যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানছে না রাশিয়া
Published: 2nd, April 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধের পেছনে যেসব ‘মূল কারণ’ রয়েছে বলে মস্কো মনে করে, সেগুলোর মীমাংসা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রাশিয়া মেনে নিতে পারে না বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিসংক্রান্ত সাময়িকীতে মঙ্গলবার তাঁর দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে রিয়াবকভের এই অভিমত উঠে এসেছে।
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত মডেল ও সমাধানগুলো আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি; কিন্তু বর্তমানে সেগুলো যেভাবে আছে, সেভাবে আমরা মেনে নিতে পারি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের সমঝোতা আলোচনায় এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে মতৈক্য হয়। তবে তা নাকচ করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত বলে অভিমত দিয়েছেন তিনি।
গত রোববার ট্রাম্প এনবিসি নিউজকে বলেন, পুতিন সমঝোতা আলোচনায় জেলেনস্কির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এবং ইউক্রেনে নতুন নেতৃত্বের আহ্বান জানানোয় তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের ওপর ‘রেগে আছেন’। পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের আরও বলেছেন, রাশিয়ার নেতা একটি শান্তিচুক্তির জন্য তাঁর দিকের করণীয়টা করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।
এর পরদিন সোমবার ক্রেমলিন বলেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় রাজি আছেন।
তবে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াবকভ সতর্ক করেছেন, ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির পরে এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানার জন্য ট্রাম্প বা ইউক্রেন কারও পক্ষ থেকে কোনো ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে না মস্কো। তিনি বলেছেন, ‘এতে (যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে) আজকে আমাদের প্রধান চাওয়াগুলো স্থানই পায়নি। এই সংঘাতের মূল কারণগুলো সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর নিরসনে এ বিষয়গুলো জরুরি।’
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা
বর্ণাঢ্য আয়োজন আর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে মণিপুরি অধ্যূষিত জনপদ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে এ উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। কমলগঞ্জের মাধবপুর শিব বাজারের জোড়ামণ্ডপ এলাকায় রাখাল নৃত্য ও রাতে রাসনৃত্য এ উৎসবের অন্যতম মূল আকর্ষণ।
পাশাপাশি আদমপুরে মৈতৈই মণিপুরি সম্প্রদায় মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে এ উৎসব উদযাপন করছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোরে শেষ হবে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। উৎসব উপলক্ষে উভয়স্থানে মেলা বসেছে। রাস উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হবে কমলগঞ্জের মণিপুরি জনপদ।
এ উপলক্ষে উভয় জায়গায় বসবে বিরাট মেলা। রাসলীলা উপলক্ষে এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় সাজ সাজ রব বিরাজ করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি মহারাসলীলা উপজেলার মাধবপুর শিববাজার জোড়া মণ্ডপে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮৩তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হবে এবার।
কমলগঞ্জের মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। আগামী বুধবার দুপুরে উভয় স্থানে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য এবং রাতে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও রাসনৃত্য।
উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। এছাড়া মণিপুরি রাস উৎসব উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি মিলনায়তনে মণিপুরি থিয়েটারের আয়োজনে ‘নুংশিপি’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
অপরদিকে উৎসবস্থল আদমপুরেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরি মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।
আলাপকালে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক (অ: দা:) প্রভাস চন্দ্র সিংহ জানান, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন।
মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালে ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখালনৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ।
মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে কৃষ্ণবন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জন গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়।
একটি রজনীকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়া সমুহে চলে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রং ছড়িয়ে মন্ডপগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে।
রাসের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন।
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮৩তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
রাসলীলা মণিপুরিদের আয়োজন হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির জানান, নির্বিঘ্নে মণিপুরি মহারাসলীলা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসব নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাবের টহলও থাকবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, ঐতিহ্যবাসী মণিপুরি রাসোৎসব উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা/আজিজ/এস