আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন চয়নিকা চৌধুরী
Published: 8th, May 2025 GMT
চেক ডিজঅনার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির দুই দিন পর আদালতে আত্মসমর্পণ করায় জামিন পেয়েছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (৮ মে) ঢাকার ৭ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মো. বুলবুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে, গত ৬ মে মামলার ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় চয়নিকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সালাম হিমেল এ তথ্য জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন চয়নিকা চৌধুরী। তবে পূর্বের ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাকে তিরস্কার করেন বিচারক। পরে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
২০১৩ সালের ১৪ মে এই মামলা করেন প্রযোজক রাশেদুল ইসলাম রিয়াজ। এ মামলার পর ২০১৪ সালে ২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন চয়নিকা চৌধুরী। ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৭ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, চয়নিকা চৌধুরীর মাধ্যমে প্রযোজক রাশেদুল ইসলাম রিয়াজ 'জীবন সুন্দর হোক' নাটক নির্মাণের প্রস্তুতি নেন। এজন্য ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট তাদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চয়নিকাকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা দেন বাদী। একইসঙ্গে ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর চয়নিকা বাদী রিয়াজকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন।
অভিযোগে বলা হয়, আসামি চুক্তিবদ্ধ হয়েও নাটক নির্মাণ করেননি। যোগাযোগ করলে তিনি নাটক নির্মাণ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তখন টাকা ফেরত চাইলে তিনি ২০১৩ সালের জানুয়ারি চেক নগদায়ন করতে অনুরোধ করেন। পরে একাধিকবার টাকা নগদায়ন করতে গেলে চেক ডিজঅনার হয়। টাকা ফেরত চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হলেও তিনি টাকা ফেরত দেননি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চয়ন ক চ ধ র ন কর ন চয়ন ক
এছাড়াও পড়ুন:
টাকা আদায়ে আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তার সঙ্গে এক নারীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। এ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, তার কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (২০ জুন) সকালে প্রবাসী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জাওয়াদ নির্ঝর ফেসবুক ও টেলিগ্রাম চ্যানেলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও ও চারটি ছবি প্রকাশ করেন। এর পরপরই শরীয়তপুরসহ দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার (২১ জুন) বিকেলে রাইজিংবিডি ডটকমের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়।
মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেছেন, “সে (ভিডিও’র সেই নারী) ছিল আমার আত্মীয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই আমাকে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। ব্ল্যাকমেইলের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। আমি সেই দাবি পূরণ করতে না পারায় এবং আগ্রহ না দেখানোয় সে আমার ব্যক্তিগত আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করে, যাতে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করা যায়।”
“যেসব ছবি ছড়িয়েছে, সেগুলো আমার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগের, প্রায় ১১ মাস আগের। ডিসি হওয়ার পর থেকেই সে চাপ বাড়াতে থাকে। তার চাহিদা অনুযায়ী আমি সময়-সুযোগমতো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা পাঠাই। সে আমাকে বাধ্য করেছে। পরে জানতে পেরেছি, এ ধরনের কাজ সে আরো অনেকের সঙ্গে করেছে। আমি এখন আমার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আমি জেলা প্রশাসকের সহায়তাকারী আইনজীবী হিসেবে জানাতে চাই, যখন তিনি (ডিসি) ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছিলেন, তখন ওই নারী আমার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, জেলা প্রশাসক তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরে আর বিয়ে করেননি। এ বিষয়ে তিনি আমার সহযোগিতা চান। এর পর আমি উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলি এবং দুজনেই আমাকে মধ্যস্থতার অনুরোধ করেন।”
“আমি তাদের পরামর্শ দিই বিষয়টি সমাধানের জন্য বিয়ে করতে। জেলা প্রশাসক রাজি হলেও ওই নারী সম্মতি দেননি। তিনি তখন অভিযোগ তোলেন, বিয়ে করলে জেলা প্রশাসক তাকে মারধর করবেন, তাই তিনি বিয়ে করবেন না। এর পরেই তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। প্রথমে দাবি করেন ৫ কোটি টাকা, নইলে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে দিতে হবে। তা না করলে তাদের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন।”
ওই আইনজীবী বলেন, “চাপের মুখে জেলা প্রশাসক ধার-দেনা করে মাসে ১ লাখ টাকা করে ব্যাংকের মাধ্যমে দিতেন ওই নারীকে। কিন্তু, যখন দেখেন, ওই নারী ৫ কোটি টাকার দাবি করছেন, তখন আর অর্থ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জেলা প্রশাসক। এর পরেই ওই নারী ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।”
তিনি আরো বলেন, “আইনজীবী হিসেবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কারো ব্যক্তিগত বা গোপন ভিডিও অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, যা পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় পড়ে। এ বিষয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওতে থাকা ওই নারী টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসিন্দা। এখন তিনি ঢাকার মিরপুরে বাস করেন। পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়েছিল। তার দুই সন্তান আছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর স্বামীর ভগ্নিপতি। আত্মীয়তার সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে ওই নারীর মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাত ৯টার দিকে একটি ভাড়া করা গাড়িতে করে শরীয়তপুর ছেড়ে চলে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসাইন বলেছেন, “জেলা প্রশাসক কর্মস্থলে নেই। তিনি বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে ছুটির আবেদন করেছেন বলে জেনেছি। তার অবর্তমানে জেলা প্রশাসক হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা লিখিতভাবে কাউকে বলে যাননি। তিনি কবে ফিরবেন, তা আমরা বলতে পারছি না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন। ২৭তম বিসিএস ক্যাডারে এই কর্মকর্তা আগে প্রতিবন্ধী ট্রাস্টের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ঢাকা/আকাশ/রফিক