে সালামা (রা.)-এর বিবাহের পর সাওদা নিজেকে অন্যদের সঙ্গে হিসাব করে দেখেন, তাঁর বয়স বেশি, চলাফেরায় ভারী, সৌন্দর্য বা বুদ্ধিতে তিনি অন্যদের সমান নন। মহানবী (সা.) তাঁর অবস্থা বুঝে তাঁকে তালাকের প্রস্তাব দেন।
সাওদা (রা.) চমকে উঠেন—তিনি নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করতেন না, কিন্তু নবীজির স্ত্রী হিসেবে থাকার গৌরব ছাড়তে চান না। এক রাতে নবীজি তাঁর কাছে থাকেন। তখন তিনি তাঁর হাত ধরে বলেন, “আল্লাহর রাসুল, আমার পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ নেই, কিন্তু আমি চাই আপনার স্ত্রীদের মধ্যে আমি থাকি। আমাকে ফিরিয়ে নিন।”
নবীজি সম্মত হন। কেউ বলেন, এই ঘটনায় সুরা নিসার আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে: “আর যদি কোনো নারী তার স্বামীর কাছ থেকে বিমুখতার ভয় করে, তাহলে তাদের মধ্যে সমঝোতা করতে কোনো সমস্যা নেই। সমঝোতাই উত্তম।” (সুরা নিসা, আয়াত: ১২৮)।
সাওদা (রা.) বুঝেছিলেন যে, তাঁর বয়স এবং চলাফেরার সমস্যা নবীজির জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে। তিনি তালাকের পরিবর্তে তার সময়গুলো আয়েশা (রা.)-কে দান করে দেন। এতে তিনি আয়েশার সম্মান এবং নিজের মর্যাদা রক্ষা করেন।
এটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় জয়—নিজের অধিকার ত্যাগ করে সকলের সন্তুষ্টি অর্জন।
সাওদা (রা.)-এর জীবন আমাদেরকে শেখায় যে, দাম্পত্য জীবন কেবল অনুভূতির ওপর নির্ভর করে না, বরং লাভ-ক্ষতির ভারসাম্য বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এর স ত র আয় শ র স র জ বন আল ল হ ব স কর স কর ন নব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
রুনা লায়লার জন্মদিন: সংগীতজীবনের বর্ণময় ৬ দশকের উদ্যাপন
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ৭৩ বছর পূর্ণ করলেন। একইসঙ্গে পূর্ণ করলেন তার গৌরবময় সংগীত-জীবনের ৬০ বছর। উপমহাদেশের তিন দেশ—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সমানতালে গান গেয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন রুনা লায়লা। ১৮টি ভাষায় তার গাওয়া গানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। ফলে তিনি যে উপমহাদেশের শীর্ষ সংগীতশিল্পীদের একজন—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশের বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অনন্য। দেশ-বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অগণিত স্বীকৃতির মাঝে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তার অর্জনকে আরো মহিমান্বিত করেছে।
আরো পড়ুন:
কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি
চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি
ভক্তদের কাছে রুনা লায়লার এবারের জন্মদিনটি বিশেষ। কোক স্টুডিও বাংলার তৃতীয় মৌসুমের শেষ গানটি প্রকাশ পেয়েছে তার গাওয়া জনপ্রিয় সুফি কাওয়ালি ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ দিয়ে—যে গানটি বহু বছর আগে তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।
তবে জন্মদিন নিয়ে শিল্পীর বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি জানান, পরিবারকে সময় দিয়েই কাটাবেন দিনটি। ঘরোয়া পরিবেশেই উদ্যাপিত হবে জন্মদিন।
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। সংগীতজীবনের শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে। শিল্পী আহমেদ রুশদির গায়কিতে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগীতাঙ্গনে পথচলা শুরু করা এই কণ্ঠশিল্পী দ্রুতই উর্দুভাষী শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। ‘উনকি নজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গাম মিলা’—এর মতো গান তাকে এনে দেয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
এরপর ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে তার কণ্ঠের জাদু। ‘ও মেরা বাবু ছৈল ছাবিলা’ তাকে পরিচিত করে তোলে সাদাকালো যুগেই। পরে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সঙ্গে ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ (১৯৮২) অ্যালবাম তাকে বিশ্বব্যাপী নতুন আরেক পরিচিতির শিখরে পৌঁছে দেয়।
যদিও তিন দেশে সাফল্য পেয়েছেন, রুনা লায়লার সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি ছিল বাংলাদেশ। ‘দ্য রেইন’ (১৯৭৬), ‘জাদুর বাঁশি’ (১৯৭৭), ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ (১৯৮৯), ‘অন্তরে অন্তরে’ (১৯৯৪)—সহ মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকা নির্বাচিত হয়েছেন। ‘সাধের লাউ বানাইলা মোরে বৈরাগী’, ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম’—এর মতো বাংলা লোকগান তার কণ্ঠে নতুন প্রাণ পেয়েছে।
দীর্ঘ ও সফল এই যাত্রায় মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি—এ কথা প্রায়ই উল্লেখ করেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, “মা আমাকে প্রচণ্ড সহযোগিতা করেছেন। ছোটবেলায় গান গাইতে গেলে মা সবসময় সঙ্গে যেতেন।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত