কারাগারের সেলে গরমে হাঁসফাঁস। আবদার করেছেন এয়ারকুলার ও চার্জার ফ্যানের। দু’দিন পর পর মোবাইল ফোনে স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে চান। তিনবেলা পরিবারের রান্না খাবারে আগ্রহী। ঘুমানোর জন্য শিমুল তুলার নরম বিছানা ব্যবহারের অনুমতি চান। প্রিজনভ্যানে আদালতে যেতে অনীহা। মাইক্রোবাস দেওয়ার জন্য বলেছেন কেউ কেউ।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, শিল্পপতি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমন সব ‘অদ্ভুত’ আবদার করছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের ভাষ্য, চাইলেও কারাবিধি মেনে যার যতটুকু সুবিধা প্রাপ্য, তা দিচ্ছেন।

বিভিন্ন মামলায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, ফজলে করিম চৌধুরী, আবদুর রহমান বদি, একরামুল করিম চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, শিল্পপতি মো.

মহসিন, ব্যবসায়ী জহির আহমেদ রতন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) সাইফুল ইসলাম, এএসপি রফিকুল ইসলামসহ ডজনখানেক ভিআইপি বন্দি আছেন।
তাদের মধ্যে এম এ লতিফ, ফজলে করিম, নদভী, এএসপি রফিকুলসহ ১০ জন সেলে আছেন। তারা ডিভিশন পেলেও পরে বাতিল হয়েছে। বর্তমানে ডিভিশনে আছেন সিএমপির সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম। আট হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি মামলার আসামি জহির আহমেদ রতন আছেন যমুনা ভবনের একটি বিশেষ ওয়ার্ডে। সাদ মুছা গ্রুপের মো. মহসিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে অনেক দিন চিকিৎসা নেন। কারাগারে ফেরত আসার পর কারা হাসপাতালে কিছুদিন থাকার পর এখন ওয়ার্ডে আছেন। রতন ও মহসিনের ওয়ার্ডে দু-তিনজন সেবক ছাড়া তেমন কোনো আসামি নেই। অন্য সাধারণ ওয়ার্ডে বন্দি বেড়ে যাওয়ায় থাকতে হচ্ছে ইলিশ ফাইল করে।
কারা সূত্র জানায়, ফজলে করিম চৌধুরী, আবদুর রহমান বদি, একরামুল করিম চৌধুরী ও মোহাম্মদ আলী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন কারাগারে আনা-নেওয়া এবং আদালতে হাজিরার জন্য প্রিজনভ্যানের পরিবর্তনে প্রাইভেট মাইক্রোবাস দিতে কর্তৃপক্ষকে বহুবার বলেছেন।

লতিফ, নদভী, ফজলে করিম, বদি ডিভিশন না পাওয়ায় সাধারণ হাজতির মতো থাকছেন। তারা প্রায়ই বাড়তি আবদার রাখছেন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। এসব আসামি বাসার রান্না করা খাবার খেতে চান। অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকতে চান। এম এ লতিফ ও ফজলে করিম বেশি আবদার করেন গরম পানির।
সূত্রের দাবি, লতিফ ও ফজলে করিম কীভাবে যেন সেলে একটি মোবাইল ফোন নিতে সক্ষম হন। সেটি থেকে স্বজনের সঙ্গে কথা বলতেন। কে বেশি কথা বললেন, তা নিয়ে দু’জন একবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে গত জানুয়ারি থেকে দু’জনের কারাগারের সরকারি মোবাইল থেকেও স্বজনের সঙ্গে কথা বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। সেল ও ওয়ার্ডের মেঝেতে ঘুমানোর জন্য শিমুল তুলার নরম বিছানা, এয়ারকুলার, চার্জার টেবিল ফ্যান ও পানি গরম করার জন্য হিটার ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি চেয়েছেন লতিফ, ফজলে করিম, নদভী ও বদি। ভিআইপি বন্দিদের প্রায় প্রত্যেকে কাপড় ধোয়া, খাবার আনা-নেওয়া, দৈনিক ব্যবহার করা থালাবাসন পরিষ্কার-পরিছন্ন করার জন্য একাধিক সেবকের জন্য কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘একেক বন্দির একেক চাহিদা থাকে। কিন্তু আইনের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।’ জেলার মোহাম্মদ মাসুদ হাসান জুয়েল বলেন, ‘সরকার অনুমোদিত মোবাইলে বন্দিরা পরিবার ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। সরকারের নির্দেশে গত জানুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিসহ অনেক আসামির এ সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ম চ ধ র ম হ ম মদ র জন য আবদ র

এছাড়াও পড়ুন:

জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ

কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।

এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।

তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।

স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।

জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ