কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানায় অভিযান, ‘গ্যাং লিডার’সহ গ্রেপ্তার ১৮
Published: 27th, April 2025 GMT
কুমিল্লা শহরে ‘কিশোর গ্যাং’ দমনে মাঠে নেমেছেন সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ‘গ্যাং লিডার’সহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী ও র্যাব। এ ছাড়া পুলিশ আলাদাভাবে অভিযান চালিয়ে আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সেনাবাহিনী ও র্যাবের অভিযানে বেশ কিছু অস্ত্র, গুলি, মাদক ও অবৈধ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন নগরের আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘র স্কোয়াড’ বা রতন গ্রুপের প্রধান ইমরান হোসেন ওরফে রতন (১৯)।
আজ রোববার সকালে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা ও আলেখারচর সেনাক্যাম্প থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযানের বিস্তারিত জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর এই দুটি ক্যাম্প ও র্যাবের সমন্বয়ে এই যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভিযানে মূল অস্ত্র সরবরাহকারীসহ মোট ৯ জন অপরাধী আটক হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন মো.
অভিযানের বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম আজ বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী ও র্যাবের অভিযানে গ্যাং লিডার রতনসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছি। তবে আমাদের হাতে এখনো তাঁদের হস্তান্তর করা হয়নি। সেনাবাহিনী ও র্যাবের অভিযানের বাইরে পুলিশের সদস্যরা শনিবার রাতভর নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে শুক্রবারের ওই ঘটনার পর পুলিশের অভিযানে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
দীর্ঘদিন ধরেই কুমিল্লা নগরবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম ‘কিশোর গ্যাং’। অতীতে দেখা গেছে, কিশোর গ্যাং সক্রিয় হলেই কেবল অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া ধারাবাহিক অভিযান চালানো হয় না।
গত শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রানীর দিঘিরপাড়, তালপুকুরপাড় ও আদালতপাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তিনটি পক্ষ মহড়া দেয়। ২০১৫ সালে কুমিল্লা নগরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। নগরের আলোচিত কিশোর গ্যাং গ্রুপ হচ্ছে রতন, ইগল, র্যাক্স, এক্স, এলআরএন, সিবিকে, মডার্ন, রকস্টার, ডিস্কো বয়েজ, বসসহ কমপক্ষে ২০টি পক্ষ। এসব গ্যাং নিজেদের আধিপত্য দেখাতে প্রকাশ্যে সহিংসতায় জড়াচ্ছে। ২০১৭ সালের পর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের হাতে আট বছরে অন্তত ১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মাদক কারবার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভ টিজিংয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে এসব গ্যাং।
আরও পড়ুনকুমিল্লায় ‘কিশোর গ্যাং’: ‘অবস্থান জানান দিতে’ মহড়া, নাগরিকদের উদ্বেগ১৮ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনকুমিল্লায় ছুটির বিকেলে তিন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রের মহড়া, ককটেলের শব্দে আতঙ্ক২৫ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ৯ জনক নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।