চলমান সংস্কার ও নির্বাচনকে কেন মুখোমুখি করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন করেছেন, সংস্কার কি থাই পাহাড়ের মতো স্থায়ী ব্যাপার, যে এটা একবার হয়ে গেলে, সবাই মিলে কথা বলে এটা পরিবর্তন করা যাবে না? তাঁর মতে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের ক্যানসারে আক্রান্ত ছোট ভাই মাহমুদুল্লাহ বিন জিসানের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’। অনুষ্ঠানে শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমা তুজ জোহরার হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেওয়া হয়।

সংস্কার নিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এটা তো হিমালয় পর্বতের মতো কোনো বিষয় না যে ‘বিলিয়নস ইয়ার’ একই জায়গায় থাকবে। এটা সংস্কার হবে, সংশোধন হবে, আবার নতুন আইন প্রণয়ন হবে, করতে করতেই তো পৃথিবী এবং বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন সংস্কারগুলো চলতেই থাকবে। তাহলে নির্বাচনের বিকল্প হিসেবে কেন এভাবে দাঁড় করানো হচ্ছে?

নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করবে না—প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যের সূত্র ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এটা আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে এবং আমি আশ্বস্ত হয়েছি।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘ওয়াচ ডগের’ মতো দেশের মানুষের পাশে থাকছেন এবং প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াচ্ছেন বলে জানান রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশে থেকেও জানতে পারি না, অথচ তিনি দেশের বাইরে থেকেও আমাদের জানার আগেই দেশের মানুষের প্রয়োজনের কথা জানতে পারেন।’

ক্রান্তিকাল এখনো শেষ হয়নি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বিএনপি নেতা–কর্মীদের নামে ৬০ লাখ মামলা এখনো রয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

যারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, তাদের কেন এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি এমন প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, এর মধ্যে আমরা আবারও ফ্যাসিবাদের আওয়াজ শুনতে পাই, এটা দুঃখজনক শুধু নয়, বিপজ্জনকও বটে। কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদের আওয়াজ যদি ওঠে এই বাংলাদেশে, তাহলে আমরা শহীদদের আত্মার কাছে কী জবাব দেব?

বাংলাদেশে যাদের কারণে ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়েছে, তারা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে—এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, যাঁরা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়ে গেছেন, যাঁরা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করে গেছেন, তাঁদের কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি? কেন জাস্টিস খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়নি—উনি একমাত্র ব্যক্তি, যিনি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে বন্ধ করে শেখ হাসিনাকে ভয়ংকর ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদ তৈরি করার সুযোগ করে দিয়ে গেছেন, সে কেন আজ ধরাছোঁয়ার বাইরে?

বিদেশিদের সহায়তায় এবং দেশে গণতন্ত্রবিরোধীদের সহায়তায় খায়রুল হক এসব করেছেন জানিয়ে রিজভী বলেন, এই যে আজকে জাহিদের হত্যাকাণ্ড, এই যে আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড, এই সব কিশোর-তরুণ, যাদের বুকের তাজা রক্ত ঝরে গেল শেখ হাসিনার র‍্যাব, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে—এর জন্য তো দায়ী খায়রুল হক, প্রথম এবং প্রধান দায়ী।

বেগম খালেদা জিয়ার সাজার বিষয় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জাস্টস আসাদুজ্জামান মিথ্যা মামলায় তাঁকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছেন। এরপর হাইকোর্টে আরেকজন জজ এনায়েত সাহেব, তিনি আবার সাজা দিলেন, পাঁচ বছর বাড়িয়ে দিলেন, এঁরা কেন আজ ধরাছোঁয়ার বাইরে, এরাই তো গণতন্ত্রের হত্যাকারী, এরাই তো ফ্যাসিবাদ কায়েমে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছে।

ফ্যাসিবাদ কায়েম এবং দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর ধ্বংসকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বিগত ১৪-১৫ বছর এই ফ্যাসিস্ট দ্বারা যাঁরা গুম–খুনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পাশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, এই জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়ার পাশাপাশি অনেকে অন্ধ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘এটা কিন্তু একটা রাজনৈতিক বা একটা মানুষ হঠাৎ করেই কিন্তু বলে নাই, আসলে রাজনৈতিক দল হিসেবে এরা কখনো রাজনীতি করবে, সাধারণ মানুষকে নিয়ে চিন্তা করবে, এটা আওয়ামী লীগের মধ্যে আমরা দেখি নাই। স্বাধীনতার পর তারা (আওয়ামী লীগ) যেভাবে দুর্নীতি, দুঃশাসনে লিপ্ত ছিল, রক্ষীবাহিনীর যে অত্যাচার ছিল, তখনো এই গুম-খুন ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল।’

নিজের রাজনীতির ইতিবৃত্ত তুলে ধরে এ্যানি বলেন, ‘যখন ৯৬ তে আমি নিজে ছাত্রদলের দায়িত্বে ছিলাম, আমরা বরাবরই দেখেছিলাম, এই রাজনৈতিক দল বলতে রাজনৈতিক দল ছিল না, এরা রাজনীতির চর্চা করে নাই, এরা সব সময়ই রক্তচক্ষু দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করে এ দেশের ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে এবং ১৬-১৭ বছর সেভাবেই ছিল। আর ছিল বলেই এরা সবাইকে জিম্মি করে, রাজনৈতিক দলগুলোকে জিম্মি করে ১৪ তে ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে, ১৮ তে রাতের অন্ধকারে ভোট করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করেছে, ২৪ এ কী করে নাই? এদের (আওয়ামী লীগ) রাজনীতি করার অধিকার নেই। আজকে আমরা বলছি যে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অবশ্যই আওয়ামী লীগ যেন এ দেশে ফিরে আসতে না পারে, ফ্যাসিবাদ যেন এ দেশে ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত।’

আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এরা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে প্রশাসনের এমন কোনো নির্দেশনা ছিল না, যা তারা দেয়নি ক্ষমতা রাখতে।

‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক ফজলুল হক মিলন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই জামান সেলিম, আবুল কাশেম, আলমগীর কবির, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য নাজমুল হাসান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য মুস্তাকিম বিল্লাহ, ফরহাদ আলী সজীব, শাকিল আহমেদ, রুবেল আমিন, শাহাদত হোসেন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা.

জাহিদ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি জামিল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-দপ্তর সম্পাদক শৈবাল, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির এজিএস রনি, শেকৃবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নাহিয়ান হোসেন, ছাত্রদল দল নেতা মশিউর রহমান মহান, আব্দুল্লাহ আল মিসবাহ, রুবেল, রিটু, প্রিন্স প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত অন ষ ঠ ন ব এনপ র ছ ত রদল পর ব র র জন য আওয় ম ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে সুষ্ঠু ভোটে বাধা হতে পারে

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেখানে এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার এক নতুন ধরনের হুমকি নিয়ে এসেছে। এটি শুধু প্রচলিত কারচুপির পদ্ধতিগুলোকেই আরও সফিসটিকেটেড বা কৌশলী করে তুলবে না; বরং আমাদের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি যে জনগণের বিশ্বাস, সেটিই নষ্ট করে দিতে পারে।

নির্বাচনে এআইয়ের প্রভাব কোনো কাল্পনিক গল্প নয়, এটি একটি বাস্তব ঝুঁকি। এআই-চালিত টুলগুলো ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতা বা কর্মকর্তাদের অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য ‘ডিপফেক’ (ভুয়া অডিও, ভিডিও এবং ছবি) তৈরি করা সম্ভব।

এই ডিপফেকগুলো সহজেই মিথ্যা কেলেঙ্কারি ছড়াতে পারে, যা ভোটারদের বিভ্রান্ত করে তাঁদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই-চালিত বটগুলো সেকেন্ডের মধ্যে এমন সব মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে, যা একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ব্যাপক জনসমর্থনে বা বিরোধিতায় ভূমিকা রাখতে পারে।

যখন জনগণ দেখতে পাবে, তারা যা দেখছে বা শুনছে, তার মধ্যে কোনটা আসল আর কোনটা নকল, তা বোঝা কঠিন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে সংবাদমাধ্যম, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ এবং পুরো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে সন্দেহ ঢুকে যাবে। এটি একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি।

এআই অ্যালগরিদমগুলো বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট ভোটারদের লক্ষ করে তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ ও দুর্বলতা অনুযায়ী রাজনৈতিক বার্তা পাঠাতে পারে। এই ‘মাইক্রো টার্গেটিং’-এর মাধ্যমে ভোটারদের মনোভাবকে প্রভাবিত করা বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ভোটদানের সময় বা স্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখাও সম্ভব।

আমাদের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে হলে এই নতুন প্রযুক্তির ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে

এআই শুধু মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি নির্বাচনী পরিকাঠামোর ওপর সাইবার হামলাও জোরদার করতে পারে। এআই-চালিত টুলগুলো আরও সফিসটিকেটেড ফিশিং আক্রমণ তৈরি করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে বা এমন ম্যালওয়্যার তৈরি করতে পারে, যা প্রচলিত নিরাপত্তাব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে সক্ষম। এ ধরনের আক্রমণ ভোটার ডেটাবেজ বা ভোটিং মেশিনকে লক্ষ্য করে করা যেতে পারে। সেটি নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন বা পুরো প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিপত্তির সমাধান কী? এ প্রশ্নের জবাব হিসেবে প্রথমেই মনে রাখা দরকার, এই গুরুতর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখানে এক্সপ্লেইনেবল এআই (এক্সএআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এআই মডেলের সিদ্ধান্তগুলো মানুষের কাছে বোধগম্য করে তোলে এক্সএআই। এটি এআইয়ের স্বচ্ছতা বাড়ায়।

ডিপফেক শনাক্তকরণ: এক্সএআই ব্যবহার করে এমন টুল তৈরি করা সম্ভব, যা কেবল ডিপফেক শনাক্ত করে না; বরং কেন একটি বিষয়বস্তু জাল বলে চিহ্নিত হয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেয়। এর ফলে মানব ফ্যাক্ট-চেকাররা বিশ্লেষণ যাচাই করতে পারেন এবং জনগণের আস্থা তৈরি হয়।

প্রচারণার নিরীক্ষা: এক্সএআই রাজনৈতিক প্রচারণায় এআই ব্যবহারের নিরীক্ষা করতে পারে। এটি বিশ্লেষণ করে দেখাতে পারে, কীভাবে একটি অ্যালগরিদম তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পক্ষপাতদুষ্ট বা কারসাজিমূলক টার্গেটিং কৌশলগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করে।       

নিরাপত্তা বৃদ্ধি: সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক্সএআই হুমকির শনাক্তকরণ সিস্টেমকে উন্নত করতে পারে। এটি ব্যাখ্যা করতে পারে, কেন একটি নির্দিষ্ট কার্যকলাপকে ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দ্রুত এবং কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে।

অংশগ্রহণকারীদের করণীয়: এআইয়ের হুমকি মোকাবিলায় সব গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলো এবং নেতাদের প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, তাঁরা প্রতারণামূলক এআই জেনারেটেড কনটেন্ট বা ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রচারে জড়িত হবেন না। তাঁদের উচিত এআইয়ের যেকোনো বৈধ ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকা এবং এআই জেনারেটেড কনটেন্টে সুস্পষ্ট লেবেল ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রচারে এআই ব্যবহারের বিষয়ে সুস্পষ্ট নিয়ম ও প্রবিধান তৈরি এবং প্রয়োগ করতে হবে। তাদের উচিত এআই-চালিত টুলগুলোতে বিনিয়োগ করা এবং ভোটারদের সচেতন করার জন্য বড় আকারের প্রচার চালানো।

এ ছাড়া একটি যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন দল গঠন করা প্রয়োজন, যারা নির্বাচনের আগপর্যন্ত কমিশনকে এআই এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা দেবে। তৃতীয়ত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সংবাদমাধ্যম এবং সুশীল সমাজকে এআইয়ের হুমকি সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত মোকাবিলা করার জন্য একটি সুস্পষ্ট প্রটোকল স্থাপন করা জরুরি। সংবাদমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের উচিত ফ্যাক্ট-চেকিং এবং জনগণের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।

আমাদের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে হলে এই নতুন প্রযুক্তির ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। এআইয়ের ক্ষমতা যেমন বিশাল, তেমনি এর অপব্যবহারের বিপদও কম নয়।

জনগণের বিশ্বাস এবং একটি ন্যায্য নির্বাচনের অধিকার নিশ্চিত করতে এখনই আমাদের সবাইকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, বাংলাদেশ সরকারের একটি সম্মিলিত গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএনডি) দল গঠন করা। এই বিশেষজ্ঞ দল এআই-সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলো ক্রমাগত বিশ্লেষণ ও অনুমান করবে এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে।

অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন এআইয়ের সাবেক অধ্যাপক, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে অবস্থিত এআরআইটিআইয়ের সাবেক পরিচালক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেতা-কর্মীদের মতের মূল্য না দিলেও জি এম কাদের স্ত্রীর মতামত প্রাধান্য দেন: আনিসুল ইসলাম
  • এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়
  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে সুষ্ঠু ভোটে বাধা হতে পারে
  • মিয়ানমারে ডিসেম্বরে নির্বাচনের ঘোষণা জান্তা সরকারের, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সরাসরি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে
  • ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লুলার প্রতিবাদে অন্যরাও শামিল হোক
  • এমন কিছু করবেন না যাতে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়: মির্জা ফখরুল
  • সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ৭ দিনের রিমান্ডে
  • বিতর্কমুক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব‍্যবস্থা না হলে গণতন্ত্র আবার হুমকিতে পড়বে: এবি পার্টি
  • মানুষ ঠিকমতো ইভিএম বোঝে না, পিআর বুঝবে কী করে: মির্জা ফখরুল