রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, জনসচেতনতায় জোর নেই
Published: 1st, October 2025 GMT
রংপুরের কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলায় আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে দুজন কাউনিয়ার এবং একজন মিঠাপুকুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। তবু আক্রান্ত এলাকাগুলোতে অ্যানথ্রাক্স নিয়ে তেমন সচেতনতামূলক কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা যান। একই সময়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ জন নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
আরও পড়ুনপীরগাছায় ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত, রংপুরের আরও দুই উপজেলায় উপসর্গের রোগী৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনরংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধশত১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুজন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর কাউনিয়ায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ আছে এমন ছয়জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। সুজন সাহা বলেন, আক্রান্ত রোগীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালের কর্মী রোগীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দেবেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৫–২০ দিন আগে ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে একটি গরু অসুস্থ হলে জবাই করা হয়। পরে ওই মাংস কাটাকাটি করার পর গ্রামের পাঁচ–ছয়জনের শরীরে ঘা হয় ও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁরা চিকিৎসা নিতে আসলে সেখানে থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এই পাঁচজনের মধ্যে একজন পুরুষের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ইমাদপুরে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবু রোগী যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সে জন্য তাঁদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি জানান, এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। অসুস্থ গরু জবাই করা বা মাংস খাওয়া যাবে না।
বুধবার দুপুরে আমাইপুর গ্রামে গেলে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও সোহরাব আলীর সঙ্গে। তাঁদের দাবি, গরুর মালিক গরু অসুস্থের কথা বলেননি। বলেছিল, দড়ি দিয়ে গরুর ফাঁস লেগেছিল। এ কারণে প্রতিবেশীরা মাংস কাটাকাটিতে যুক্ত হন। এই দুই স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রহমতপুর বাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা জানান, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম তাঁরা দেখেননি।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরেকটি সূত্র বলছে, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের একজন নারীর অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ পাওয়া গেছে। তিনি অসুস্থ গরুর সংস্পর্শে আসেননি। তবে তাঁর বাড়িতে গরু-ছাগল আছে। ওই নারী নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, মাটি বা ঘাসের সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু বছরের পর বছর ধরে থেকে যায়। বেশির ভাগ সময় পানি জমা ঘাস গবাদিপশু খাচ্ছে। সেখান থেকে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য অ্যানথ্রাক্স প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রমে জোর দিতে হবে।
অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ইমাদপুর এলাকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে জানান, ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাঁদের এলাকায় গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী পচার হাটের মমিনুল ইসলাম ও মহেন্দ্র দাস বলেন, তাঁদের এলাকায় টিকা দেওয়া হয়নি। তাঁরা গরু-ছাগল নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ প্রথম আলোকে বলেন, গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করার পরেই গত আগস্ট থেকে তাঁরা টিকা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করতে দেরি করেছে। এ কারণে এখন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দাবি, পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, উলিপুর ও রাজাটহাটেও অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিরাপদ মাংসের জন্য বিভিন্ন জবাইখানায় গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দেরি করেনি দাবি করে ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন জানতে পারছি, সঙ্গে সঙ্গে আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছিল। প্রতিটি উপজেলাকে সতর্ক করা আছে এবং অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এটার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসাব্যবস্থা, সেটাও পর্যাপ্ত আছে। এ মুহূর্তে যেটা বিষয়, জনগণকে সচেতন করা। অসুস্থ প্রাণী জবাই না করা, নিজেরা না খাওয়া, লুকিয়ে বিক্রি না করা। অসুস্থ প্রাণী মারা গেলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স ম ঠ প ক র উপজ ল প রথম আল ক স প ট ম বর কর মকর ত ক উন য় প রগ ছ ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে ৭ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
সিদ্ধিরগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৭ কেজি গাঁজাসহ হোসেন মনা (৪২) নামে এক চিহ্নিত ও একাধিক মামলার আসামি এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১ অক্টোবর) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউস গেট এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত হোসেন মনা সিদ্ধিরগঞ্জ উত্তর আজিবপুর বাগানবাড়ী এলাকার মৃত আঃ লতিফ স্বর্ণকারের ছেলে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে থানা এলাকায় ওয়ারেন্ট তামিল ও মাদক উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে ডিউটি করছিলেন তিনি।
এমন সময় গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল কাঠপট্টি এলাকায় মনির হোসেনের শাহ-দেওয়ানবাগী ফার্নিচার মার্ট নামক দোকানের সামনের পাকা রাস্তার ওপর একজন মাদক ব্যবসায়ী বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ গাঁজা নিয়ে অবস্থান করছে।
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক কারবারি হোসেন মনা কৌশলে পালানোর চেষ্টা করে।
পুলিশ সদস্যরা তাকে ধাওয়া করে আটক করে। পরে পবর্তীতে তার হাতে থাকা একটি প্লাস্টিকের বস্তা তল্লাশি করে ৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত গাঁজার আনুমানিক বাজারমূল্য এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত হোসেন মনার বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যা মামলাসহ পূর্বেও একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনূর আলম এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন মাদকের বিরুদ্ধে আমরা 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় এই সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি এবং তার বিরুদ্ধে পূর্বেরও একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমরা তার সহযোগীদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
সিদ্ধিরগঞ্জে মাদকমুক্ত করতে আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।