কুমিল্লা শহরে ‘কিশোর গ্যাং’ দমনে মাঠে নেমেছেন সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ‘গ্যাং লিডার’সহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী ও র‍্যাব। এ ছাড়া পুলিশ আলাদাভাবে অভিযান চালিয়ে আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের অভিযানে বেশ কিছু অস্ত্র, গুলি, মাদক ও অবৈধ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন নগরের আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘র স্কোয়াড’ বা রতন গ্রুপের প্রধান ইমরান হোসেন ওরফে রতন (১৯)।

আজ রোববার সকালে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা ও আলেখারচর সেনাক্যাম্প থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযানের বিস্তারিত জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর এই দুটি ক্যাম্প ও র‍্যাবের সমন্বয়ে এই যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভিযানে মূল অস্ত্র সরবরাহকারীসহ মোট ৯ জন অপরাধী আটক হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন মো.

আকিব হোসেন (২৯), মো. সাজ্জাদ হোসেন (৪৭), মো. শাহাদাত হোসেন (২৮), মো. সাইফুল ইসলাম (১৯), মো. ইমরান হোসেন ওরফে রতন (১৯), মো. মোজাহিদ (২১), মো. রাফিউল আলম ওরফে শফিক (২০) ও হুমায়ুন কবির (৪৫)। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান আছে।

অভিযানের বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম আজ বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের অভিযানে গ্যাং লিডার রতনসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছি। তবে আমাদের হাতে এখনো তাঁদের হস্তান্তর করা হয়নি। সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের অভিযানের বাইরে পুলিশের সদস্যরা শনিবার রাতভর নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে শুক্রবারের ওই ঘটনার পর পুলিশের অভিযানে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরেই কুমিল্লা নগরবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম ‘কিশোর গ্যাং’। অতীতে দেখা গেছে, কিশোর গ্যাং সক্রিয় হলেই কেবল অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া ধারাবাহিক অভিযান চালানো হয় না।

গত শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রানীর দিঘিরপাড়, তালপুকুরপাড় ও আদালতপাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তিনটি পক্ষ মহড়া দেয়। ২০১৫ সালে কুমিল্লা নগরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। নগরের আলোচিত কিশোর গ্যাং গ্রুপ হচ্ছে রতন, ইগল, র‍্যাক্স, এক্স, এলআরএন, সিবিকে, মডার্ন, রকস্টার, ডিস্কো বয়েজ, বসসহ কমপক্ষে ২০টি পক্ষ। এসব গ্যাং নিজেদের আধিপত্য দেখাতে প্রকাশ্যে সহিংসতায় জড়াচ্ছে। ২০১৭ সালের পর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের হাতে আট বছরে অন্তত ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মাদক কারবার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভ টিজিংয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে এসব গ্যাং।

আরও পড়ুনকুমিল্লায় ‘কিশোর গ্যাং’: ‘অবস্থান জানান দিতে’ মহড়া, নাগরিকদের উদ্বেগ১৮ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনকুমিল্লায় ছুটির বিকেলে তিন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রের মহড়া, ককটেলের শব্দে আতঙ্ক২৫ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ৯ জনক নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ