Samakal:
2025-05-01@00:06:10 GMT

যারা কোনোদিন মন থেকে মুছবে না

Published: 3rd, February 2025 GMT

যারা কোনোদিন মন থেকে মুছবে না

বাংলাদেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি দ্রোহের উন্মেষকাল। আমাদের ভাষিক বোধ ও সৃজনশীলতার সহস্রধারা ভাষা আন্দোলনের বুক চিরে উৎসারিত। ভাষা ও ভাষার সংগ্রামের স্মারক তিনটি গ্রন্থের ওপর সুহৃদদের লেখায়


মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার ঋণ কখনও শোধ করা যায় না। জন্মের পর মাতৃভূমির আলো-বাতাসে মায়ের শেখানো বুলি আওড়িয়ে বেড়ে উঠি আমরা। জন্মগত এই অধিকার কখনও কখনও শাসকগোষ্ঠী কেড়ে নিতে চায়; কেড়ে নিতে চায় ভাষার অধিকার। এমনিভাবে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কেড়ে নিতে চেয়েছিল মাকে– মা বলে ডাকার অধিকার। প্রবল প্রতিবাদ এবং প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার। মিছিলে, গানে এবং কবিতায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল রাজপথে। ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ আব্দুল লতিফের লেখা গানটি বায়ান্নর আগে রচিত হলেও ভাষা আন্দোলনে এর গুরুত্ব অনেক। ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি.

..’। 
বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত গানটিতে বাংলা ভাষা আন্দোলনের আবহ তুলে ধরেন। অমর কথামালাসংবলিত গানটি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর প্রভাতফেরিতে গাওয়া হয়। গাফ্ফার চৌধুরীর এ গানটি ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে ছাপা হয়। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এ সংখ্যাটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রথম সংখ্যায় একুশের প্রবন্ধ, একুশের কবিতা, একুশের গল্প, একুশের নকশা, একুশের গান, একুশের ইতিহাস– শিরোনামে ৬টি বিভাগে মোট ২২ জন লেখকের লেখা ছাপা হয়। এ ছাড়া ছিল ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামে ৪ পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র প্রথম সংখ্যার পুরো বিবরণ এ রকম– সম্পাদকীয়: ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রবন্ধ: আলী আশরাফ– সকল ভাষার সমান মর্যাদা। একুশের কবিতা: শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আবদুল গণি হাজারী, ফজলে লোহানী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আনিস চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, জামালুদ্দিন, আতাউর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক ও হাসান হাফিজুর রহমান। একুশের গল্প: শওকত ওসমান– মৌন নয়, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ– হাসি, আনিসুজ্জামান– দৃষ্টি, সিরাজুল ইসলাম– পলিমাটি, আতোয়ার রহমান–অগ্নিবাক। একুশের নকশা: মুর্তজা বশীর– একটি বেওয়ারিশ ডায়েরির কয়েকটি পাতা, সালেহ আহমেদ– অমর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত স্বাক্ষর। একুশের গান: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও তোফাজ্জল হোসেন। একুশের ইতিহাস: কবিরউদ্দিন আহমদ।
১৯৫৩ সালে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামের সংকলনটি সম্পাদনার মধ্য দিয়ে হাসান হাফিজুর রহমান একুশের সংকলন প্রকাশের যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিলেন, দ্বিধাহীনভাবে বলা যেতে পারে, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিই’ আজ পর্যন্ত প্রকাশিত একুশের সংকলনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনটি দখল করে আছে।
ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরে থাকা ছাত্রের মাথার খুলি উড়ে যাওয়া দেখে যেমন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচনা করেছিলেন ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি...’, তেমনি কবি হাসান হাফিজুর রহমান লিখেছেন– ‘আর এবার আমরা হারিয়েছি এমন কয়েকজনকে যাঁরা কোনদিন মন থেকে মুছবে না,/কোনদিন কাউকে শান্ত হতে দিবে না।’ তিনি শুধু লেখেননি, একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের গুণী কবি, সাহিত্যিক এবং লেখকদের লেখায় সংকলন প্রকাশ করে আমাদের ভাষা আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছেন, একুশের মর্যাদাকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে। একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। বিশ্বের কোনো দেশই ভাষার জন্য আন্দোলন করে জীবন দেয়নি। একমাত্র বাঙালি জাতিই এমন গৌরবগাথা রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের অংশীদার। হাসান হাফিজুর রহমানের কবিতার লাইনের মতো বলতে চাই– ‘যারা কোন দিন মন থেকে মুছবে না’। এ দিবস এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্বের বিপন্নপ্রায় ভাষাভাষীর মাতৃভাষা রক্ষার দাবি নিয়ে দিবসটি আমাদের সচেতন হতে প্রেরণা জোগায়। 
সহসভাপতি সুহৃদ সমাবেশ, ফরিদপুর

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ স ন হ ফ জ র রহম ন এক শ র গ আবদ ল গ

এছাড়াও পড়ুন:

গান নিয়েই আমার সব ভাবনা

কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–

‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী? 

শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। 

দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?

সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি। 

প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য? 

হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।

প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন? 

আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি। 

গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে? 

সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল
  • নির্মাতার ঘোষণার অপেক্ষায় চিত্রাঙ্গদা
  • শিশুর মাথা ঘামে কেন
  • কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া
  • গান নিয়েই আমার সব ভাবনা