বাবার রক্ত শুকায়নি, চোখের পানি মুছেই পরীক্ষার হলে আলফি
Published: 17th, April 2025 GMT
বাবা তখনো মর্গে। ঘরে কফিন, উঠোনে শোক। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে কান্নায়। এমন এক সকালে আলফি আক্তার পৌঁছে গেল পরীক্ষার কেন্দ্রে, যেন নিজেকেই হার না মানার প্রমাণ দিতে।
আলফি রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। চলছে এসএসসি পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) তার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ছিল রাজশাহীর শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। অথচ আগের রাতেই, ঠিক ১০টার দিকে, উত্ত্যক্তকারীদের হামলায় খুন হন তার বাবা আকরাম হোসেন (৪৫)।
আলফির বাবার একটাই ‘অপরাধ’—মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করেছিলেন। বখাটেদের সেই ‘অপরাধবোধহীন প্রতিশোধ’ যেন মুছে দিল এক সংসারের হাসি।
তালাইমারি এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন পেশায় বাসচালক ছিলেন। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে তার মেয়ে আলফিকে রাস্তায় হেনস্তা করে কিছু যুবক। প্রতিবাদ জানানোর পর রাতেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই দল।
প্রথমে হামলা হয় আকরামের ছেলে ইমাম হাসান অনন্তর ওপর। বাবার প্রাণপণে এগিয়ে আসাও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। মাথায় ইটের আঘাতে রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন আকরাম। ছেলেই তাকে নিয়ে দৌড়ান হাসপাতালে—কিন্তু চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তিনি আর নেই।
সবেমাত্র জীবন শুরু করা এক মেয়ের কাছে এ যেন সব হারানোর শুরু। মা মুক্তি বেগম বলেন, “সারারাত কেঁদেছে। বলেছে—‘বাবা নেই, আমি কিছুতেই যেতে পারব না।’ অনেক বোঝানোর পর ওকে পরীক্ষার হলে পাঠানো হয়।”
তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিল তালাইমারির বাবর আলী রোড এলাকার বখাটে নান্টু ও তার সহযোগীরা। বুধবার বিকেলে রাস্তায় চলার সময় আলফিকে গালাগালি করে ওই যুবকেরা। ঘটনা শুনে মেয়ের বাবা নান্টুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নান্টু। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তারা এসে প্রথমে আমার ছেলে ইমাম হাসান অনন্তকে মারধর করে। ছেলের চিৎকার শুনে ছুটে গেলে আমার স্বামীকেও ঘিরে ধরে হামলাকারীরা। একপর্যায়ে তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’’
অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আলফি খুবই মেধাবী। তার বাবাকে যে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দ্রুত বিচার চাই।”
এ ঘটনায় ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন—নান্টু, বিশাল, খোকন মিয়া, তাসিন হোসেন, অমি, নাহিদ ও শিশির। এ ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, “দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।’”
ঢাকা/কেয়া/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ আকর ম
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুই পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ২টার কিছু পর এক পারিবারিক বিরোধের তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। খবর বিবিসির।
আরো পড়ুন:
শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা, ভাঙচুর-আগুন
পেনসিলভানিয়া স্টেট পুলিশের কমিশনার কর্নেল ক্রিস্টোফার প্যারিস জানান, অভিযুক্ত বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।
গুলির ঘটনার পর ইয়র্ক কাউন্টির নর্থ কোডোরাস টাউনশিপের স্প্রিং গ্রোভ এলাকার একটি স্কুল জেলা সাময়িকভাবে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ ঘোষণা করে। তবে পরে জানানো হয়, স্কুল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য বর্তমানে কোনো সক্রিয় হুমকি নেই। এ ঘটনা ঘটে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) পূর্বে অবস্থিত ইয়র্ক কাউন্টির এক গ্রামীণ এলাকায়।
তারা বলছে, আগের দিন শুরু হওয়া একটি তদন্তের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তদন্ত চলমান থাকায় বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনজন মহামূল্যবান প্রাণ হারালাম, যারা এই দেশকে সেবা দিয়েছেন। এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজ হিসেবে আমাদের আরো ভালো করতে হবে।”
নিহত তিন কর্মকর্তার সম্মানে গভর্নর শাপিরো রাজ্যের সব সরকারি ভবন ও স্থাপনায় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
ঢাকা/ইভা