এতিমখানার জীবন যেভাবে আমাকে বদলে দিল
Published: 22nd, March 2025 GMT
২০০৮ সালের ৮ মে আব্বা মারা গেলেন। আমার দুনিয়াটা একেবারে অন্য রকম হয়ে গেল। পরিবারের সঙ্গে গাজীপুর ছেড়ে কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেন আব্বা। পরিবারসহ সেখানেই থাকতাম। আমরা ছয় ভাইবোন আর আম্মা-আব্বা মিলে সুখের সংসার। কোনো অভাব ছিল না। যখন যা চাইতাম, সব আবদারই মেটাতেন আব্বা। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী—সবার মধ্যমণি ছিলাম আমরা।
আব্বার মৃত্যুর পর সবকিছু বদলে গেল। বড় আপু তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ে, বড় ভাইটা নবম, আমি অষ্টম, ছোট ভাই পঞ্চম আর মেজ বোন প্রথম শ্রেণি। আর সবার ছোট বোনের তখনো স্কুলে ভর্তির সময় হয়নি। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটাকে হারিয়ে আমার গৃহিণী আম্মা পড়ে গেলেন গভীর চিন্তায়।
তারপরও আম্মা সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর সব সন্তানকে পড়াশোনা করাবেন। তাঁর দৃঢ়তা দেখে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে এগিয়ে এলেন আব্বার শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ঢাকার তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন আব্বার তেমনই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তাঁর মাধ্যমে আমার ঠিকানা হলো তা’মীরুল মিল্লাত এতিমখানায়।
আব্বার মাদ্রাসায় একটা এতিমখানা ছিল। তিনি নিজেই দেখভাল করতেন। এতিমখানার ছাত্রদের কখনো আলাদা চোখে দেখিনি। ছোটবেলায় আমার খেলার সাথি ছিল তারা। আমি নিজেই এখন এতিমখানার ছাত্র। এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। প্রতি কোরবানির ঈদে ছাত্রদের দিয়ে এতিমখানার জন্য পশুর চামড়া সংগ্রহ করানো হয়। সবাই হাসিমুখেই কাজটা করে। কিন্তু প্রথমবার আমার জন্য এটা সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে গেল।
তাহসিন আহমেদ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।