ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না : মামুন মাহমুদ
Published: 12th, April 2025 GMT
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, জনগনের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের নেতা তারেক রহমান দীর্ঘ ১৫ বছর দেশে আসতে পারেন না, আমাদের নেত্রী ৬ বছর জেল খেটেছেন।
কিন্তু এখনো আমাদের দাবি পূর্ণ হয়নি। যতোদিন দাবি পূর্ণ না হবে ততোদিন আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকালে ফতুল্লার ঐতিহাসিক ডিআইটি মাঠে ফতুল্লা থানা বিএনপির জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার যেদিন শপথ নিয়েছে সেদিন বলেছিল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে তারা সড়ে যাবে। বিএনপিও তাদের যৌক্তিক একটি সময় পর্যন্ত অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাবে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করলে ছাড় দেয়া হবে না।
অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন, অনেকেই বলেন বিএনপি সংস্কার চায় না। আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২৩ সালেই ৩১ দফা দিয়েছেন। যেখানে সংস্কারের সব কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান করেছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আর খালেদা জিয়া ক্ষমতা গ্রহন করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জনগনের জন্য কাজ করে। আগামিতে বিএনপি ক্ষমতা আসলে আবারো জনগনের উন্নয়ণে কাজ করবে।
বিএনপি মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে। আমাদের নেত্রী ৬ বছর জেল খাটলেও স্বৈরাচারী হাসিনার সাথে আপোষ করেননি, ৯ বছর আন্দোলন করলেও এরশাদের সাথে আপোষ করেনি। বিএনপি মানুষের উন্নয়নের চিন্তা করে।
বাংলাদেশের মানুষ আবারও বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এসকল নেতাকর্মীরা বিগত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা রাজপথ ছেড়ে যাইনি। বিএনপি মানুষের ভোটাধিকারের জন্য সবসময় সংগ্রাম করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ৬ বছর জেল খেটেছে, শেখ হাসিনার সাথে আপোষ করেনি। বিএনপি প্রতারণা করে না, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে।
আজ আমরা যে উচ্ছ্বাস দেখেছি, সেটা একটা নির্বাচনী আমেজের মতো। এই যে নির্বাচনী আমেজ আপনাদের মধ্যে দেখতে পেলাম। কিন্তু একটি কথা বলি- বিগত ১৫ বছরে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছে। ফতুল্লার শাওন পুলিশের নির্মম গুলিতে নিহত হয়েছে। নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারেনি। বাবার লাশ কবর দিতে পারেনি।
সেইসব নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল ফ্যাসিবাদ সরকার হটিয়ে একটি অবাধ অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন। আমদোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ কে বিদায় করা হয়েছে।
মামুন মাহমুদ বলেন, অবৈধ হাসিনা সরকার বিগত সময়ে জনগনের জন্য কাজ করেননি। এই আসনের সাবেক সাংসদ ফতুল্লার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন আর বড় বড় কথা বলেছিলেন। আর বিদেশে টাকা পাচার করেছিলেন। এইগুলো শেখ হাসিনার নির্দেশেই করা হয়েছিল। দেশের মানুষের পকেটের টাকা তারা বিদেশে পাচার করে মানুষকে দরিদ্র থেকে আরো দরিদ্র করেছে। দেশলে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিনত করেছিল।
আমরা বিশ্বাস করি আগামিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। যে বির্বাচনে ভালো মানুষ এমপি নির্বাচিত হবে। আমরা চাইনা আবারো কোন গড ফাদার জন্ম হোক। আগামিতে কেমন এমপি চান, সেটা আপনাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আপনারা যাকে চান নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে তাদেরকে দল মনোনয়ন দেবে। আমরা সন্ত্রাসের কলঙ্ক ঘুচিয়ে একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই। আমরা বিদেশে গাড়ি বাড়ি করে আপনাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাই না। আপনাদের পাশে থাকতে চাই।
সমাবেশে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে ও থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার সাদাত সায়েম, ফতুল্লা থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন শিকদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম ভূইয়া জেলা ছাত্রলের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া প্রমূখ।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ আম দ র ন ত ব এনপ র স ন ত কর ম ল ইসল ম আপন দ র জনগন র ক জ কর কর ছ ল র জন য ক ষমত রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।