‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে বটগাছ কেটে ফেলার পর মালিকের গা ঢাকা
Published: 6th, May 2025 GMT
মাদারীপুরে শতবর্ষী বটগাছ ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে কেটে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা স্থানীয়দের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরার কান্দি গ্রামের কুমার নদের পাশে স্থানীয় হান্নান হাওলাদার ও সাত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন একটি বাগানে শতবর্ষী একটি বটগাছ ছিল। গত কয়েক বছর গাছটিকে ঘিরে স্থানীয়রা নানা কর্মকান্ড করে আসছিলেন। স্থানীয় মুসলাম ও হিন্দু উভয় ধর্মের মানুষ মনের বাসনা পূরণ, রোগবালাই থেকে মুক্তিসহ নানা বিষয়ে মানত করে বটগাছের গোড়ায় মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালাতেন। পাশাপাশি নতুন গামছা, কাপড়, মিষ্টিসহ জিনিসপত্র রেখে যেতেন।
সম্প্রতি বৈশাখ উপলক্ষে বটগাছের নিচে মেলা ও বাউল গান আয়োজনের উদ্যোগ নেন স্থানীয়রা। এতে এক পক্ষ বাধা দিলে আয়োজন থেকে পিছিয়ে আসেন তারা। তবে মানতের বিষয়টি চলতে থাকে। পরে স্থানীয় কয়েকজন আলেম ও জনতা মিলে সোমবার (৫ মে) সকালে গাছটি কাটতে শুরু করেন। বর্তমানে গাছটির গোড়ার সামান্য অংশ কাটা বাকী আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শারমিন বেগম বলেন, ‘‘বিয়ের পর প্রায় ৩০ বছর ধরে এই গাছটি দেখছি। কিন্তু সামান্য অজুহাতে গাছটি কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। গাছ না কেটে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’’
স্থানীয় মো.
মাদারীপুর বন বিভাগের জেলা বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমরা শুনেছি। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবে পরবর্তী কাজ করা হবে।’’
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘‘গাছটি এখনও জীবিত আছে। আমরা গাছটি বাঁচিয়ে রাখার পদক্ষেপ নেবো। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনার পর থেকে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং গাছের মালিক কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না।’’
একাধিকবার ফোন করেও গাছের মালিক হান্নান হাওলাদার ও সাত্তার হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বেলাল//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত বটগ ছ
এছাড়াও পড়ুন:
‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে কেটে ফেলা হলো শতবর্ষী বটগাছটি
গোড়ায় মোমবাতি জ্বালিয়ে মানত, লাল কাপড় বাধাকে ‘শিরক ও গুনাহর কাজ’ আখ্যা দিয়ে মাদারীপুরে শতবর্ষী একটি বটগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে সদর উপজেলা আলম মীরার কান্দি এলাকায় শতবর্ষী বটগাছটি কেটে ফেলেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে।
এ দিকে বটগাছটি কেটে ফেলার বিষয়ে তদন্ত শুরু কাজ করেছে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, শনিবার দুপুরে সদর উপজেলা আলম মীরার কান্দি এলাকায় শতবর্ষী একটি বটগাছ কেটে ফেলেন স্থানীয়রা। মূলত শতবর্ষী বটগাছটির গোঁড়ায় স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের মানুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে মানত করতো, মনোবাসনা পূরণে লাল কাপড় বেঁধে রাখত। যা ইসলামের দৃষ্টিতে শিরক আখ্যা দিয়ে তা কেটে ফেলা হয়েছে।
গাছটি কাটার সমালোচনা করে মাইনুল ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘শিরক করল কারা আর ক্ষতিগ্রস্ত হলো কে? গোটা জাতি এতটা অশিক্ষিত কি করে হয় আমার মাথায় ঢোকে না। বটগাছের অপরাধ কি?’
সোহেল সিকদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদে অনেকে এই গাছের ছায়ায় বসে থাকত। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি শত শত পাখির অভয়ারণ্য এ গাছ। এভাবে গাছটি কেটে ফেলা ঠিক না।’
তবে গাছ কাটার পক্ষ নিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘এই বটগাছের গোঁড়ায় মিষ্টি দেয়, সিন্নি দেয়, লাল কাপড় বাধা হয়। এই গাছকে কে মনে করে সৃষ্টিকর্তা, দেবতা, যা শিরক ও গুনাহর কাজ। এই গুনাহর কাজ যাতে না হয় সেজন্য স্থানীয়রা গাছটি কেটেছেন। এত বড় গাছ যে পরিমাণে অক্সিজেন দেয় তা আমাদের ও পরিবেশের জন্য বড্ড উপকারী তা আমরা জানি। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করেছি, এখানে তিনটি গাছ রোপণ করব। আমরা জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি গাছটি কাটার বিষয়ে। তিনি আমাদের বলেছেন, যেহেতু গাছটির জন্য গুনাহ হচ্ছে, তাই কেটে ফেলেন ও আমাদের মসজিদে ১৫০০ টাকা দিয়েন।’
মাদারীপুর বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গির আলম খান বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে আগে যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাছটি কাটার পরিকল্পনা হয়েছিল, তা অস্বীকার করছেন গাছমালিক। জমির মালিক সত্তর হাওলাদার বলেছেন, গাছ তিনি ১৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আমার ধারণা, ঘটনা আগেরটা ঠিক, তবে জমির মালিককে ম্যানেজ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি এবং তদন্ত করা হচ্ছে।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি জেনে সেখানে লোক পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’