গ্যাসে ৭৫ কোটি ডলারের বকেয়া কমে এখন ২৪ কোটি ডলার
Published: 21st, April 2025 GMT
বকেয়া বিলের চাপে গত তিন বছর ধরে ভুগছে দেশের গ্যাস খাত। ডলারের সংকটে নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারছিল না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। বকেয়া বিলের জন্য চাপ তৈরি করছিল সরবরাহকারীরা। ব্যাহত হচ্ছিল আমদানি। এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। গ্যাসের বকেয়া কমিয়ে এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিপুল বকেয়ার বড় অংশ ইতিমধ্যে শোধ হয়ে গেছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বকেয়া জমিয়ে রেখে গেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গ্যাস খাতে বকেয়া ছিল প্রায় ৭৫ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েছে। এরপরও নিয়মিত বিল পরিশোধের পাশাপাশি পুরোনো বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে ১৯ এপ্রিল বকেয়া নেমে এসেছে ২৪ কোটি ডলারে।
পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, বকেয়া জমিয়ে রেখে গেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গ্যাস খাতে বকেয়া ছিল প্রায় ৭৫ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েছে। এরপরও নিয়মিত বিল পরিশোধের পাশাপাশি পুরোনো বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে ১৯ এপ্রিল বকেয়া নেমে এসেছে ২৪ কোটি ডলারে।সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারি মাস শেষেও গ্যাস খাতে বকেয়া ছিল ৭১ কোটি ডলার। কিন্তু গত দেড় মাসে বেশির ভাগ বকেয়া পরিশোধ হয়ে গেছে। গত ৭ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ছয় ব্যাংকিং লেনদেন দিবসেই পরিশোধ করা হয়েছে ১৮ কোটি ডলার। চলতি মাসের মধ্যে বকেয়া ১০ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে ডলার–সংকট বাড়তে থাকে। জমতে থাকে গ্যাসের বকেয়া বিল। সংকট এড়াতে সে বছরের জুলাই থেকে টানা সাত মাস খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রাখে তৎকালীন সরকার। এতে গ্যাসের সরবরাহ–সংকট তৈরি হয়।
গ্যাসের সরবরাহ–সংকটের কারণে একই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরু করে তৎকালীন সরকার। সার্বিকভাবে বিগত সরকারের শেষ আড়াই বছর জ্বালানিসংকট অব্যাহত ছিল। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ছিল লোডশেডিং। আবার একই সঙ্গে বকেয়া বিলও বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নামে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও গ্যাস দিতে পারেনি তৎকালীন সরকার।
বিগত সরকার জ্বালানি খাতকে খাদের মধ্যে রেখে গেছে। বকেয়া জমিয়ে রেখে সেই খাদ থেকে ওঠা যাবে না। বকেয়ার বিলম্ব মাশুল দিতে হয়। এতে খরচও বেড়ে যায়। বিল পরিশোধে দেরি দেখে দরপত্রে বেশি দর আসত। এখন সেটি কমে এসেছে। জ্বালানি খাতে খরচ কমানোই মূল লক্ষ্য। আর খরচ কমলে ভর্তুকি কমবে।মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, বিগত সরকার জ্বালানি খাতকে খাদের মধ্যে রেখে গেছে। বকেয়া জমিয়ে রেখে সেই খাদ থেকে ওঠা যাবে না। বকেয়ার বিলম্ব মাশুল দিতে হয়। এতে খরচও বেড়ে যায়। বিল পরিশোধে দেরি দেখে দরপত্রে বেশি দর আসত। এখন সেটি কমে এসেছে। জ্বালানি খাতে খরচ কমানোই মূল লক্ষ্য। আর খরচ কমলে ভর্তুকি কমবে।
এবার গ্রীষ্ম মৌসুমের আগেই বকেয়া পরিশোধে তৎপর হয়ে ওঠে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, তিন বছর পর মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের পুরো বকেয়া শোধ করা হয়েছে।
দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ৫৫ শতাংশ সরবরাহ করে শেভরন। প্রতি মাসে শেভরনকে গড়ে প্রায় চার কোটি ডলার বিল পরিশোধ করতে হয়। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে শেভরনের বকেয়া বিল বাড়তে থাকে। বিগত সরকারের সময় তারা কয়েক দফা চিঠি দিয়ে বিল পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়েছিল।
সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া শোধ করছে। এটা ইতিবাচক। তবে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তাই ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়াতে এলএনজি-নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দেওয়া উচিত।খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় শেভরনের কাছে বকেয়া ছিল প্রায় ২৪ কোটি ডলার। আগস্ট মাসে নিয়মিত মাসিক বিলের চেয়ে কম পরিশোধ করা হয় তাদের। তবে সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বিলের প্রায় দ্বিগুণ হারে পরিশোধ করতে থাকে পেট্রোবাংলা। গত আট মাসে নিয়মিত বিল ও বকেয়া মিলে ৫০ কোটি ডলারের বেশি শোধ করা হয়েছে। এখন শেভরনের কাছে পেট্রোবাংলার কোনো বকেয়া নেই।
দেশীয় গ্যাসের পাশাপাশি কাতার ও ওমান থেকে নিয়মিত এলএনজি আমদানি করে সরকার। এ ছাড়া খোলাবাজার থেকে এলএনজি সরবরাহ করে কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি।
এ ছাড়া এলএনজি রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের ব্যবহৃত দুটি টার্মিনালকেও প্রতি মাসে ডলারে বিল পরিশোধ করতে হয়।
অন্যদিকে এলএনজি বিল বাবদ ৪৩ কোটি ডলারের বকেয়া রেখে যায় বিগত সরকার। তবে এলএনজি টার্মিনাল ব্যবহার বাবদ কোনো বকেয়া ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার এলএনজির বকেয়া কমিয়ে অর্ধেকের নিচে নামিয়ে এনেছে।
জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, এখন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আনা এলএনজির বিল বকেয়া আছে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। আর খোলাবাজার থেকে কেনা এলএনজির বিল বকেয়া ১১ কোটি ডলার। এর বাইরে দুটি এলএনজি টার্মিনালের বকেয়া আছে এক কোটি ডলারের কিছু বেশি।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি উপদেষ্টার নির্দেশনায় পেট্রোবাংলা, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে গ্যাস খাতের বকেয়ার একটা বড় অংশ পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকি ছাড় বাড়িয়েছে। ডলার ছাড় করে সহায়তা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্যাস সরবরাহ করে নিয়মিত বিল পাচ্ছিল না পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ বকেয়া বিদ্যুৎ ও সার খাতে। সার কারখানা ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিল পরিশোধ বাড়িয়েছে। গত মার্চে ৮০০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে পিডিবি।
গ্যাসের বকেয়া বিল পরিশোধ করায় সরবরাহ বাড়াতে সুবিধা হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, এখন চাহিদামতো আমদানি করতে পারবে পেট্রোবাংলা। এ ছাড়া বকেয়া থাকায় এলএনজি আমদানির দরপত্রে অনেক কোম্পানি অংশ নিতে চাইত না। এতে প্রতিযোগিতা কম হতো। কিন্তু নিয়মিত বিল পরিশোধের নিশ্চয়তায় এখন সবাই দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী হচ্ছে। সাম্প্রতিক দরপত্রে এলএনজির দামও কমে আসছে। এতে সাশ্রয় করছে পেট্রোবাংলা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে ডলারের রিজার্ভে স্থিতিবস্থা এসেছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে। বিশ্বে জ্বালানির দামও কমছে। তার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া শোধ করছে। এটা ইতিবাচক। তবে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তাই ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়াতে এলএনজি–নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দেওয়া উচিত। তবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি জ্বালানি খাতের আর্থিক পুনরুদ্ধারে কোনো ভূমিকা রাখছে না। এতে বরং ভোক্তার ওপর আরও দায় তৈরি হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ল পর শ ধ র পর শ ধ করত ব গত সরক র এলএনজ র ত সরক র সরক র র সরবর হ খরচ কম দরপত র বক য় র ২৪ ক ট র বক য় ল বক য় আমদ ন আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
দেড় শ বছরের পুরোনো রিয়াজউদ্দিন বাজারে বছরে হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা
ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় শ্রমিকদের ব্যস্ততা। রাত থেকে ভিড় করে ট্রাকের সারি। কোনোটিতে সবজি, কোনোটিতে চাল আবার কোনোটিতে বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য। দিন গড়াতে একে একে খোলা হয় বাজারে থাকা কাপড়, মুঠোফোন, জুতা, গৃহস্থালি পণ্যসহ অন্তত কয়েক শ পণ্যের দোকান। বাজারের ভেতরে দোকানে দোকানে চলে বেচাকেনা আর হিসাব-নিকাশ। চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারে এই চিত্র প্রতিদিনের।
নগরের ঐতিহ্যবাহী পাইকারি ও খুচরা এই বাজারের বয়স ১৫০ বছরের বেশি। শুরুতে এক জমিদারবাড়ির পাশে ছোট বাজার ছিল এটি। পরে তা রূপ নেয় দেশের বড় বাজারের একটিতে। একসময় নগরের সব বাজারে পণ্য সরবরাহ করা এই বাজার গত এক দশকে কিছুটা জৌলুশ হারিয়েছে। এরপরও বাজারটির সাড়ে তিন হাজারের বেশি দোকানে প্রতিবছর গড়ে এক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, শেখ মোহাম্মদ ওয়াশীল সিদ্দিকি নামের এক ব্যক্তি তাঁর ছেলে শেখ রেয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির নামে এই বাজারের নামকরণ করেন। বাজারটি প্রায় শত বছর ধরে জমজমাট। তবে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বাজার গড়ে ওঠার কারণে এখন এই বাজারে ব্যবসার চাপ কমেছে।
প্রবীণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন ইতিহাসবিষয়ক বই ঘেঁটে জানা গেছে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের (বটতলি স্টেশনের) উত্তর পাশে নগরের বাইশ মহল্লার কবরস্থানের পাহাড়টির নাম কুমদান পাহাড়। এই পাহাড়ের পূর্ব দিক ও স্টেশন রোডের উত্তর দিকের সম্পূর্ণ এলাকাটি ছিল জমিদার দেওয়ান বৈদ্যনাথের জমিদারির অন্তর্গত। সেখানে তাঁর বাগানবাড়ি ও সেগুনবাগিচা ছিল। এই এলাকাই বর্তমানে রিয়াজউদ্দিন বাজার।
আবদুল হক চৌধুরীর বন্দর শহর চট্টগ্রাম বই থেকে জানা যায়, দেওয়ান বৈদ্যনাথের উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে এলাকাটি চট্টগ্রামের প্রথম মুসলমান বিএবিএল (আইন স্নাতক) শেখ রেয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির বাবা শেখ মোহাম্মদ ওয়াশীল সিদ্দিকি কিনে নেন। রেয়াজুদ্দিনের সময়ে এর প্রথম উন্নয়ন হয়েছিল। তাই এলাকাটির নামকরণ হয়েছে ‘রেয়াজুদ্দিন বাজার’।
বর্তমানে দেওয়ান বৈদ্যনাথের বাড়ির অস্তিত্ব নেই। সময়ের পরিক্রমায় রেয়াজুদ্দিন বাজারও পরিচিত পায় রিয়াজউদ্দিন বাজার নামে। এখন বিশাল এলাকাজুড়ে এই বাজার অবস্থিত। বাজারে প্রবেশের অন্তত ১৫টি পথ রয়েছে। উত্তরে এনায়েতবাজার, দক্ষিণে স্টেশন রোড, পূর্বে জুবলি রোড এবং পশ্চিমে বিআরটিসির বাসস্ট্যান্ড—এ বিশাল এলাকা নিয়েই বর্তমান রিয়াজউদ্দিন বাজার।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নগরের স্টেশন রোড এলাকা থেকে বাজারে অন্তত ছয়টি সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে চৈতন্যগলি ধরে এগিয়ে গেলে সব সবজির আড়তের দেখা মেলে। এর পাশে আজাদ হোটেলের পাশের দুটি পথ ধরে ঢুকলে ইলেকট্রনিক ও অন্যান্য পণ্যের বাজার। নূপুর মার্কেটের পাশ দিয়ে কাপড়ের দোকানগুলো। জুবলি রোডের পাশ দিয়ে সবজি ও মুরগি বাজার। এই পথ আরও কয়েকটি গলি হয়ে আবার স্টেশন রোডে সংযুক্ত।
কমেছে আড়তের হাঁকডাক
রিয়াজউদ্দিন বাজার বিখ্যাত মূলত সবজির আড়তের জন্য। নগরের সব খুচরা-পাইকারি বাজারে এখানকার আড়ত থেকে সবজি সরবরাহ করা হয়। একসময় উপজেলাগুলোতেও সবজি সরবরাহ হলেও এখন সেই জৌলুশ কমেছে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি সবজির আড়ত রয়েছে বাজারে।
এসব আড়তের একেকটির বয়সও অন্তত ৫০-৬০ বছর। প্রতিদিন রাত থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যাপারীরা রিয়াজউদ্দিন বাজারে সবজি নিয়ে আসেন। এসব সবজি কমিশন ভিত্তিতে বিক্রি করেন আড়তদারেরা। সবজিভেদে কমিশনের পরিমাণও ভিন্ন। যেমন আলু ছাড়া অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ টাকায় ৬ টাকা ২৫ পয়সা কমিশন। আলু-পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সেটি প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সার আশপাশে। আড়তদার সমিতির তথ্যমতে, সবজির বাজারেও আগের জৌলুশ নেই। তবু এখনো বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয় এসব আড়তে।
প্রায় ২৫ বছর ধরে রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তে ব্যবসা করছেন ফারুক শিবলী। বর্তমানে রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক তিনি। ফারুক শিবলী বলেন, গত এক দশকে আড়তগুলো বদলে গেছে। এখন আর আগের মতো ব্যস্ততা নেই। নগরের অনেক বাজারে ছোট ছোট পাইকারি আড়ত হয়েছে। তাঁরা ব্যাপারীদের কাছ থেকে মালামাল কিনে বিক্রি করে।
হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা
সবজি ছাড়াও রিয়াজউদ্দিন বাজারে রয়েছে মাছ, মাংস, চাল, ফল, মুদি, পানসুপারি, মসলা, ইলেকট্রনিকস, মুঠোফোন, অন্দরসজ্জা সামগ্রী, স্টেশনারিসহ অন্তত ১০০ ধরনের দোকান। সব কটির আলাদা আলাদা সমিতি থাকলেও সব সমিতি রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির আওতাধীন। সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বাজারে ছোট–বড় ২০টি সমিতি তাঁদের আওতায়, যেখানে দোকান সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি।
বণিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, পণ্যের এমন বৈচিত্র্যময় বাজার সারা দেশে খুবই কমই আছে। রিয়াজউদ্দিন বাজারে সব ধরনের পণ্যই পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারে বছরে বেচাকেনা ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। যদিও কাগজে–কলমে এর সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই।
রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ছালামত আলী বলেন, আগের সেই জৌলুশ না থাকলেও এখনো চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার হিসেবে এ বাজার এগিয়ে। ঈদে পোশাক বিক্রি ছাড়াও সারা বছর সবজি, মুদি, গৃহস্থালি পণ্যসহ সব মিলিয়ে বছরে ৭০০ কোটি টাকার বেশি বেচাকেনা হয়।