৫১ বছর আগের কাহিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বড় খুনের ঘটনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া আর কখনো ঘটেনি। নৃশংসতা ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, ঘটনায় সারা বাংলাদেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। ঘটনাটি সেভেন মার্ডার বা সাত খুন নামে পরিচিতি পায়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগে সৃষ্টি হয় গভীর ক্ষত।

৪ এপ্রিল, ১৯৭৪ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশাপাশি দুটি হল—মাস্টারদা সূর্য সেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল। আজও যেমন আছে, ৫০ বছর আগেও মোটামুটি তেমনই ছিল। গভীর রাতে সূর্য সেন হলের সাত ছাত্রকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মুহসীন হলে। টিভি রুমের সামনে সাতজনকেই গুলি করে খুন করা হয়। যাঁরা খুনে অংশ নিয়েছিলেন, প্রত্যেকে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মী। যাঁরা খুন হয়েছিলেন, তাঁরাও প্রত্যেকে ছিলেন ওই সংগঠনের কর্মী বা অনুসারী।

গুলি দুই দফায় হয়েছিল। প্রথমে প্রত্যেকের মাথায় গুলি করা হয়। তারপর ব্রাশফায়ার করা হয়। বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস এম বাহালুল মজনুন

সময়টি ছিল অস্থির। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বী ছাত্রদের কাছে ছিল অস্ত্র। আগের বছর, অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন ভন্ডুল হয়ে হয়েছে। ক্যাম্পাসের বাইরে ঢাকা শহর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই নিয়মিত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। সাত খুনের ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে ছিলেন। তিনি গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালও সঙ্গে ছিলেন।

সাত খুনের ঘটনায় বিচার হয়েছিল। বিচার শুরু হয়েছিল পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের আগেই। দোষী ব্যক্তিদের ২২ বছর করে কারাদণ্ড হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে সবাইকে সাধারণ ক্ষমা দেখিয়ে মুক্ত করে দেওয়া হয়। মুক্ত হয়ে কেউ কেউ জিয়াউর রহমানের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন, কেউ তৈরি করেন নতুন রাজনৈতিক দল।

মাস্টারদা সূর্য সেন হল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন হল হয় ছ ল র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ