Samakal:
2025-07-31@04:06:47 GMT

যারা কোনোদিন মন থেকে মুছবে না

Published: 3rd, February 2025 GMT

যারা কোনোদিন মন থেকে মুছবে না

বাংলাদেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি দ্রোহের উন্মেষকাল। আমাদের ভাষিক বোধ ও সৃজনশীলতার সহস্রধারা ভাষা আন্দোলনের বুক চিরে উৎসারিত। ভাষা ও ভাষার সংগ্রামের স্মারক তিনটি গ্রন্থের ওপর সুহৃদদের লেখায়


মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার ঋণ কখনও শোধ করা যায় না। জন্মের পর মাতৃভূমির আলো-বাতাসে মায়ের শেখানো বুলি আওড়িয়ে বেড়ে উঠি আমরা। জন্মগত এই অধিকার কখনও কখনও শাসকগোষ্ঠী কেড়ে নিতে চায়; কেড়ে নিতে চায় ভাষার অধিকার। এমনিভাবে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কেড়ে নিতে চেয়েছিল মাকে– মা বলে ডাকার অধিকার। প্রবল প্রতিবাদ এবং প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার। মিছিলে, গানে এবং কবিতায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল রাজপথে। ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ আব্দুল লতিফের লেখা গানটি বায়ান্নর আগে রচিত হলেও ভাষা আন্দোলনে এর গুরুত্ব অনেক। ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি.

..’। 
বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত গানটিতে বাংলা ভাষা আন্দোলনের আবহ তুলে ধরেন। অমর কথামালাসংবলিত গানটি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর প্রভাতফেরিতে গাওয়া হয়। গাফ্ফার চৌধুরীর এ গানটি ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে ছাপা হয়। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এ সংখ্যাটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রথম সংখ্যায় একুশের প্রবন্ধ, একুশের কবিতা, একুশের গল্প, একুশের নকশা, একুশের গান, একুশের ইতিহাস– শিরোনামে ৬টি বিভাগে মোট ২২ জন লেখকের লেখা ছাপা হয়। এ ছাড়া ছিল ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামে ৪ পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র প্রথম সংখ্যার পুরো বিবরণ এ রকম– সম্পাদকীয়: ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রবন্ধ: আলী আশরাফ– সকল ভাষার সমান মর্যাদা। একুশের কবিতা: শামসুর রাহমান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আবদুল গণি হাজারী, ফজলে লোহানী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আনিস চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, জামালুদ্দিন, আতাউর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক ও হাসান হাফিজুর রহমান। একুশের গল্প: শওকত ওসমান– মৌন নয়, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ– হাসি, আনিসুজ্জামান– দৃষ্টি, সিরাজুল ইসলাম– পলিমাটি, আতোয়ার রহমান–অগ্নিবাক। একুশের নকশা: মুর্তজা বশীর– একটি বেওয়ারিশ ডায়েরির কয়েকটি পাতা, সালেহ আহমেদ– অমর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত স্বাক্ষর। একুশের গান: আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও তোফাজ্জল হোসেন। একুশের ইতিহাস: কবিরউদ্দিন আহমদ।
১৯৫৩ সালে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নামের সংকলনটি সম্পাদনার মধ্য দিয়ে হাসান হাফিজুর রহমান একুশের সংকলন প্রকাশের যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিলেন, দ্বিধাহীনভাবে বলা যেতে পারে, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিই’ আজ পর্যন্ত প্রকাশিত একুশের সংকলনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনটি দখল করে আছে।
ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরে থাকা ছাত্রের মাথার খুলি উড়ে যাওয়া দেখে যেমন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচনা করেছিলেন ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি...’, তেমনি কবি হাসান হাফিজুর রহমান লিখেছেন– ‘আর এবার আমরা হারিয়েছি এমন কয়েকজনকে যাঁরা কোনদিন মন থেকে মুছবে না,/কোনদিন কাউকে শান্ত হতে দিবে না।’ তিনি শুধু লেখেননি, একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের গুণী কবি, সাহিত্যিক এবং লেখকদের লেখায় সংকলন প্রকাশ করে আমাদের ভাষা আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছেন, একুশের মর্যাদাকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বদরবারে। একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। বিশ্বের কোনো দেশই ভাষার জন্য আন্দোলন করে জীবন দেয়নি। একমাত্র বাঙালি জাতিই এমন গৌরবগাথা রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের অংশীদার। হাসান হাফিজুর রহমানের কবিতার লাইনের মতো বলতে চাই– ‘যারা কোন দিন মন থেকে মুছবে না’। এ দিবস এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্বের বিপন্নপ্রায় ভাষাভাষীর মাতৃভাষা রক্ষার দাবি নিয়ে দিবসটি আমাদের সচেতন হতে প্রেরণা জোগায়। 
সহসভাপতি সুহৃদ সমাবেশ, ফরিদপুর

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ স ন হ ফ জ র রহম ন এক শ র গ আবদ ল গ

এছাড়াও পড়ুন:

জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ

কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।

এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।

স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।

জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ