স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই রাজধানী ছেড়েছেন। ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। বিভিন্ন কারণে যারা ঢাকা ছাড়তে পারেননি, তাদের অনেকেই পরিবার নিয়ে বের হয়েছেন ঘুরতে। পরিবারের সদস্যদের আনন্দ দিতে ছুটছেন বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিল। প্রতি বছর ঈদসহ বিভিন্ন ছুটির দিনে ঢাকার নবাবদের এ আবাসিক এলাকা দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। তবে, এবার আহসান মঞ্জিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মন খারাপ। সরকারি ছুটিতে জাদুঘর বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারছেন না। 

মঙ্গলবার সকাল থেকে অনেকেই ভিড় করেন এখানে। কিন্তু, জাদুঘরের গেটে ঝোলানো নোটিশ দেখে মন খারাপ করে ফিরে গেছেন। অনেকে গেছেন অন্য বিনোদনকেন্দ্রে।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দুপুরে আহসান মঞ্জিলের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, রিকশা ও অটোরিকশায় চেপে অথবা পরিবারের সদস্যদের হাত ধরে অনেকে সেখানে এসেছেন। ধীরে ধীরে সেখানে ভিড় জমে যায়। তবে, গেটে ঝোলানো নোটিশ দেখে তাদের মন খারাপ হয়ে যায়।

মালিবাগ থেকে আসা আবুল খায়ের বলেন, “পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলাম। এসে দেখি, জাদুঘর বন্ধ। মন খারাপ হয়ে গেল। এখন বাচ্চাদের নিয়ে অন্য কোথাও ঘুরতে যাব।”

এ সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে বলে, “আসার আগে গুগলে দেখে আসছি। সরকারি ছুটির দিনে যে বন্ধ থাকবে, এটা লেখা নেই। আগে জানলে তো আর কষ্ট করে আসতাম না।”

মীর হাজীরবাগ থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, “বাসা কাছাকাছি। ভাবলাম, ঘুরে আসি। এসে তো দেখি বন্ধ। এখন শাহবাগ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাব।”

এ সময় কথা বলার জন্য জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি।

গেটের সামনে ঝোলানো একটা নোটিশ দেখা যায়। সেখানে লেখা, ‘পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিন আহসান মঞ্জিল যাদুঘরের গ্যালারি দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ঈদ উপলক্ষে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনামূল্যে এবং সাধারণ দর্শনার্থীরা যথারীতি টিকিটের বিনিময়ে গ্যালারি পরিদর্শন করতে পারবেন। সরকারি ছুটি থাকায় ১, ২ ও ৩ এপ্রিল যাদুঘর বন্ধ থাকবে। ৪ এপ্রিল থেকে যথানিয়মে যাদুঘর খোলা থাকবে।’

ঢাকা/মামুন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মন খ র প জ দ ঘর পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ