নিষেধাজ্ঞা শেষে মেঘনায় ইলিশের খরা, বাজারও প্রায় ইলিশশূন্য
Published: 5th, May 2025 GMT
নিষেধাজ্ঞা শেষে গত বৃহস্পতিবার থেকে মেঘনা নদীতে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জাল ফেলে ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। মেঘনায় কার্যত দেখা দিয়েছে ইলিশের খরা। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোয়। মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মাছের বাজারগুলো চার দিন ধরে প্রায় ইলিশশূন্য। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তার ভাষ্য, পানির চাপ কম থাকায় জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর বাজারের মাছ বিক্রেতা বিমল দাস বলেন, চার দিন ধরে বাজারে ইলিশ উঠছে না। প্রতিদিন ক্রেতারা এসে ইলিশের খোঁজ নেন, কিনতেও চান। কিন্তু ইলিশের আমদানি নেই। ইলিশের পরিবর্তে অন্য মাছ বিক্রি করছেন।
মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল বাবুরবাজার এলাকার জেলে ফুল চান বর্মণ, আমিরাবাদ এলাকার রিপন বর্মণ, মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জয়ের স্বপ্ন নিয়ে অজানা এক সকালের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
তৃতীয় দিনের মতো চতুর্থ দিন শেষেও বলতে হচ্ছে একই কথা—চমকপ্রদ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা গল টেস্টে হতে পারে যেকোনো কিছুই। বাংলাদেশ জিততে পারে, শ্রীলঙ্কা জিততে পারে, আবার টেস্টটা শেষ পর্যন্ত ড্রও হয়ে যেতে পারে। তবে এখান থেকে বাংলাদেশের না জেতাটাই হবে অস্বাভাবিক।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ৪৯৫ রান থেকে শ্রীলঙ্কা ১০ রান পিছিয়ে (৪৮৫) থেকে অলআউট হওয়ার পরও আজ দুপুরে মনে হচ্ছিল গলে স্বাগতিকদেরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি। উইকেট থেকে স্পিনাররা সহায়তা পেতে শুরু করেছিলেন। এমন উইকেটে বাংলাদেশের জন্য ব্যাটিং করাটা প্রথম ইনিংসের মতো সহজ না-ও হতে পারে। কিন্তু চতুর্থ দিন শেষে সে অনুমান থেকে সরে এসে সম্ভাবনার পাল্লায় বাংলাদেশকেও জায়গা দিতে হচ্ছে ভালোভাবেই।
দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার চেয়ে এখনই এগিয়ে ১৮৭ রানে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আজ শেষ দিনে জয়ে চোখ রেখেই এগোতে চাইবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকে সে মানসিকতা নিয়েই খেলছেন ব্যাটসম্যানরা। দিন শেষ হওয়ার সময় ৫৬ রানে অপরাজিত নাজমুল আর ২২ রানে অপরাজিত প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে সে চেষ্টাই দেখা গেছে।
এর আগে তৃতীয় উইকেটে নাজমুলের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি গড়া ওপেনার সাদমান ইসলামেরও ছিল একই উদ্দেশ্য—শ্রীলঙ্কার সামনে দ্রুত বড় লক্ষ্য দাঁড় করানো। পেসার মিলান রত্নায়েকের হঠাৎ নিচু হয়ে যাওয়া বলে তিনি এলবিডব্লু না হয়ে গেলে দিন শেষ আরও ভালো অবস্থায় থাকতে পারত বাংলাদেশ।
আউট হওয়ার আগে এই ওপেনারের রান সাত বাউন্ডারিতে ১২৬ বলে ৭৬। সাদমানের খেলায় কিছুটা আক্রমণাত্মক ধরন মনে করিয়ে দিচ্ছিল গত বছর নভেম্বর–ডিসেম্বরে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০১ রানে হারানো টেস্টে তাঁর ইতিবাচক ব্যাটিংটাকে।
প্রথম ইনিংসে নিজেরা ১৬৪ (সাদমানেরই ছিল ৬৪) রানে অলআউট হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও ১৪৬ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেই টেস্ট হয়ে দাঁড়িয়েছিল মূলত এক ইনিংসের খেলা। দ্বিতীয় ইনিংসে মিডল অর্ডারে জাকের আলীর ৯১ রানের আগে শুরুতে ৮২ বলে ৪৬ রান করে ওপেনার সাদমানই গতি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ৫৯.৫ ওভারে করা ২৬৮ রানের ইনিংসটাকে।
আজ শেষ বেলায় উইকেট মাঝেমধ্যে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করলেও সেটা ব্যাটসম্যানদের অনেক বেশি সমস্যায় ফেলার মতো ছিল না। আর চাইলে যে এই উইকেটে ব্যাটিং করা যায়, সেটা তো সাদমান–নাজমুলই দেখিয়েছেন! দলের ২৪ রানে ওপেনার এনামুল হক ও ৬০ রানে মুমিনুল হকের উইকেট তুলে নেওয়ার পরও তাই সাদমান–নাজমুলের জমে যাওয়া জুটি ভাঙতে সময় লেগেছে শ্রীলঙ্কান বোলারদের।
কাল তৃতীয় দিন শেষে গল টেস্ট ঠিক এ রকমই রোমাঞ্চকর পরিস্থিতির সম্ভাবনা দেখাচ্ছিল। অর্থাৎ সম্ভাব্য ফলাফলে বাংলাদেশের জয়, হার অথবা ড্র—সবই ছিল।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪৯৫ করার পর শ্রীলঙ্কা কালই ৪ উকেটে ৩৬৮ রান করে ফেলে। টেস্টের বাকি সময়ে স্বাগতিকেরা কত দূর যেতে পারে, কে কত রানের লিড নেয় এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ কী করে, এসবের ওপরই নির্ভর করছিল ভবিষ্যৎ। সঙ্গে ছিল আজকের বৃষ্টির শঙ্কাও। ভাগ্য ভালো, দুপুরের দিকে কিছু সময়ের জন্য গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের আকাশ কালো করা মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরার আগেই ভেসে চলে গেছে আরেক দিকে।
তবে সকাল থেকে শ্রীলঙ্কার উইকেট একটার পর একটা ঝরেই গেছে। কাল পাতুম নিশাঙ্কার দুই শ রানের আশা ১৮৭–তে মিইয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার হয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছিলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। দুই ব্যাটসম্যানই বড় হুমকি ছিলেন বাংলাদেশের জন্য।
কিন্তু আজ সকালে দিনের তৃতীয় ওভারে অফ স্পিনার নাঈম হাসান ফিরিয়ে দেন ধনাঞ্জয়াকে। লেগ স্টাম্পের ওপর পড়া বলটা নিরাপদেই বেরিয়ে যেত যদি না ধনাঞ্জয়া তাতে ব্যাট লাগাতেন আর বলটা জমা পড়ত উইকেটকিপার লিটন দাসের গ্লাভসে।
টেস্টে চতুর্থবারের মতো পাঁচ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ৪৯৫–এর আগে থামাতে নাঈমেরই বড় অবদান। কাল তিনি নিয়েছিলেন দিনেশ চান্দিমালের উইকেট। ধনাঞ্জয়ার পর আজ দিনের দ্বিতীয় সেশনে আউট করেন শ্রীলঙ্কার আরও তিন ব্যাটসম্যান কামিন্দু মেন্ডিস, থারিন্দু রত্নায়েকে আর আসিতা ফার্নান্দোকে। এর মধ্যে মেন্ডিস আর থারিন্দুকে ফিরিয়েছেন এক ওভারেই (১২৮তম)। সপ্তম উইকেটে ৮৪ রানের জুটি হয়েছে শ্রীলঙ্কার এই দুই ব্যাটসম্যানের। আউট হওয়ার আগে মেন্ডিস করেছেন ৮৭ ও রত্নায়েকে ৩৯।
দিনের প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে ৯৭ রান যোগ করা শ্রীলঙ্কার ইনিংসটা লাঞ্চের পর যেন হঠাৎই শেষ হয়ে গেল! ১২৪ ওভার শেষে তারা লাঞ্চ করতে গিয়েছিল ৬ উইকেটে ৪৬৫ রান নিয়ে। লাঞ্চের পর বাকি ৪টি উইকেটই পড়ে যায় মাত্র ৭.২ ওভারে। এর মধ্যে ৪৭০ থেকে ৪৭১–এ যেতে যেতেই মাত্র ১০ বলের ব্যবধানে পড়েছে ৩ উইকেট।
সকালে খেলা শুরুর আগে শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রাসেল আর্নল্ডের অনুমান ছিল, উইকেটে যেহেতু ফাটল স্পষ্ট হচ্ছে, স্পিনাররা সহায়তা পেতে শুরু করবেন। সেই মৃদু ফাটল থেকে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম সহায়তা পেলেও সেটি খুব বেশি ছিল না। নাঈম উইকেট নিয়েছেন নিজের উচ্চতা কাজে লাগিয়ে উইকেট থেকে বাউন্স আদায় করে।
শেষ দিকে লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের বাউন্সারে ভয় দেখিয়েছেন পেসার হাসান মাহমুদও। ফিল্ডিংয়ে আলাদা করে বলতে হয় উইকেটের পেছনে লিটনের নেওয়া কুশল মেন্ডিসের দুর্দান্ত ক্যাচটির কথা।
সঙ্গে শেষ বেলায় সাদমান–নাজমুল–মুশফিকদের বড় কিছুতে চোখ রেখে জয়ের ছবি আঁকার চেষ্টা চতুর্থ দিনটাকে করে দিচ্ছে বাংলাদেশের। যদিও পঞ্চম দিন আসলে কী রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করছে, সেটা এখনই বলার উপায় নেই। এই টেস্টে হতে পারে যেকোনো কিছুই।
সংক্ষিপ্ত স্কোরবাংলাদেশ: ৪৯৫ অলআউট ও ৫৭ ওভারে ১৭৭/৩ (সাদমান ৭৬, নাজমুল ৫৬*, মুশফিক ২২*; থারিন্দু ১/১৩, জয়াসুরিয়া ১/৪৮, থারিন্দু ১/৫১)।
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৩১.২ ওভারে ৪৮৫ অলআউট (নিশাঙ্কা ১৮৭, কামিন্দু ৮৭, চান্ডিমাল ৫৪; নাঈম ৫/১২১)।
* ৪র্থ দিন শেষে বাংলাদেশ ১৮৭ রানে এগিয়ে।