সিলেটে দুই দিনে এক ট্রাক ও চার ট্রাক্টরভর্তি পাথর জব্দ
Published: 6th, November 2025 GMT
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পাথর লুট থামছে না। সম্প্রতি পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে পাথর লুটের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। মামলার পাশাপাশি লুট করা পাথর আটক করে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল পর্যটনকেন্দ্রে। অভিযানে নেমেছিল প্রশাসনের পাশাপাশি যৌথ বাহিনী। এরপরও পাথর লুটপাটকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র এলাকায় লুটপাট কমলেও লুট থামছে না ‘পাথরের খনি’খ্যাত শাহ আরেফিন টিলায়। এরই মধ্যে এই টিলার প্রায় ৮৫ শতাংশ পাথর লুট হয়ে গেছে। টিলা কেটে লুট করা হয়েছে পাথরগুলো। এরপরও থামছে না পাথর লুট।
শাহ আরেফিন টিলা থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় গতকাল বুধবার রাতে চার ট্রাক্টরভর্তি পাথর ও আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ট্রাকভর্তি পাথর জব্দ করেছে পুলিশ। তবে উদ্ধার করা পাথরের পরিমাণ জানা যায়নি।
এক ট্রাকভর্তি পাথর জব্দ করে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এক বিপুল ব্যয়ের পরও কেন ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনা
প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি, বিশ্বেও অন্যতম শীর্ষে। এরপরও মেট্রোরেলের পথে ৪৫টি ত্রুটি ও ঘাটতি থাকাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এসব ত্রুটি ও ঘাটতির কারণে চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩০-৪০ বার মেট্রোরেল বন্ধ রাখতে হয়েছে।
গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে পথচারীর মৃত্যুর পর আধুনিক এই জনপরিবহনব্যবস্থার নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়েও বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) অবশ্যই জননিরাপত্তাকে কেন্দ্রে রেখে মেট্রোরেলের ত্রুটি ও ঘাটতিগুলোকে জরুরি উদ্যোগ নিয়ে কাটিয়ে উঠতে হবে। না হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে নাগরিক আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা মেট্রোরেল নিয়েও জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মতিঝিল-উত্তরা পর্যন্ত পথে যে ৪৫টি ত্রুটি ও ঘাটতি পেয়েছে, তার বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এর মধ্যে সংকেত ও টেলিযোগাযোগ কাজে ১০টি, বৈদ্যুতিক কাজে ১৬ ধরনের, পুরকৌশল কাজে ১০ ধরনের এবং ট্রেন ও এর সঙ্গে যুক্ত ব্যবস্থাপনায় ৯ ধরনের ত্রুটি ও ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ১৬টি স্টেশনের অন্তত ৮৯টি জায়গায় বৃষ্টির পানি ঢোকে। স্টেশনের ছাদের ফাঁক এমনভাবে তৈরি করা যে লাইনের পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মেও পানি পড়ে। যাত্রীরাও অভিযোগ করেছেন, বৃষ্টির সময় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষার সময় ভিজে যেতে হয়। অনেক স্টেশনে ট্রেন নির্দিষ্ট জায়গায় না থেমে কিছুটা আগে-পরে থামছে।
তিন বছরের কম সময় আগে চালু হওয়া মেট্রোরেলের কিছু যন্ত্রাংশে কেন মরিচা পড়বে কিংবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কেন মাঝেমধ্যে অকার্যকর থাকবে। স্টেশনের লিফট ও এস্কেলেটরেও কেন অসংগতি থাকবে? চালুর একেবারে শুরু থেকেই টিকিট কাটার যন্ত্র ও স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায়ের ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত মানের না হওয়ায় যাত্রীদের নানা সময়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত সমাধান না মেলাটা দুঃখজনক।
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ত্রুটি ও ঘাটতির কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। যেখানে বিয়ারিং প্যাড মাথায় পড়ে নাগরিকের মৃত্যু হতে পারে, সেখানে এই ভাষ্য কতটা আশ্বস্ত করতে পারে? এসব ত্রুটির কারণে হুটহাট মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকা এবং এর ফলে যে জনদুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতি হয়, সেটাও তো বিবেচনায় নিতে হবে।
মেট্রোরেলে এসব ত্রুটি ও ঘাটতি থাকার কারণ হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে করেনি কিংবা চুক্তি অনুযায়ী যতটুকু কাজ করার কথা ছিল, সেটা তারা করেনি। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় শুধু পাঁচ গুণ বেশি ব্যয়ই হয়নি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পেছনেও যে ব্যয় করা হয়েছে, সেটাও অস্বাভাবিক। এরপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে বারবার করে চিঠি দেওয়ার পরও চাহিদামতো সমাধান না পাওয়াটা দুঃখজনক।
মেট্রোরেল নির্মাণে যে বিপুল ব্যয় হয়েছে, তাতে ঋণ পরিশোধ করতে এমনিতেই চাপের মুখে পড়তে হবে। এরপর যদি ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনার কারণে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়ে যায়, সেটা হবে ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’। ঠিকাদার ও পরামর্শকের দিক থেকে বিয়ারিং প্যাডের ৫ শতাংশ বিচ্যুতি সহনীয় বলে আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবে সেটা ঘটেনি। আমরা মনে করি, শুধু চিঠি দেওয়াটাই সমাধান নয়, ত্রুটিপূর্ণ স্থাপনার জন্য ঠিকাদার ও পরামর্শককে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। এত বিপুল ব্যয়ের পরও কেন এমন ত্রুটিপূর্ণ মেট্রোরেল?