ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণিত বিভাগ সংলগ্ন ফুটপাতে মেহগনি গাছের মগডাল থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলন্ত এক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে উদ্ধার হওয়া ওই মৃত ব্যক্তির নাম আবু সালেহ (৪৫)। তিনি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নয়া মসজিদ রোডের বাসিন্দা মো. আব্দুর রব ও লুৎফুন্নেছার ছেলে।

আবু সালেহর এ রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে ঢাবি চলছে বেশ গুঞ্জন। স্থানীয়দের মনেও দেখা দিয়েছে নানা সন্দেহ। এটা হত্যাকাণ্ড কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মরদেহের গায়ে ছিল সবুজ রঙের টি-শার্ট এবং সাদা রঙের কোট। পরনে নীল রঙের ট্রাউজার। মরদেহ উদ্ধারের সময় বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছিলেন পথচারী এবং উপস্থিত জনতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ মিনার এলাকার একজন রিকশাচালক বলেন, “আমরা ভোরে লাশটি দেখতে পাই। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, কেউ হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। এটাকে আত্মহত্যা বলে মনে হয় না।”

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ঢাবি শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা সকালে ক্লাস করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। এ সময় দেখি, কিছু মানুষ জটলা হয়ে উপরে তাকিয়ে আছে। পরে গিয়ে দেখি একটা লাশ ঝুলছে।”

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোর্শেদ আলম শফিক বলেন, “তিনি হয়ত ফুটপাতে ঘুমাতেন। কাপড় ফুটপাতে পড়ে ছিল।”

আবু সালেহর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মরদেহের গলায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির কালো দাগ রয়েছে। এছাড়া মৃতদেহে আর কোন আঘাত বা সন্দেহজনক কোন কিছু মেলেনি।

বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেন তারই ছোট দুই ভাই আবু হায়দার ছোটন ও মোহাম্মদ আলী এবং ভাতিজা মো.

রিফাত।

এ সময় ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার নগরকসবা গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুর রব। তবে তারা পরিবার নিয়ে বহু বছর ধরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ কালীগঞ্জের নয়াবাড়ি এলাকায় থাকেন। আবু সালেহ অবিবাহিত। এলাকাতে একটি টেইলার্সে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সেখান থেকেই কিছু বাজে বন্ধু-বান্ধবের আড্ডায় পড়ে জড়িয়ে পড়েন মাদকে।

তিনি জানান, প্রথম প্রথম তাকে সবাই বুঝিয়ে মাদক থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। তবে দিন দিন তার আসক্তি বাড়তে থাকে। গত ৩ বছর আগে টেইলার্সের কাজ ছেড়ে দেন। বাড়ি থেকেও চলে এসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে থাকা শুরু করেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাড়িতে যেতেন। সেখানে দু-একদিন থেকে মা-বাবা, ভাইদের কাছ থেকে কিছু টাকা-পয়সা চেয়ে নিয়ে আবার হুট করেই চলে আসতেন। তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হত না।”

তিনি আরো জানান, গত পাঁচদিন আগে সালেহ বাড়িতে গিয়েছিল। তখন মায়ের কাছ থেকে ওষুধ কেনার কথা বলে ১ হাজার টাকা নিয়ে আসেন। এরপর তার সঙ্গে আর কারো যোগাযোগ হয়নি। আজ বুধবার দুপুরে শাহবাগ থানা পুলিশের মাধ্যমে তার মরদেহ উদ্ধার হওয়ার খবর শুনতে পান তারা।

আবু সালেহের আরেক ছোট ভাই আবু হায়দার ছোটন জানান, মাদকাসক্ত হওয়ার পর গত ৭-৮ বছর আগে একবার নিজেদের বাড়িতেই আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় সেই আগুন নেভানো হয়। এরপর গত ৫ বছর আগে একবার কেরানীগঞ্জের ওই এলাকার একটি বড় গাছে ওঠে গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্থানীয়রা দেখে তাকে গাছ থেকে নিচে নামান। 

তিনি জানান, আবু সালেহ মাঝে মধ্যেই উদ্ভট কথাবার্তা বলতেন। বিশেষ করে যারা মারা গেছেন, তারা নাকি তাকে ডাকাডাকি করেন বলেও মাঝেমধ্যেই বলতেন পরিবারের সদস্যদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, “মৃত্যুর কারণ জানতে লাশের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পুলিশ অবগত করবে।”

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, “পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। পোস্ট মর্টেম আসতে ৫-৭ দিন লাগতে পারে।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ র

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যায়বিচার হয়েছে, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ: সালাহউদ্দিন আহমদ

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় যে রায় হয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই বিচার, এই রায় সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ।

আজ সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আসামিদের অপরাধের তুলনায় এই সাজা যথেষ্ট কম। কিন্তু আইনে এর ওপরে কোনো সাজা নাই।

আজ বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই প্রতিক্রিয়া জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সোমবার এই রায় ঘোষণা করেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার যত শক্তিশালী হোক, যত দীর্ঘদিনই রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে পরিচালিত করুক, ক্ষমতা ভোগ করুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় তাঁদের দাঁড়াতেই হবে।

আরও যেসব মামলা আছে, সেই মামলাগুলোতেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বিচার অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়। কিন্তু এটা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, সামনের দিনের জন্য একটা উদাহরণ। ভবিষ্যতে যাতে এই রাষ্ট্রে কেউ আর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম না করতে পারে, ফ্যাসিস্ট না হয়ে উঠতে পারে, একনায়কতন্ত্র যাতে প্রতিষ্ঠা না হয়, তার একটি উদাহরণ। এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা শিক্ষা। শুধু অতীতের জন্য বিচার নয়, এটা মনে রাখতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ