সিলেট টেস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার পরপরই সংবাদ সম্মেলনে চলে এসেছেন মাহমুদুল হাসান। তবে কথা বলা শুরু করতে আরও মিনিট দশেক অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। মাথার ক্যাপটা যে সঙ্গে নিয়ে আসেননি তিনি। পৃষ্ঠপোষকদের লোগোসহ সেই ক্যাপ ছাড়া কথা বলার বিধিনিষেধের কারণেই তাঁর সেই অপেক্ষা।

মাহমুদুলের জন্য অবশ্য অপেক্ষা নতুন কিছু নয়। সিলেট টেস্টে এসেই শেষ হয়েছে তাঁর লম্বা একটা অপেক্ষার পালা। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে খেলেছিলেন ৭৮ রানের  ইনিংস। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পান টেস্ট সেঞ্চুরিও।

তখন তাঁকে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্য লম্বা রেসের ঘোড়াই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেই আশার প্রদীপ নিভু নিভু করে জ্বলছিল এত দিন। কয়েকবার দলে ফিরে আবার বাদও পড়েছেন। তিন বছর পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এসে তিনি পেয়েছেন টেস্টে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাদ পড়ার পর আবার এই সিরিজেই ফিরেছেন মাহমুদুল।

ডাকল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি মাহমুদুল.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিমান-ট্রাভেল খাতে সুশাসন নিশ্চিতে দুটি সংশোধনী অধ্যাদেশের অনুমোদ

দেশের বিমান পরিবহন ও ট্রাভেল এজেন্সি খাতে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতে দুটি খসড়া অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশের খসড়া দুটি উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

১৫ নভেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে কোর কমিটি

পাইলটের ভুলে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: তদন্ত প্রতিবেদন

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান সংস্থা এবং ট্রাভেল এজেন্সি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের প্রায় ৮০ শতাংশই অভিবাসী কর্মী। তাই নতুন আইনে অভিবাসী কর্মীসহ সাধারণ যাত্রীদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে ২০১৭ সালের বিদ্যমান আইনে যুগোপযোগী নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমবারের মতো ‘যাত্রী সেবা নিশ্চিতকরণ’ শব্দগুচ্ছকে আইনের দীর্ঘ শিরোনাম ও প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে যাত্রীদের নিরাপত্তা, সুবিধা ও অধিকার সংরক্ষণে আইনি দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর জন্য সাধারণ বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগকে ঐচ্ছিক করা হয়েছে এবং দেশি এয়ার অপারেটরদেরও একই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল টিকিট বিতরণ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা টিকিট ব্লকিং, কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।

অধ্যাদেশটিতে প্রথমবারের মতো বিমান সংস্থাগুলোর ট্যারিফ দাখিল ও পর্যবেক্ষণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, টেকসই বিমান জ্বালানি ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।

সরকারকে ‘বেসামরিক বিমান চলাচল অর্থনৈতিক কমিশন’ গঠনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে বিমানবন্দরের ফি, চার্জ, রয়্যালটি ও ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হবে, ফলে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও ন্যায্য মূল্যনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন আইনে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—যা দেশের বিমান খাতকে আরও স্মার্ট ও প্রযুক্তিনির্ভর করবে।

অপরদিকে, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর মাধ্যমে ট্রাভেল ব্যবসায় অবৈধ অর্থ লেনদেন, মানি লন্ডারিং, টিকিট মজুতদারি, প্রতারণা ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নতুন অধ্যাদেশে নিবন্ধন সনদ বাতিল বা স্থগিতের ১১ নতুন কারণ যুক্ত করা হয়েছে। অবৈধ টিকিট বিক্রয়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অনুমোদনবিহীন লেনদেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, তৃতীয় দেশ থেকে টিকিট কেরা-বেচা এবং যাত্রীর তথ্য পরিবর্তনকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।এসব অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সরকারকে প্রমাণ প্রাপ্তির ভিত্তিতে কোনো ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তদুপরি, প্রতারণা বা আর্থিক আত্মসাতের ঘটনায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে।

মন্ত্রণালয় আরো জানায়, এই দুটি অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে বিমান পরিবহন ও ট্রাভেল ব্যবসায় শৃঙ্খলা, আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি টিকিটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, অভিবাসী কর্মী ও সাধারণ যাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণ এবং পর্যটন খাতে সুশাসন ও আন্তর্জাতিক মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ফলে দেশের বিমান পরিবহন ব্যবস্থা হবে আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও যাত্রীবান্ধব।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ