বর্তমান সময়ে ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসায় এসেছে বড় পরিবর্তন। আগে যেখানে কেমোথেরাপিই ছিল প্রধান উপায়, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি, যা এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে।

এসকেএফ অনকোলোজির আয়োজনে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন ডা. মো. আরিফ হোসেন।

নভেম্বর মাস ‘ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতার মাস’। ফুসফুস ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনার এ পর্বে অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট (ক্যানসার বিশেষজ্ঞ) ডা.

মো. আরিফ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন।

এ পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘ফুসফুস ক্যানসার বার্তা’। বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যানসার রোগের কারণ, ঝুঁকি, লক্ষণ, চিকিৎসা, সচেতনতা এবং প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. আরিফ হোসেন। পর্বটি মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলোজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

ফুসফুস ক্যানসার: ধরন ও বৈশিষ্ট্য

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ডা. মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘ফুসফুস ক্যানসার তখনই হয়, যখন শরীরের কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজিত হয়ে দলা পাকিয়ে টিউমার তৈরি করে। ফুসফুস বা লাং ক্যানসার মূলত দুই ধরনের—প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি ক্যানসার ফুসফুসের নিজস্ব কোষে হয়, আর সেকেন্ডারি ক্যানসার শরীরের অন্য অঙ্গে সৃষ্টি হয়ে ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো কারসিনোমা, যা আবার দুটি ভাগে বিভক্ত—স্মল সেল লাং ক্যানসার এবং নন-স্মল সেল লাং ক্যানসার। স্মল সেল ক্যানসারে কোষ ছোট ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, অন্যদিকে নন-স্মল সেল ক্যানসার তুলনামূলক ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং এতে এডিনোকারসিনোমা, স্কোয়ামাস সেল ও লার্জ সেল কারসিনোমার মতো উপধরন দেখা যায়।

ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি ও কারণ

ধূমপান না করলেও কি ফুসফুস ক্যানসার হতে পারে? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ হলেও ধূমপান না করেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ফুসফুস ক্যানসারের জন্য দায়ী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান, তবে বাকি ক্ষেত্রগুলো ঘটে অন্য নানা কারণে। পরিবেশদূষণ—যেমন গাড়ির কালো ধোঁয়া, ইটের ভাটা, শিল্পকারখানার নির্গমন কিংবা খোলা জায়গায় আবর্জনা পোড়ানো—এর ফলে বাতাসে থাকা ক্ষতিকর কণা (কার্সিনোজেন) ফুসফুসে ক্যানসার তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া বদ্ধ জায়গায় কয়লা বা কাঠের ধোঁয়ায় রান্না করা, এজবেস্টস, ক্রোমিয়াম, রেডন গ্যাস ইত্যাদির সংস্পর্শেও ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। তা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের প্রদাহ, যেমন সিওপিডি বা ব্রঙ্কাইটিস এবং পারিবারিক ইতিহাসও রোগের প্রবণতা বাড়াতে পারে।

ডা. আরিফ আরও বলেন, ‘যিনি ধূমপান করেন এবং যিনি তাঁর আশপাশে থেকে পরোক্ষভাবে ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করেন—দুজনেরই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি প্রায় সমান। তাই ফুসফুস ক্যানসার প্রতিরোধে প্রথম শর্ত হলো, ধূমপান এবং পরোক্ষ ধূমপানের পরিবেশ থেকে দূরে থাকা। পাশাপাশি বায়ুদূষণ কমানো, রান্নার সময় পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফুসফুস ক্যানসারের লক্ষণ ও বংশগত ঝুঁকি

এ বিষয়ে ডা. মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘ফুসফুস ক্যানসার অনেক সময় জন্মগত বা পারিবারিক কারণেও হতে পারে। ক্যানসার মূলত জিনে স্থায়ী পরিবর্তন বা জেনেটিক মিউটেশনের ফল। যদি পরিবারে কারও অল্প বয়সে ফুসফুস ক্যানসার হয়ে থাকে, বিশেষ করে তিনি যদি ধূমপায়ী না হন, তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যদের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে ডা. মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘সাধারণ কাশি সাধারণত তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায় কিন্তু ফুসফুস ক্যানসারের কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দিন দিন খারাপের দিকে যায়। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশির সঙ্গে রক্ত, ওজন কমে যাওয়া বা গলার স্বর পরিবর্তনের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে কাশির সঙ্গে রক্ত আসা মানেই ফুসফুস ক্যানসার নয়—যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগেও এমন হতে পারে। দীর্ঘদিনের কাশি বা অজানা উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে পরীক্ষা করানোই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

ফুসফুস ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসা

ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসায় বিভিন্ন টেস্ট, প্রাথমিক ধাপে চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব সম্ভব কি না? এ বিষয়ে উপস্থাপক জানতে চাইলে ডা. মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসায় এসেছে বড় পরিবর্তন। আগে যেখানে কেমোথেরাপিই ছিল প্রধান উপায়, এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি—যা এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে। টার্গেটেড থেরাপি দিতে হলে আগে জানতে হয় রোগীর শরীরে নির্দিষ্ট জিন মিউটেশন বা ড্রাইভার জিন আছে কি না। এই তথ্য জানা যায় মলিকিউলার বা জিন টেস্টের মাধ্যমে। তাই সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণে এই টেস্ট এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমিউনোথেরাপি শুরু করার আগে পিডিএল-ওয়ান প্রোটিনের উপস্থিতিও পরীক্ষা করা হয়। যদি এর মাত্রা নির্দিষ্ট সীমার ওপরে থাকে, তাহলে চিকিৎসা আরও কার্যকরভাবে কাজ করে।

ডা. আরিফের মতে, ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসা পুরোপুরি নির্ভর করে রোগের ধাপ বা স্টেজের ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে (স্টেজ-১ ও ২) রোগীকে সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির সমন্বয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব। তবে দেরিতে ধরা পড়লে (স্টেজ-৩ বা ৪) চিকিৎসার লক্ষ্য হয়ে যায় রোগীর আয়ু ও জীবনমান বাড়ানো। চিকিৎসা শেষে নিয়মিত ফলোআপের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, চিকিৎসার পরও এটি ফিরে আসতে পারে। তাই প্রথম তিন বছর রোগীদের তিন থেকে ছয় মাস পর পর এবং পরের দুই বছর ছয় মাস অন্তর ফলোআপে আসা উচিত। এতে আমরা দ্রুত বুঝতে পারি রোগটি পুনরায় ফিরে এসেছে কি না এবং সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারি। কারণ, সঠিক সময়ে নির্ণয় ও চিকিৎসা পেলে ফুসফুস ক্যানসারও সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। মলিকিউলার টেস্ট ছাড়া টার্গেটেড থেরাপি দেওয়া মানে অন্ধকারে তির ছোড়া। তাই সঠিক পরীক্ষাই চিকিৎসার মূল ভিত্তি।

বাংলাদেশে ফুসফুস ক্যানসার রোগের কারণ, ঝুঁকি, লক্ষণ, চিকিৎসা, সচেতনতা এবং প্রতিরোধব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. আরিফ হোসেন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ পর ক ষ প রথম উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

রাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আটক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাবির প্রধান ফটকের সামনে থেকে তাকে আটক করেছে নগরীর মতিহার থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক।

আরো পড়ুন:

এবার রাবির ৩ বিভাগে ভর্তির জন্য দিতে হবে লিখিত পরীক্ষা

রাবিতে জিএস-রেজিস্ট্রার বাকবিতণ্ডা: বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের নিন্দা

আটক ছাত্রলীগ নেতা হলেন, সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি মো. সাহাদাত হোসেন। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এই নেতা গত ২০ এপ্রিল পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের কাউন্সিলের প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করে আলোচনায় আসেন।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের কল পেয়ে আমরা তাকে আটক করেছি। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ