দুদিনব্যাপী জাতীয় গণিত উৎসব শুরু
Published: 7th, February 2025 GMT
ঢাকায় আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় গণিত উৎসব ২০২৫ ও ২৩ তম বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড। দুদিনব্যাপী এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
আজ সকালে রাজধানীর সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল প্রাঙ্গণে ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’—এই স্লোগান নিয়ে এই উৎসবের ২৩ তম পর্বের উদ্বোধন হয়।
উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উদ্বোধনী পর্বে উত্তোলন করা হয়।
আয়োজনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও পেরেরা। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি সেই স্বপ্নের মানুষ হয়ে নিজের ও দেশের জন্য কাজ করবে।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে এসেছে, তার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। সহসভাপতি
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো.
এই দিনের জন্য সবাই সারা বছর অপেক্ষা করে বলে উল্লেখ করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, এই শিক্ষার্থীদের মধ্য দিয়েই দেশের স্বপ্ন পূরণ হবে। সবার একটাই লক্ষ্য, দেশের বিজয়।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এই উৎসবের আয়োজন করেছে।
আয়োজকেরা জানান, চলতি বছরের জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ৬৬ তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেওয়ার জন্য এই উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশ দল নির্বাচন করা হবে।
এবার সারা দেশ থেকে ৭৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছে। আর এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থী জাতীয় পর্বে অংশ নিচ্ছে।
উদ্বোধনী আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি আব্দুল হাকিম খান, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং প্রথম আলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া শরমিন খালেক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য ও টালি খাতার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত উল্লাহ্ খান প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণ ত ব ভ গ র
এছাড়াও পড়ুন:
ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে; বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকায়। হাওরের পুবালি বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটেন কৃষক। অন্যদিকে চলে মাড়াই। কিষানিরা মনের আনন্দে মাড়াই করা ধান শুকান। বিকেলের শান্ত রোদে শুকনো ধান মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ধান কাটা উৎসবে শুধু কিষান-কিষানি নন, সব বয়সী মানুষই যোগ দেন। হাওরে এটি এক অনন্য উৎসব। চলে বৈশাখজুড়ে। এ উৎসবের কাছে কাঠফাটা রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যেন তুচ্ছ। ধানের সবুজ শীষের রং যখন লালচে হতে শুরু করে, তখন কৃষকের মনের রং বদলায়। চোখ-মুখ খুশিতে ভরে ওঠে। লোকমুখে প্রচলিত– বছরের প্রথম দিনে ঘরে ফসল তুললে সারাবছর অভাব থাকে না। তাই তো হাওরে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান তলিয়ে যায়। যাতে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
আনন্দ-বেদনার এ বৈশাখে প্রকৃতি নতুন বিন্যাসে সাজে। বসন্তে প্রকৃতিতে যে রং লাগে, তা পূর্ণতা পায় বৈশাখে। অসীম আকাশে নানা বর্ণের মেঘের আনাগোনা আমাদের মনে সঞ্চারিত করে সঞ্জীবনী মন্ত্র। চোখে প্রশান্তি এনে দেয় সর্ববিস্তৃত প্রকৃতি। এ সময় চারদিকে আগুন ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, জারুল, বাগানবিলাসসহ প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের। কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে উৎসব আমেজে। বৈচিত্র্যময় সমারোহে বসে বৈশাখী মেলা। এতে লোকগান, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি আকর্ষণ করে সবাইকে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রুদ্রমূর্তির বৈশাখে প্রকৃতিতে থাকে ভিন্ন চেহারা। কালবৈশাখী আসে তীব্রবেগে। উড়িয়ে নিয়ে যায় অভাগীর জীর্ণ কুটির। উপকূলে বিপদ হয়ে আসে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গ্রীষ্মের তাপদাহে তটস্থ হয় মানুষ। এ সময় আবহমান গ্রামবাংলার ছোট নদী, খালবিল, ডোবা শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পড়েন বিপাকে। আবার এ সময়ে প্রকৃতি সাজে নতুন করে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি পেতে আশ্রয় নেয় সবুজ প্রকৃতির শীতল ছায়ায়। একদিকে বৈশাখ খরতাপ ছড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রশান্তির শীতল ছোঁয়া দেয় পরম আনন্দ। বৈশাখ আসে নতুন করে সব গড়তে। শীর্ণ-জীর্ণতায় সবুজ সতেজ করে তুলতে। ‘নূতনের কেতন উড়ে’ কালবৈশাখীতে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে শুরু হয় নবজীবনের হিসাবনিকাশ। স্বপ্নমুখর বৈশাখের রং তাই একটু বেশিই উজ্জ্বল। প্রকৃতি সজীব সতেজ আর মানুষেরা প্রাণচঞ্চল।
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়