বন বিভাগ কার্যালয় ও ব্যারাকে তাণ্ডব: যুবদলের ২ নেতা বহিষ্কার
Published: 8th, February 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়, বিট কর্মকর্তার অফিস ও বনকর্মীদের ব্যারাকে প্রকাশ্যে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় যুবদলের ২ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যুবদলের ২ নেতাকে সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়া যুবদলের নেতারা হলেন- গাজীপুর জেলা যুবদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও শ্রীপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মশিউর রহমান লিটন।
বহিষ্কৃত যুবদলের ওই দুই নেতার নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকার রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাণ্ডব চালায় ভূমিদস্যুরা। ওই দুই অফিসের চেয়ার-টেবিল, আলমারির কাচ, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জানালার কাচসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। ভেঙে ফেলা হয় বনকর্মীদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও। তাদের হামলায় আহত হন আক্তার হোসেন নামে বন বিভাগের এক ব্যারাক চৌকিদার।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম ও মশিউর রহমান লিটনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল যুবক হঠাৎ করেই রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র। দফায় দফায় তাণ্ডবের সময় বনকর্মীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করে নিজেদেরকে রক্ষা করেন। পুলিশ ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আড়াইশ গজ দূরে রাজেন্দ্রপুর বিট কর্মকর্তার কার্যালয়। এই দুই অফিসের পাশেই বনকর্মীদের বসবাসের ব্যারাক। প্রতিটিতেই হামলা চালায় তারা। এ ঘটনার পর শুক্রবার যুবদলের ওই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, এ ঘটনায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে বনবিভাগ একটি মামলা করেছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি রক্ষা করুন
দেশের বনাঞ্চলগুলো হুমকির মুখে। একসময় বনাঞ্চলগুলোর যে পরিবেশ–ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সম্পদ ছিল, তার অনেকটাই হারিয়ে গেছে। বনাঞ্চলগুলোর অনেক এলাকা দখল হয়ে গেছে। সরকারি–বেসরকারি প্রকল্প বা স্থাপনায় গ্রাস করেছে অনেক এলাকা। দেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোর একটির অবস্থান ময়মনসিংহের ভালুকায়। বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় বনাঞ্চলটি নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পাঁচ দিনের ব্যবধানে গত সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির বিভিন্ন অংশে আগুন লাগে। বনকর্মীরা নিজেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস গিয়ে রাত সোয়া নয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বনে আগুন লাগে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে আগুনে প্রায় তিন একর বনভূমি পুড়ে যায়। আগুনে বনাঞ্চলের গজারি ও সেগুনগাছের সুরক্ষায় লাগানো কাঁটাযুক্ত বেতবাগান পুড়ে গেছে। এতে হুমকিতে পড়েছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
স্থানীয়দের বক্তব্য, বন পুড়লে সরকারের ক্ষতি; কিন্তু যারা গাছ কাটে, তাদের জন্য লাভ। বনটি একসময় অনেক বড় থাকলেও দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। আগে গাছপালার কারণে বনে ঢোকা না গেলেও এখন বনের ভেতর সবই দেখা যায়। তবে বনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আগুন লেগেছে বলে মনে করেন না ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তারা। তঁারা মনে করেন, কারও দুষ্টুমির কারণে বা অসতর্কতার কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে। বন থেকে গাছ কেটে নেওয়ার পরিবেশ নেই। বনকর্মীরা জানান, বনের আশপাশে কোনো শিল্পকারখানা ও বাড়িঘর নেই। প্রাকৃতিক এই বনের ভেতরে মাঝেমধ্যে নেশাজাতীয় ড্যান্ডি গামের উপকরণ পাওয়া যায়। নেশা করতে এসে কেউ আগুন লাগাতে পারে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। আগুন লাগার ঘটনাগুলো সন্ধ্যার দিকেই ঘটে।
যদিও বনে ঢুকলে দেখা যায় গাছের গোড়া কেটে ফেলার অনেক চিহ্ন। সে ব্যাপারে বন কর্মকর্তারা কিছু জানাতে পারেননি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে স্থানীয়দের ভাষ্যকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের ভালুকা উপজেলার সদস্যসচিব কামরুল হাসান বলেন, বনে আগুন এমনিতেই লাগে না। আগুন লাগানো হয়। বনে আগুন দেওয়া হয় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত গাছ কেটে নেওয়া এবং দ্বিতীয়ত বনের জমি দখল করা। বনে আগুন লাগানোর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি বনের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বনাঞ্চলে দুর্ঘটনাবশত আগুন লাগার ঘটনা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগার ঘটনা সন্দেহের উদ্রেক করে। আমরা আশা করব এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। বনাঞ্চলটি সুরক্ষায় কোনো অবহেলা কাম্য নয়। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন গাছচোর বা মাদক সেবনকারীদের দৌরাত্ম্য থামাতেও তৎপর থাকতে হবে।