পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের সমারোহ। সারি সারি সেগুন গাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর। একেকটির বয়স আনুমানিক ৩৫-৩৬ বছর। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এ বাগান এখন অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় স্থান। দর্শনার্থী সেখানে ছুটে যান; ভালোবাসেন সবুজের সমারোহে ঘুরতে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতাল ও এর আশপাশের ন্যাড়া পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ বনায়ন। সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের একটি অংশে সড়কের পাশ ঘেঁষে সেগুন গাছের দীর্ঘ সারি। অপর অংশ হাসপাতালের পাশের উঁচু পাহাড়ে। দুটি স্থানে সেগুন গাছের সংখ্যা আনুমানিক ছয় হাজারের মতো।
এই সেগুন বাগান এখন শতকোটি টাকা মূল্যের। এটি গড়ে তুলতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তেমন অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। পরিকল্পিতভাবে সেগুন গাছের বিচি ও চারা পাহাড়ে রোপণ করা হয়েছিল। তেমন পরিচর্যারও প্রয়োজন হয়নি। এই বনায়ন দেখে স্থানীয় অনেকেই এখন বৃক্ষরোপণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন; তারা সেগুন বাগান গড়ে তুলতে চাইছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রয়াত চিকিৎসক এস এম চৌধুরী হাসপাতালসংলগ্ন ন্যাড়া পাহাড় অংশ সবুজ করে তুলতে সেগুন গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেন। সে অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে রোপণ করা হয় সেগুনের বিচি ও চারা। 
হাসপাতাল এলাকায় হওয়ায় গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করতে তেমন কোনো বেড়ারও প্রয়োজন হয়নি। লাগেনি বাগান পরিচর্যায় পানি, সার কিংবা ওষুধও।
চট্টগ্রাম বন বিভাগের সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাশ জানান, এ ধরনের বাগান পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি অর্থের জোগানও দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী স্থানীয় সুমাইয়া জাহান জানান, এলাকার সব জায়গা ইটপাথরের দালানে পূর্ণ। কোথাও নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা নেই। তাই খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের সবুজ বন আমাদের টানে। আমরা দল বেঁধে সেখানে সবুজের সান্নিধ্যে ছুটে যাই। তিনি বলেন, প্রকৃতি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। তাই যত বেশি বনায়ন হবে, তত বেশি পৃথিবীটা বাসযোগ্য হবে। এ হাসপাতাল সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে।
চন্দ্রঘোনা খ্রীষ্টিয়ান হাসপাতালের প্রধান পরিচালক ডা.

প্রবীর খিয়াং জানান, সবুজ বানায়নে ছেয়ে গেছে আমাদের হাসপাতাল ও এর সংলঘ্ন পাহাড়। এ ছাড়া হাসপাতালের যেখানে খালি জায়গা আছে, সেখানে নানা জাতের ফলদ ও বনজ গাছ লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি মেহগনিসহ নানা জাতের গাছও লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বৃক্ষ ভালোবাসি। কারণ, প্রতিটি বৃক্ষ একটি অক্সিজেন ফ্যাক্টরি। শীত আসার আগে এবার আরও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে। কেবল এ বনায়নের সৌন্দর্য উপভোগ করতেই অনেক দর্শনার্থী প্রতিদিন এখানে ছুটে আসেন।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ