জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরির জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। দলটি বলেছে, প্রধান দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান জুলাই সনদকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এর সঙ্গে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নও পড়েছে হুমকিতে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে দলগুলোর সমঝোতার সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরদিন আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানায় গণতন্ত্র মঞ্চ। এই মোর্চায় রয়েছে জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোটের সময় প্রশ্নে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবং সরকারের দায়সারা আচরণের ফলে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ সুযোগে পরাজিত মাফিয়া গোষ্ঠী অস্থিরতা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলাফল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন হুমকির মুখে পড়েছে। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

জুলাই সনদে গত ১৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলো সই করার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ২৭ অক্টোবর এই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারকে জমা দেয়। তবে সংবিধান সংস্কারের গণভোটের সময়সহ নানা বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। সরকার সমঝোতার আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া মেলেনি।

গণতন্ত্র মঞ্চের বিবৃতিতে বলা হয়, এমন কার্যক্রম প্রমাণ করে যাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি এই দলগুলোর কোনো শ্রদ্ধা নেই। এমনকি ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বেলায়ও এটাই সত্য।

রাজনৈতিক দলগুলো এখন দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে মনে করছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিগত মতপার্থক্যকে সামনে এনে এবং নিজেদের পছন্দমতো পদ্ধতিকে সবার ওপর চাপিয়ে দিয়ে এরা প্রমাণ করতে চাইছে, তারাই প্রভাবশালী দল। এই প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি প্রদর্শন করে নির্বাচনের আগেই তারা বিজয়ী দল হিসেবে ভোটের মাঠের দখল নিতে চায়।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারকে মুখ্য ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, একই সঙ্গে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা থেকে সরে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসন করে সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অনুসরণ করতে হবে।

ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ বলেছে, এই নির্বাচন যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয় সেই ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনে রাখতে হবে ঘোষিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করা না গেলে দেশ ভয়াবহ নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়বে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দলগ ল র অবস থ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চালকের আসনে সরকার, সিদ্ধান্তও তাদের দিতে হবে

অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারকাজে হাত দিয়েছিল, সেই সংস্কার বিষয়ে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা ছিল না। এটা আইনের সংস্কার, সার্বিকভাবে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার। এই সংস্কারপ্রক্রিয়ায় অনেক আইনি বিষয়েও আগে থেকে অনেকের ধারণা ছিল না। সে কারণে আলোচনা যত এগোচ্ছে, ততই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।

এই সরকারকে অনেকে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত সরকার বলছে। অনেকে বলছে বিপ্লবের পরে পরিবর্তনের অভিপ্রায়ে গঠিত সরকার। সংবিধান রক্ষা করার অঙ্গীকার করে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সংবিধানের বৃত্তের মধ্যে থেকে অনেক পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।

ঐকমত্য কমিশন গঠন ও পরবর্তী সময়ে সরকার ছিল অনুঘটকের ভূমিকায়। কিন্তু পরে দেখা গেল, সরকার হাত গুটিয়ে নিল। ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলো। তবে অনেক প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া হয়। যারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে তারা বলেছিল, সরকার গঠনের পরে তারা জনগণের কাছে যাবে এবং জনগণের রায় অনুযায়ী সেটি তারা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সরকার নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে দিল। এই নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হলো। ভিন্নমত তুলে দিয়ে সরকার রাজনীতি দলগুলোকে মুখোমুখি করে দিল।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জট খোলার চেষ্টায় সরকার ২ ঘণ্টা আগে

জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার রায় ঠিকই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দিল। সরকার ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আট মাস ধরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। কিন্তু এখন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিবে। এটি সরকারের একধরনের বাতুলতা। এভাবে কোনো সমাধান হবে না। যে কারণে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে।

সরকার এটি কোনো অভিমান থেকে বলেছে কি না, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোকে মুখোমুখি করা হলো। এর আগে সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছে, তা সব দল মানেনি। এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি যে সবাই মানবে, সেই ভরসা করা উচিত নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন কীভাবে করা যায়, সেটি সরকারকে চিন্তা করতে হবে।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে দ্রুত সব দলের অভিন্ন মত চায় সরকার ০৩ নভেম্বর ২০২৫

দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে কথা বলতে হবে সরকারকে। এর মধ্য থেকে পথ বের করে আনতে হবে। নইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, বিতর্ক বাড়বে। এখন সব দায়িত্ব সরকারের। সরকার এখন চালকের আসনে, অনুঘটকের আসনে নয়। নির্বাচন এবং ট্রানজিশনের এই সময়ে সরকারকে নেতৃত্ব দিতে হবে। আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। দেশের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো আগেও ছাড় দিয়েছে, এখনো ছাড় দেবে বলে আশা করা যায়।

মাহমুদুর রহমান মান্না: সভাপতি, নাগরিক ঐক্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে একটি দল: মামুনুল হক
  • জুলাই সনদের বাইরে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে দায়দায়িত্ব সরকারের: বিএনপি
  • সনদের বিষয়ে সুরাহা না হওয়াটাই নির্বাচনের আগে একমাত্র সংকট
  • জাতি নির্বাচনের মাঠে, সনদ বাস্তবায়নের দাবি কেন রাজপথে
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের শেষ চেষ্টা, বিএনপি–জামায়াত–এনসিপি কী ভাবছে
  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে সরকারকে দায় নিতে হবে
  • চালকের আসনে সরকার, সিদ্ধান্তও তাদের দিতে হবে
  • সংস্কার আটকে গেলে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হবে: এনসিপি নেতা আখতার
  • মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য আটকে আছে: আমীর খসরু