ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী: ঢাকা চেম্বার
Published: 11th, January 2025 GMT
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও করপোরেট কর বাড়িয়েছে সরকার। অংশীদারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ভ্যাট বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
আজ শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এ সময় ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরীসহ সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে, ডলারের দাম বেশি। গণ–অভ্যুত্থানের পর বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ঋণের সুদহারও অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অর্থনীতির গতি কমিয়ে দেবে। এতে চাপে পড়বে আপামর জনগণ।
তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘সরকারের এমন পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা একমত নই। বেসরকারি খাতে একসঙ্গে এতগুলো জায়গায় ভ্যাট বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতীমূলক।’ এ বিষয়ে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
সরকার নীতির ধারাবাহিকতা ঠিক না রাখায় ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জ বেড়ে যায় বলে জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। তিনি বলেন, নীতির ধারাবাহিকতা ঠিক না রাখার সর্বশেষ উদাহরণ হলো গত সপ্তাহের এই ভ্যাট বৃদ্ধির ঘটনা। মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকস খাতের কিছু পণ্যে আয়কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এটি ব্যবসায়ীদের শুধু বিপদে ফেলবে না, একই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিকেও খারাপ করছে। আয়কর বাড়ানোয় আগামী তিন মাসের মধ্যে মোটরসাইকেলের দাম ১০-১৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
মানুষকে কষ্ট দিয়ে এভাবে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকারকে অন্য উপায় খোঁজার পরামর্শ দেন তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যয় ২০ শতাংশ কমানো গেলে সেখান থেকে এক বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো সাশ্রয় করা সম্ভব। সুতরাং সরকারি ব্যয় কমান। কর-ভ্যাট বাড়িয়ে আমাদের আর নাভিশ্বাস বের কইরেন না।’
দেশে রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিপথ আলাদা থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। বর্তমানে অনেক সংস্কারের কথা শুনছি; সামনে নির্বাচনের আলোচনাও রয়েছে। তবে আমরা মনে করি, অর্থনীতি ও রাজনীতি একই পথে যেন না চলে। রাজনীতি রাজনীতির মতো করে চলুক; সেটি যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত না করে।’
এ সময় সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন ব্যবসায়ীরা তো সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন, নির্বাচন করছেন। এর জবাবে তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে দিয়ে সবাইকে বিচার করা ঠিক হবে না। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের শুধু ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডেই মনোনিবেশ করা উচিত। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আলাদা থাকুক। আর দেশে আইন প্রণয়ন করেন রাজনীতিকেরা। আইন ঠিক থাকলে ব্যবসায়ীরা খারাপ হওয়ার সুযোগ কম পাবেন।’
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য–সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তাসকীন আহমেদ বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে অস্থিরতা চলছে, সেটিকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয় বলে মনে করছি। এ কারণে দুই দেশের ব্যবসাতেই কিছু প্রভাব পড়েছে। ফলে ভিসা জটিলতাসহ ব্যবসায়ের অন্য সমস্যাগুলো যত দ্রুত সমাধান হবে, তত দ্রুত দুই দেশের ভালো হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।
গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।
দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।
এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।