আ.লীগ-ছাত্রলীগের নামে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না: নাহিদ ইসলাম
Published: 10th, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নামে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না, এটিই শহীদদের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা আইনের ভিত্তিতে বিচার নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। আইনের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ এই মতাদর্শ ও এই নামে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না।
জুলাইয়ে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা এবং সম্মাননা প্রদান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে শিক্ষার্থীদের বৈধ নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালোভাবে এসেছে।
আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ‘হিরোস অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ শীর্ষক সভায় তাদেরকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, মাহিন সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়। ফলে সব স্বৈরশাসকরাই সব সময় চেষ্টা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দমন করে রাখতে। স্বৈরশাসকের সময়ে বিগত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে, ক্যাম্পাসে নির্যাতন, নিপীড়ন ও ভয়ের সংস্কৃতি চালুর মধ্য দিয়ে আমাদের সকল কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ স্বৈরশাসকরা ভালো করেই জানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে গেলে সমগ্র জাতি দাঁড়িয়ে যাবে এবং পরিবর্তন আসন্ন হবে।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা পরিবর্তনের যে স্বাদ এখন পাচ্ছি তা যদি অব্যাহত থাকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি আত্মমর্যাদা নিয়ে দাঁড়াতে পারে; মেধার স্বাক্ষর যদি অব্যাহত রাখতে পারে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও একাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত থাকে তাহলে এই জাতির পরিবর্তন হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের এখন প্রয়োজন এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। এই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে রক্ষা করা। আমাদের লড়াই এখনও শেষ হয়নাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা আস্ফালন দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা বলতে চাই, জুলাই মাসকে ভুলে যাবেন না। জুলাইয়ের চেতনা শেষ হয়ে যায়নি। যদি বিন্দু পরিমাণ আস্ফালনের চেষ্টা করা হয় আমরা দ্বিগুণ শক্তিতে প্রতিহত করব আপনাদেরকে। জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
বক্তব্য দানকালে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের নেতাদের ছেলেরা বিদেশে পড়ে আবার নেতা হয়ে দেশে ফিরে আসে। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পড়াশোনা করে তারা নেতার ছেলের পেছনে কামলা খেটে একাডেমিক জীবন শেষ করে। আমরা চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদার পার্টিকে সার্ভ করার জন্য ছাত্রসংগঠন তৈরি হোক। মাদার পার্টিকে সার্ভ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু কেন্দ্রিক নির্বাচন চলবে। এখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী দলের না হয়ে শিক্ষার্থীদের নেতা হয়ে উঠুক।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলের নারী শিক্ষার্থীরা যখন জেগে উঠেছিল তখন খুনি হাসিনার ভীত নেড়ে উঠেছিল। আমাদের হল ছাড়ার পরে কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই-বোন রাস্তায় নেমেছিল তখন এই আন্দোলন জ্বলে উঠে। এরপর মাদরাসা শিক্ষার্থী, সাধারণ ছাত্র-জনতার বিপুল অংশগ্রহণে আমরা আজকের এই দেশ পেয়েছি। তিনি বলেন, ডেভিল কার্যক্রমে যদি বর্তমানের কোনো রাজনৈতিক দলের কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাকেও ডেভিল হান্টের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে পাঁচটি দাবি জানান আবু বাকের মজুমদার। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে প্রাতিষ্ঠানিক এবং রাষ্ট্রীয় বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরও দাবি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের অগ্রগামী ভূমিকা ও সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে ভিসি চত্বরে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ, কার্জন হলের শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের স্মরণীয় করতে জুলাই প্রতিরোধ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা, হলপাড়ার শিক্ষার্থীদের অবদান স্বীকৃত করতে শিকল মুক্তির স্তম্ভ নির্মাণ করা; শিক্ষার্থীদের বৈধ নেতৃত্ব বাছাই করতে অবিলম্বে ডাকসু নিশ্চিত করা।
আব্দুল কাদের বলেন, বিগত সময়ের প্রশাসন ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। যখন যে সরকার আসে তখন সেই সরকারের ছাত্রসংগঠন হলগুলো দখল করে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালায়। যেকোনো দুর্বিপাকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য হল বানানো হয় অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী, তাদের জন্য মাত্র পাঁচটি হল। আমাদের এতো এতো ভাই-বোন যে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, তারা চায় দাসত্বের এই রাজনীতি আর ফিরে না আসুক।
নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ডাকসুর জন্য আমরা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। প্রতিদিন নানা পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে। জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে নানা কাজ চলছে। অনেকগুলো গবেষণার কাজ হচ্ছে, অ্যাকাডেমিক পারপেকটিভে অভ্যুত্থানকে ফুটিয়ে তোলার কাজ হচ্ছে।
সভায় আরও কথা বলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ উপদ ষ ট ন হ দ ইসল ম ন হ দ ইসল ম র জন য র জন ত আম দ র ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি।
সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।
ঢাকা/এএএম/ইভা